

বর্তমানে কর্পোরেট জগৎ এবং ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে সম্পর্ক একটি জটিল এবং বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থায়নে কর্পোরেট হাউসগুলোর সম্পৃক্ততা গত দুই দশক ধরে বেড়েই চলেছে। অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একটি রিপোর্ট অনুসারে ২০০৪-০৫ আর্থিক বছরে (FY) , কর্পোরেট গ্রুপগুলির অনুদানের পরিমান ছিল ৬২১.৪ মিলিয়ন; ২০০৯-১০ অর্থবছরে অনুদান প্রায় ১.৬বিলিয়ন এবং তারপর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এই পরিমাণ ৫.৭ বিলিয়নে পৌঁছেছে এবং পরবর্তী দশ বছরে ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কর্পোরেট এর অর্থের অনুদানের পরিমাণ প্রায় দশগুণ বেড়েছে।
কর্পোরেটগুলির ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার সবচেয়ে প্রত্যক্ষ উপায়গুলির মধ্যে একটি হল রাজনৈতিক দলগুলিতে আর্থিক অবদান দেওয়া। ভারতে নির্বাচন ব্যয়বহুল বিষয়, রাজনৈতিক দলগুলি তাদের নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে বিশাল অর্থের প্রয়োজন হয় তার জন্য কর্পোরেট অনুদানের উপর নির্ভর করে। অন্যদিকে কর্পোরেটগুলি এই আর্থিক সহায়তা করার বিনিময়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে তাদের অনুকূলে নীতি, ট্যাক্স কাঠামো সহ অন্যান্য ছাড়ের প্রতিদান দিতে বাধ্য করতে পারে।
তবে রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান অনুদান যা অনেক বিতর্ক এবং যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়। ভারতের মতো একটি দ্রুত বিকশিত দেশে, যেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা নিবিড় ভাবে যুক্ত,সেখানে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং নীতিগুলি গঠনে কর্পোরেটগুলির ভূমিকাকে উপেক্ষা করা যায় না বরং দিনে দিনে রাজনীতি এবং কর্পোরেট জগতের সম্পর্ক আরও নিবিড় হচ্ছে।২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে, ভারত সরকার ফিনান্স বিল ২০১৭ ঘোষণা করেছে যেখানে রাজনৈতিক অর্থায়নের একটি নতুন পদ্ধতি চালু করেছে নির্বাচনী বন্ড স্কিম নামে (একটি প্রতিশ্রুতি নোটের মতো) যা দেশের যেকোনো ব্যাঙ্ক থেকে কেনা যাবে।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে , যে কোনও ব্যক্তি এবং দেশীয় কোম্পানি এই বন্ডগুলিকে আর্থিক মূল্যে কিনতে পারবে৷ বন্ডগুলি যথাক্রমে ১,০০০, টাকা ১০,০০০ টাকা, রুপি ১০০,০০০, টাকা ১ মিলিয়ন এবং ১০মিলিয়ন টাকার । তারপরে ক্রেতারা যে কোনও রাজনৈতিক দলকে সেই বন্ডগুলি দান করতে পারবে এবং দলগুলিকে ১৫ দিনের মধ্যে সেগুলিকে ভাঙিয়ে নিতে হবে। বন্ড দানকারী সংস্থার নাম প্রকাশ করার জন্য সুবিধাভোগী দায়বদ্ধ থাকবেনা।এছাড়াও রাজনীতিবিদদের নির্বাচনে জয়লাভ করতে এবং তাদের ক্ষমতা বজায় রাখতে আর্থিক সহায়তা, দক্ষতা এবং প্রভাব প্রয়োজন। এই পারস্পরিক নির্ভরতা কর্পোরেট এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে একটি আদান-প্রদানের সম্পর্ক তৈরি করতে পারে।
ভারতের কর্পোরেটগুলি প্রায়শই ক্ষমতার করিডোরে তাদের স্বার্থের পক্ষে ওকালতি করার জন্য লবিংয়ে জড়িত থাকে। লবিং প্রচেষ্টা প্রকাশ্য বা গোপন হতে পারে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি সরকারী নীতি, প্রবিধান, এবং সিদ্ধান্তগুলিকে প্রভাবিত করতে চায় যা তাদের শিল্পকে প্রভাবিত করে। এই প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে, বিশেষত টেলিযোগাযোগ, শক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে।
উচ্চতর জনসচেতনতা এবং তথ্যপ্রযুক্তির যুগে, ভারতের কর্পোরেটগুলি তাদের পাবলিক ইমেজ ও ব্রান্ডের গুরুত্ব স্বীকার করে নিজেদের যত সম্ভব স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চেষ্টা করে।তাই তারা কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (CSR)মেনে বিভিন্ন সামাজিক ক্রিয়াকলাপগুলিতে জড়িত হয়ে তাদের ব্র্যান্ড এবং খ্যাতি বাড়ানোর চেষ্টা করে এবং অনেক ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ডের সাথে যুক্ত হয়।
তবে ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কর্পোরেট জগতের প্রভাব অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতির জন্ম দিতে পারে, রাজনীতিবিদরা এমন অনেক সিদ্ধান্ত নেন যা প্রাথমিকভাবে জনস্বার্থের পরিবর্তে কর্পোরেট সেক্টরের উপকার করে এতে রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি নাগরিকদের আস্থা নষ্ট হতে পারে।অন্যদিকে ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে বৃহত্তর কর্পোরেটগুলি মতো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার মত এত সম্পদ থাকে না ,যার ফলে ছোট বা মাঝারি ব্যবসায়ীরা নিজেদের অনুকূলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত করতে পারে না, ফলে এক অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয় যা তাদের ব্যবসাকে প্রভাবিত করতে পারে।
তবে একথা সত্য আধুনিক ভারত গঠনে দেশের বড় বড় কর্পোরেট সেক্টরগুলি সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং এর উদ্দেশ্যকে দেশে কখনোই সন্দেহের চোখে দেখা হয়নি। এই ধারা আরও অব্যাহত রাখার জন্য আমাদের রাজনৈতিক কাঠামোতে কোনও নির্দিষ্ট শিল্প সংস্থার প্রতি পক্ষপাত মূলক আচরণ এড়িয়ে চলতে হবে।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সম্ভাবনা খুব কম।কেন্দ্র বা রাজ্যে যে দলই ক্ষমতায় আসুক পরিস্থিতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুব কম।তাই সুপ্রীম কোর্ট সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা স্থল ।
আরও পড়ুন
World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়
উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে। সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি
উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন
Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ
উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন