মানুষ এবং পশুদের কেন বেঁচে থাকার জন্য শ্বাস নেওয়া জরুরী ?

উত্তরাপথঃ শ্বাস একটি মৌলিক প্রক্রিয়া যা সমস্ত জীবন্ত প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। মানুষ, প্রাণী এমনকি কিছু উদ্ভিদেরও  বিভিন্ন বিপাকীয় প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় যা তাদের বৃদ্ধি, প্রজনন এবং অন্যান্য জৈবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। অক্সিজেন আমাদের শরীরের জন্য একটি জ্বালানী। যখন আমরা খাবার খাই ,তখন এটি আমাদের পেটে ভেঙ্গে যায় এবং আমাদের রক্ত ​​প্রবাহে প্রবেশ করে।সেখান থেকে, এটি আমাদের কোষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আনাদের কোষের ভিতরে মাইটোকন্ড্রিয়া নামক ক্ষুদ্রতর কাঠামো রয়েছে, যা আমাদের পুরো শরীরকে শক্তি দেয়। মাইটোকন্ড্রিয়া খাবারের পুষ্টি উপাদানগুলিকে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করে। কিন্তু এটিকে শক্তিতে পরিণত করার জন্য আরও একটি উপাদান প্রয়োজন তাহল অক্সিজেন।

সেই কারনে অক্সিজেন একটি অত্যাবশ্যক উপাদান যা জীবিত প্রাণীর শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন। সেলুলার শ্বসন নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, অক্সিজেন কোষ দ্বারা গ্লুকোজ এবং অন্যান্য পুষ্টি ভেঙ্গে এডিনোসিন ট্রাইফসফেট (ATP) আকারে শক্তি মুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। এই শক্তি তারপর কোষ দ্বারা পেশী সংকোচন, স্নায়ু প্রবণতা, প্রোটিন এবং অন্যান্য অণুর সংশ্লেষণের মতো বিভিন্ন কার্য সম্পাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

সেই কারনে আমাদের শরীরে প্রচুর অক্সিজেনের প্রয়োজন। আমরা যখন শ্বাস গ্রহণ করি, তখন নির্দিষ্ট কিছু অক্সিজেন আমাদের রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে।শক্তি উৎপাদনের পাশাপাশি, অক্সিজেন শরীরের ক্ষতিকারক পদার্থের ডিটক্সিফিকেশনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।আমরা যখন নিশ্বাস ত্যাগ করি তখন আমাদের শরীর থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস বের হয়ে যায়। অক্সিজেনের সরবরাহ ব্যতীত, শরীর এই ক্ষতিকারক পদার্থগুলিকে নির্মূল করতে সক্ষম হবে না, যার ফলে কোষের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হবে।

শরীর এবং পরিবেশের মধ্যে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের বিনিময়ের জন্য শ্বাসযন্ত্রের ব্যবস্থা দায়ী। মানুষ এবং প্রাণীদের মধ্যে, শ্বাসযন্ত্রের সিস্টেম ফুসফুস, শ্বাসনালী এবং অন্যান্য কাঠামো নিয়ে গঠিত যা গ্যাসের আদান-প্রদানের সুবিধার্থে একসাথে কাজ করে। যখন আমরা শ্বাস নিই, তখন অক্সিজেন সমৃদ্ধ বাতাস ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং রক্তনালীতে স্থানান্তরিত হয়, যেখানে এটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য সারা শরীরে সঞ্চালিত হয়। একই সময়ে, কার্বন ডাই অক্সাইড, সেলুলার শ্বাস-প্রশ্বাসের একটি বর্জ্য পণ্য, রক্ত থেকে অপসারণ করা হয় এবং শরীর থেকে বের করে দেওয়া হয়।

শরীরের অ্যাসিড-বেস ভারসাম্য বজায় রাখতে শ্বাসযন্ত্রের ব্যবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে, শ্বসনতন্ত্র শরীরের pH মাত্রাকে সংকীর্ণ সীমার মধ্যে রাখতে সাহায্য করে। এই ভারসাম্য শরীরের মধ্যে এনজাইম এবং অন্যান্য জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করার জন্য অপরিহার্য।

 শ্বাস-প্রশ্বাস একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া যা সমস্ত জীবন্ত প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। অক্সিজেন, সেলুলার শ্বসন প্রক্রিয়ার একটি মূল উপাদান, শক্তি উৎপাদন এবং শরীরের ক্ষতিকারক পদার্থের ডিটক্সিফিকেশনের জন্য প্রয়োজন। অক্সিজেনের লাগাতার সরবরাহ ছাড়া, জীবিত প্রাণী বেঁচে থাকতে সক্ষম হবে না। গ্যাসের আদান-প্রদান এবং শরীরের অ্যাসিড-বেস ভারসাম্য বজায় রাখতে শ্বাসযন্ত্রের ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শ্বাস-প্রশ্বাসের গুরুত্ব এবং জীবন টিকিয়ে রাখতে অক্সিজেনের ভূমিকা বোঝার মাধ্যমে, আমরা জৈবিক প্রক্রিয়াগুলির জটিলতা এবং সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে পারি যা আমাদের অস্তিত্বে বজায় রাখতে সাহায্য করে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top