Gordon Conway: প্রয়াত “দ্বৈত সবুজ বিপ্লব” এর জনক

Gordon Conway । ছবিটি Prof. Gordon Conway এর X-একাউন্ট থেকে গৃহীত

উত্তরাপথঃ অধ্যাপক এমএস স্বামীনাথনকে যদি ভারতে সবুজ বিপ্লবের জনক বলা হয় তেমন Gordon Conway এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি বিশ্বব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী কৃষি উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তার উন্নতি এবং দারিদ্র্য হ্রাস করার জন্য কাজ করেছেন। তিনি “দ্বৈত সবুজ বিপ্লব” এর জনক। কৃষিতে উন্নয়নের জন্য কৃষকদের কাছ থেকে শুনে এবং শেখার মাধ্যমে তিনি এমন এক কাঠামো তৈরি করেছিলেন যা পরবর্তীকালে অনেক উন্নয়ন সংস্থা এই কাঠামোটি গ্রহণ করেছিল।বিশ্ববরেণ্য এই কৃষি বিজ্ঞানী সম্প্রতি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে জন্মগ্রহণকারী গর্ডন ছোটবেলা থেকেই প্রাকৃতিক জগতের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। কিভাবে ক্ষতিকারক রাসায়নিক ব্যবহার না করে কীটপতঙ্গের সমস্যার সমাধান করা যায় এই ব্যাপারে তিনি আগ্রহী ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্যাঙ্গোরের ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ নর্থ ওয়েলসে বাস্তুবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন এবং যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ত্রিনিদাদে (বর্তমানে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো) ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিজ্ঞান এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় কৃষিতে ডিপ্লোমা অর্জন করেন।  

Gordon Conway দীর্ঘস্থায়ী কৃষি উন্নয়নে একজন নেতা হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু হয়েছিল একাডেমিক গবেষণা মধ্য দিয়ে। তিনি তার পিএইচডি থিসিস সিস্টেম ইকোলজিতে কীটপতঙ্গের প্রজনন এবং কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনার প্রভাব বোঝার উপর ভিত্তি করেন।পরবর্তীকালে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন এবং সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে তিনি বিশিষ্ট একাডেমিক পদে অধিষ্ঠিত হন। তিনি তার প্রভাবশালী বই দ্য ডাবল গ্রিন রেভোলিউশন (১৯৯৭) প্রস্তাব করেছিল যে পরিবেশের ক্ষতি না করেই উৎপাদনশীলতা উন্নত করতে এবং কৃষকদের জীবিকাকে স্থায়ী করার জন্য নতুন এবং ঐতিহ্যগত প্রযুক্তির সমন্বয় করা সম্ভব।বইটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় কিছু অংশে জাভা এবং পশ্চিম কেনিয়া সহ ছোট আকারের খামারের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যেখানে কৃষকরা অল্প জায়গায় বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে উচ্চ ফলন অর্জন করেছে।

এক সময় উত্তর বোর্নিওর কোকো খামারগুলিতে, পোকামাকড় ব্যাপকভাবে ক্ষয়ের কারণ হয়ে উঠছিল। পরজীবী ওয়েপ কীটপতঙ্গের প্রাকৃতিক শত্রু এটি ছেড়ে দেওয়ার পর,কোকো গাছগুলি উন্নতি লাভ করে এবং কীটনাশকের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে। গর্ডন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, ডেভিস-এ তার গবেষণায় এই অভিজ্ঞতা ব্যবহার করেছিলেনন।এরপর ১৯৭৬ সালে, ইম্পেরিয়াল কনওয়ের পরিচালক হিসাবে পরিবেশ প্রযুক্তি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। পরের বছর,পরিবেশগত প্রযুক্তিতে মাল্টিডিসিপ্লিনারি মাস্টার্স কোর্স চালু করে, অনেক স্নাতক তৈরি করেন যারা পরিবেশগত বিষয়ে আগ্রহী ছিল। ১৯৮৬ সালে, তিনি লন্ডনের একটি স্বাধীন গবেষণা ও নীতি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (IIED) এ দীর্ঘমেয়াদী কৃষি প্রোগ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন।১৯৮৮ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি হিসাবে গ্রামীণ কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নের বিভিন্ন কাজকর্মের সাথে যুক্ত ছিলেন।

এরপর ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত Gordon Conway রকফেলার ফাউন্ডেশনের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। সেই সময় তার নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্ডার অগ্রভাগে কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তাকে পুনঃস্থাপন করতে উদ্যোগ নিয়েছিল। তিনি এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য হ্রাস এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বের জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

কৃষিতে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে Gordon Conway এর অন্যতম প্রভাবশালী অবদান হল “দ্বৈত সবুজ বিপ্লব” ধারণা। তার এই অবদান শুধুমাত্র কৃষিতে উদ্ভাবনের পক্ষে সমর্থন করে যা কেবল খাদ্য উৎপাদনই বাড়ায় না বরং পরিবেশও রক্ষা করে এবং সেইসাথে দারিদ্র্যও হ্রাস করে। ঐতিহ্যগত সবুজ বিপ্লব, যা প্রাথমিকভাবে ফসলের ফলন বৃদ্ধির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল, কখনও কখনও নিবিড় কৃষির দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশগত এবং সামাজিক পরিণতিগুলিকে উপেক্ষা করে। কনওয়ের দ্বিগুণ সবুজ বিপ্লব কৃষি উন্নয়নের জন্য পরিবেশগতভাবে দীর্ঘমেয়াদী এবং সামাজিকভাবে ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতির গুরুত্বের ওপর জোর দেয়। তার এই দর্শন বিশ্বব্যাপী  খাদ্য ব্যবস্থার প্রচারে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমরা খুব কম মানুষ এই মহান কৃষি বিজ্ঞানী সম্পর্কে জানি বা তার সঠিক মূল্যায়ন করতে পেরেছি।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


কার্বন নিঃসরণ দ্রুত শেষ করার জন্য G7 ঐক্যমত

উত্তরাপথ: বিশ্বের সাতটি ধনী দেশের শক্তি ও পরিবেশ মন্ত্রীরা সম্প্রতি  জ্বালানি এবং পরিবেশগত ইস্যুতে উত্তর জাপানের শহর সাপোরোতে বৈঠক করেন।  G-7 বৈঠকে জড়ো হওয়া বিভিন্ন দেশের আধিকারিকরা তাদের প্রতিশ্রুতির রূপরেখা দিয়ে একটি কমিউনিক জারি করেছে। বৈঠকে বর্তমান সঞ্চিত জ্বালানি সংকট এবং ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সমান গুরুত্ব দিয়ে, আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো গ্রিনহাউস গ্যাস (GHG) নির্গমনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সমস্ত নেতারা দক্ষ, সাশ্রয়ী মূল্যের এবং দূষণ মুক্ত শক্তির উৎস সন্ধানের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর আগেও .....বিস্তারিত পড়ুন

কতো অজানা রে

মৈত্রেয়ী চৌধুরী: ইতিহাস বিষয়ে আলোচনা করতে গেলেই আমাদের মনে যে সব সৌধের প্রসঙ্গ মনে আসে তারমধ্যে পার্লামেন্ট ভবন একটা অবশ্য দ্রষ্টব্য স্থান। বহু পর্যটক এই ভবন দেখতে যান. কিন্তু জানেন কি, এই পার্লামেন্ট ভবনের ডিজাইন কে বানিয়েছিলেন ? 10 জনকে জিজ্ঞেস করলে 9 জনই বলতে পারবেন না। যাঁরা খুব ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন অথবা গুগুল সার্চ করে থাকেন, তাঁরা হয়তো উত্তরটা দিতে পারবেন। পার্লামেন্ট ভবনের ডিজাইন বানিয়েছিলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ স্থপতি এডুইন লুটিয়েন। তাঁর সহকারী ছিলেন আরেক ব্রিটিশ স্থপতি হার্বার্ট বেকার। 1927 খ্রিস্টাব্দে এই ভবনটির নির্মাণ সম্পূর্ণ হয় এবং ব্রিটিশ .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রয়াত "কালবেলা"-র স্রষ্টা সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার

উত্তরাপথ: সাহিত্য একাডেমি পুরুষ্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার কলকাতার এক বেসরকারী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ফুসফুস ও শ্বাসনালীর সংক্রামণের কারনে তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ১৯৪২ সালে উত্তরবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্ম এই বিখ্যাত লেখকের।ষাটের দশকের গোড়ায় তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। ভর্তি হয়েছিলেন স্কটিশ চার্চ কলেজের বাংলা (সাম্মানিক) স্নাতক বিভাগে৷ এর পর স্নাতকোত্তর  সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সমরেশ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য .....বিস্তারিত পড়ুন

কৃষ্ণগহ্বরের "ছায়া" ও "ছবি"

ড. সায়ন বসু: ১৭৮৩ সালে ভূতত্ত্ববিদ জন মিচেল (John Michell) ‘ডার্ক স্টার’ (dark stars) শিরোনামে একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেন। তার গবেষণা পত্রের বিষয়বস্তু ছিল "বিপুল পরিমাণ ভর বিশিষ্ট কোন বস্তু যার মহাকর্ষের প্রভাবে আলোক তরঙ্গ পর্যন্ত পালাতে পারে না"। এখান থেকেই মূলত কৃষ্ণগহ্বরের (Black Hole) ধারণা আসে এবং এটি নিয়ে গবেষনা ও অনুসন্ধান শুরু হয়। পরবর্তিতে অবশ্য এটি বিজ্ঞান মহলে একটি অযৌক্তিক তত্ত্ব হিসেবে বেশ অবহেলার স্বীকার হয়। আলোর মত কোন কিছু বেরিয়ে আসতে পারবে না এমন একটি তত্ত্ব বিজ্ঞানীদের কাছে বেশ অযৌক্তিক মনে হয়েছিল। তাই ধীরে ধীরে থেমে যায় কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষনা। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top