

ডঃ জীবনকুমার সরকারঃ মালদা স্টেশন থেকে রাত দেড়টার ব্রহ্মপুত্র মেইল ধরেছে বিনয় আর তাপস। যাচ্ছে গুয়াহাটি। তারপর ওখান থেকে রাতের বাস ধরে পরের দিন সকালে গিয়ে নামবে শিলচর। ওখানে গিয়ে দু’জনে আসাম কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। ওটা শিলচর শহর থেকে দূরে। আর শিলচর শহর তো এগারো শহিদের তীর্থভূমি। আসামের বরাক উপত্যকার রাজধানী বলা যায় শিলচরকে। মাতৃভাষার অধিকার আদায় করতে গিয়ে এই শহরে পুলিশের গুলিতে প্রাণ যায় এগারো জন বাঙালির। এই রক্তাক্ত ইতিহাসের কথা অনেক বাঙালিই জানে না। কিন্তু এসব নিয়ে আমাদের দেশের বাঙালিরা চিন্তিত নন। বিনয় এসব খবর আগেই রাখতো।
তেইশ বছর আগের সব ঘটনা মনে রেখেছে বিনয়। একটি অপূরণীয় স্বপ্ন বিনয়ের স্মৃতি থেকে কিছুই মুছে দিতে পারেনি। সেই স্বপ্ন আজও বিনয়কে তাড়া করে। মাঝে মাঝে রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। কাজে অস্বস্তি দেয়।
ট্রেনে বসে কত কী ভাবছে বিনয়! তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিটা তার খুব দরকার। উচ্চ শিক্ষা তার বংশগত। সে মনে মনে আরও ভাবছে মনের মতো একটি বান্ধবী জুটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে তাকে নিয়ে বাড়ি ফেরা। এই স্বপ্ন তাকে বিভোর করে রাখে।
রাতের ঘুম শেষ হলে উঠে বসে বিনয়। ট্রেনের জানালার ধারে বসে পড়ে। দেখতে পায়, ট্রেনটি ধীরে ধীরে পাহাড়ের কোল ঘেষে গুয়াহাটি স্টেশনে ঢুকছে। পাহাড়ের অপূর্ব দৃশ্য! এর আগে কখনও এভাবে পাহাড় দেখেনি বিনয়। ফলে অভিভূত হয়ে যায় সে। এ কোন মায়ার জগৎ! পাহাড়ের কোলে দাঁড়িয়ে থাকা গাছপালা যেন বিনয়ের স্বপ্নকে আরও নাগালের মধ্যে এনে দিতে চায়।
ট্রেন গুয়াহাটি পৌঁছানোর পর তারা দু’জনে চলে যায় বাসস্ট্যান্ডে। ক্যাপিটাল ট্রাভেলসের কাউন্টারে গিয়ে অগ্রিম টিকিট কেটে বিশ্রাম নিতে থাকে আর স্বপ্নের বান্ধবীর কথা ভাবে বিনয়। দুপুরে স্নান খাওয়া-দাওয়া সেরে বিনয় আর তাপস সোজা চলে যায় কামাখ্যা মন্দির। মন্দির-মসজিদ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই বিনয়ের। সে তো কঠোর নাস্তিক। স্কুল জীবন থেকেই সে এমনই। বাবার হাতে এই চিন্তার হাতেখড়ি। একমাত্র পাহাড়ের লোভে সে যায়।
এই তার প্রথম যাওয়া। পাহাড়ের সঙ্গে এত কাছ থেকে মাখামাখি এর আগে হয়নি। তাই বিনয় এই পাহাড়ের রূপ চেটেপুটে খায়। বিশ্ববিদ্যায়ের কোনো বান্ধবীকে খোঁজার নেশা আরও বাড়িয়ে দেয় এই পাহাড়। পাহাড় নিয়ে সে কত কথা শুনেছে। সেই পাহাড় এত কাছে, সে ভাবতেই পারছে না। সারাদিন কাটিয়ে দেয় পাহাড়ে।
পাহাড় থেকে নেমে এসে সোজা ক্যাপিটাল ট্রাভেলসের কাউন্টারে। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বাসে উঠে বসে তারা। বাস শিলচরের দিকে রওনা দেয় বিকেল পাঁচটায়। পৌঁছায় পরের দিন সকাল ঠিক কটায়, তা আর স্পষ্ট মনে নেই বিনয়দের। সারারাত পাহাড় ঠেলে ঠেলে বাস পৌঁছায় শিলচর। বিনয় এক বোঝা স্বপ্ন আর তাপসকে সঙ্গে নিয়ে ওঠে একটি হোটেলে। তেইশ বছর আগের দেখা হোটেলটির নাম বিনয়ের আজ আর মনে নেই। তবে সেই হোটেল আর শিলচর শহর প্রথম বিনয়কে সিলেটি ভাষা চেনায় আসামে এত বাঙালি, এটাও তার জানা ছিলো না। হোটেলে এক রাত থেকে পরের দিন যায় এক বোঝা স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ ক্লাসে ভর্তির জন্য অ্যাডমিশন টেস্ট দিতে। অ্যাডমিশন টেস্টের নেশায় প্রথম দিন ভালো করে বিশ্ববিদ্যালয়টা দেখা হয়নি বিনয়ের। দু’দিন বাদে অ্যাডমিশন টেস্টের রেজাল্ট বেরোলে বিনয় দ্বিতীয় হয়। প্রথম হয় বিনিতা দাস। ক্লাস শুরু হলেই বিনয়রা সবাইকে চিনত শুরু করে এবং বিনিতাকেও। তখন জুলাই মাস। প্রথম সপ্তাহেই ভর্তি হয় তারা। বেশ গরম । বিনয়ের ধারণা ছিলো মালদার মতো এত গরম নিশ্চয়ই শিলচরে হবে না। কিন্তু দেখা যায়, গরমে দুই জায়গার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। প্রথম প্রথম ভালো না লাগলেও ধীরে ধীরে পড়াশুনার নেশায় এসব নিয়ে আর ভাবতে চায় না বিনয়। তার স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল ডিগ্রি আর একজন ভালো বান্ধবী। বিনিতাকে দেখলেই মনটা যেনো কেমন করে ওঠে বিনয়ের। যেনো মনে করে, সব পেয়ে গেছি। এই তো আমার স্বপ্ন। এই তো আমার আকাশ। এই তো আমার উজ্জ্বল রেজাল্টের প্রেরণা। বিনয় বিনিতাকে দেখিয়ে তাপসকে জিজ্ঞেস করে, ‘দেখতো, মালদার মাটিতে ওকে কেমন লাগবে?’
— এত তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিবি?
— না নিয়ে উপায় কী বল দেখি?
— এত তাড়া কীসের তোর?
— তাড়াটা আমার নয়, সময়ের।
— আমার হাতে ওতো সময় নেই। যখন শিলচর ছাড়বো, সঙ্গে বান্ধবীকে নিয়ে বাড়ি ফিরবো। এই স্বপ্ন পূরণ করতে গেলে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
— ও তো খুব গম্ভীর, তাই একটু বোঝা দরকার আগে।
— কিন্তু আমার তো মনে গুণী মেয়ে।
— তাহলে এগিয়ে যা।
— কীভাবে এগোবো?
— কথা বলা শুরু কর।
— ও তো কথাই তেমন বলতে চায় না।
— আমিও তো আর এর চেয়ে বেশি এগোতে পারছি না।
বিনিতা না এলে একদিনও ক্লাস করতে ভালো লাগে না বিনয়ের। বিশ্ববিদ্যালয় আর বিনিতা তার কাছে সমার্থক হয়ে ওঠে। তবু বিনয় বলতে পারছে না কেনো, ‘আমি তোকে ভালোবাসী’। ধীরে ধীরে দিনগুলো কেমন চলে যাচ্ছিলো। তবু যেনো বলার মতো সময় বিনয়ের হাতের মুঠোয় আসে না। প্রতিদিন সে ভাবে, আজ আইরংমারার নিবিড় সন্ধ্যায় বিনিতাকে বলে দেবে। সন্ধ্যা আসে। নিবিড়তাও আসে, কিন্তু মুখে বলাটা আর আসে না। এই না বলাটাই গ্রাস করে রাখলো বিনয়কে। আর বিনিতাও কোনোদিন জানতে পারলো না, তার জন্য কেউ এত প্রেম ঢেলে রেখে দিয়েছিলো আইরংমারার আকাশ-বাতাসে।
একটা স্বপ্ন যে কীভাবে মানুষকে বাঁচায়, আবার কীভাবে মারে তা সময় জানে। বিনিতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে যায় বিনয়। দিনের পর দিন সে অপেক্ষা করে বসে থাকে পাপলুর দোকানে। পাপলুর দোকানটা ঠিক আইরংমারা বাজারের সামনে মেইন রাস্তায়। ওখানে খাত, কলম, আর জেরক্স করতে সবাই আসে। সময় এমনই জল্লাদ, যে বিনিতাকে এটাও জানতে দেয়নি।
আজ বিনয় সব জানাতে চায়। বিনিতাকে অকপটে বলতে চায়,”আমি তোকে ভালো বাসতাম। আজও ভালোবাসী।” এভাবে বলার অনুমতি সময় তাকে আজ দিচ্ছে। অথচ একথা বললেও বিনিতাকে পাবার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। তবু সে বলতে চায়। সে মনে করে সত্যটা অন্তত বিনিতা জানুক।
হঠাৎ একদিন তাপসকে ফোন করে বিনয়।
— কী রে কেমন আছিস?
— ভালো আছি।
— একটা কথা তোকে বলতে চাই।
— বল।
— যে কথা বিনিতাকে সময় মতো বলতে পারিনি, তা আজ বলতে চাই।
— কোন কথাটা রে?
— ওই যে ‘ আমি তোকে ভালোবাসতাম বা আজও ভালোবাসী।’
— তাতে লাভ কী?
— লাভ-লোকসান জানি না। সত্যিটা ওর জানাতে ইচ্ছে করছে।
— এটা কি সত্যিটা জানানো, নাকি ওর ভেতরে একটা জ্বালা ধরিয়ে দিতে চাইছিস?
— কেনো?
— কারণ, তুই যেমন ওকে না পাবার জ্বালায় জ্বলছিস; ও তেমন আজ এই সত্যিটা জেনে আরও জ্বলবে।
— তাই?
— একটু ভাবতো, ও যদি তোর মতো গোপনে তোকে ভালোবেসে থাকে, তাহলে কি জ্বলবে না?
— ঠিকই তো। কী যন্ত্রণা বল তো!
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে শিলচর শহর, আইরংমারা,টিলা, ঝর্ণা, দরগাকোনার ক্যাম্পাস, , পোস্ট অফিস আর বিনিতাকে ফেলে সেদিন শিলচর থেকে রাতের বাসে উঠতে বিনয়ের যে কষ্ট হয়েছিলো, তা আর কে বোঝে? সেই কষ্ট আজও বুকের মধ্যে বাঁশি হয়ে বাজে। বিনয় কোনোদিন ভাবেনি পারেনি বিনিতাকে ছেড়ে একা একা মালদায় ফিরবে। জীবনটাকে নিজের মতো বাঁধার কোনো উপায় নেই মানুষের। সময় আর পরিস্থিতি সব বেঁধে দেয়। ভালোমন্দ সব ওই সুতোয় বাঁধা। মানুষ এই এক জায়গায় চরম পরাজিত।
আজ চাকরি, সংসার, লেখালেখি, নানারকম সাংস্কৃতিক কাজ এবং নিজের সম্পাদিত পত্রিকা নিয়ে বিনয় খুব ব্যস্ত থাকে সারাক্ষণ। তবু বিনিতাকে ভুলতে পারছে না। সেই তেইশ বছর আগের স্বপ্ন নিয়ে আজও বয়ে চলেছে এক অনিকেত জীবন। এই জীবনের শেষ কোথায়? এর বোধহয় শেষ বলে কিছু হয় না। কেবল শুরু থাকে।
একদিন ঘুমের মধ্যে একটা স্বপ্ন দেখে বিনয়। সে আসাম কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় যাচ্ছে। বাংলা নিয়ে ভর্তি হবে। আবার সেই ব্রহ্মপুত্র মেইল ধরেছে। সেই গুয়াহাটি, সেই কামাখ্যা পাহাড়, সেই ক্যাপিটাল ট্রাভেলস বাস। সেই পাহাড় আর ঝর্না। সব ডিঙিয়ে আবার শিলচর । আগের মতো সে কাঁপাচ্ছে বাংলা বিভাগ। গোটা বিশ্ববিদ্যালয়। হই হই করছে বিনয়ের ভারে সাংস্কৃতিক মহল। ছুটছে সবাই। সেও। এবারে বিনিতাকে পেয়েই বলে দিয়েছে, “আই লাভ ইউ”।
কী মধুর স্বপ্ন! বিনিতাকে নিয়ে বসে থাকে ক্যান্টিনে, কখনও টিলার ওপর, কখনও বাংলা বিভাগের খোলা বারান্দায়। আর মাঝে মাঝে হেঁটে চলে আইরংমারা থেকে ডাকবাংলোর দিকে। কখনও চার হাত এক করে বসে থাকে টিলার মাথায়। সুযোগ পেলেই বিনিতার ঘন কালো চুলে মাথা গুঁজে দেয় বিনয়।
একদিন মাথার চুল থেকে ঠোঁট দু’টো নিয়ে বিনিতার শান্ত দু’টো ঠোঁটের মধ্যে গুঁজে দেয় বিনয়। বিনিতা ঝাপটে ধরে বিনয়কে। দু’জন ধীরে ধীরে হারাতে থাকে নিজেদের মধ্যে। চারদিকে জ্যোস্নার আলো ছড়িয়ে দিয়েছে সোহাগ। চাঁদের আলোয় চোখ মেলে বিনিতা বলে, বিনয়,’ চলো আজ আমরা পৃথিবীর এই এক কোণে দু’জন দু’জনের মধ্যে হারিয়ে যাই।’
— বিনয় বলে, ‘কীভাবে?’
— প্রেমে পড়লে সব জানতে হয়। আমার সমস্ত পাপড়ি আজ খুলে দাও।
— না, তুমি বরং এই জ্যোৎস্না দিয়ে আমাকে মেখে খাও।
— বিনিতা বল, ঘরের লাইট বন্ধ করে আসি। জ্যোৎস্নার আলোয় তুমি ভালো পাপড়ি ভাঙতে পারবে।
— তোমার পাপড়ি ভাঙায় যে এত সুখ, তা আমি আগেই বুঝেছিলাম।
— কথা বলে সময় নষ্ট করো না। জ্যোৎস্না ফুরিয়ে আসছে।
বিনয় আদরে আদরে জ্যোৎস্নার আলোয় পাপড়ি খুলতে থাকে হাইলাকান্দি শহরের বিনিতাকে। হঠাৎ সূর্যের আলো ঘরে ঢুকে ঘুম ভাঙিয়ে দেয় বিনয়কে।
আরও পড়ুন
PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে
উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন