দলত্যাগ বিরোধী আইনের প্রাসঙ্গিকতা

উত্তরাপথঃ সদ্য সমাপ্ত রাজ্যসভা নির্বাচনে, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ এবং কর্ণাটকে বিধায়করা যেভাবে দলীয় নির্দেশকে অমান্য করে নিজেদের অন্তরাত্মার টানে দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলেন তাতে  আবারও রাজনীতিবিদদের দলীয় আনুগত্য এবং দলত্যাগ বিরোধী আইনের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দলত্যাগ বিরোধী আইন, ১৯৮৫সালে ভারতীয় সংবিধানের ৫২ তম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল বিধায়কদের ব্যক্তিগত লাভের জন্য দল বদল করার অভ্যাস রোধ করা। আইনটি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অন্য রাজনৈতিক দলে যোগদান করতে নিষেধ করে এবং যদি তারা তা করে তবে তাদের নির্দিষ্ট সদস্যপদ অযোগ্য ঘোষণা করা যেতে পারে।

 যদিও দলত্যাগ বিরোধী আইনটি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দলীয় আনুগত্য এবং স্থিতিশীলতাকে উন্নত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে, রাজনৈতিক দলগুলি তাদের সদস্যদের মধ্যে ভিন্নমতকে দমিয়ে রাখার জন্য এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বিবেক অনুযায়ী ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা সীমিত করার জন্য আইনটি ব্যবহার করে।আবার এর একটি ভিন্নমত হল রাজনৈতিক দলগুলি এই আইনটির মাধ্যমে তাদের দলীয় অনুশাসন বজায় রাখে।

সদ্য সমাপ্ত রাজ্যসভার নির্বাচন সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির কিছু বিধায়ক বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন, কেউ কেউ আবার বিজেপি সমর্থনে ভোটে অনুপস্থিত ছিলেন।  হিমাচল প্রদেশেও দাবি করা হচ্ছে যে কংগ্রেসের কিছু বিধায়ক বিজেপি প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিয়েছেন।  আবার কর্ণাটকে ভারতীয় জনতা পার্টির বিধায়ক এসটি সোমাশেকর রাজ্যসভা নির্বাচনে ক্রস-ভোট করেছেন বলে খবর। উভয় জায়গায় বিধায়কদের এমন বিশ্বাসঘাতকতার পিছনে প্রধান কারণ দলীয় হাইকমান্ডের প্রতি অসন্তোষ বলে জানা গেছে।

 সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, রাজনৈতিক নেতারা তাদের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে দলীয় আনুগত্যের সংকট দেখা দিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি প্রধানের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্যক্তি এবং দলের চিফ হুইপ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এটি দলীয় আনুগত্য রক্ষায় দলত্যাগ বিরোধী আইনের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

সমালোচকরা যুক্তি দেখান যে দলত্যাগ বিরোধী আইন দলবদল রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে ।পরিবর্তে এটি রাজনীতিবিদদের মধ্যে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। তাদের যুক্তি রাজনীতিবিদদের দল পরিবর্তন করার স্বাধীনতা থাকা উচিত যদি তারা বিশ্বাস করে যে এটি তাদের আদর্শিক বিশ্বাসের স্বার্থে। মহারাষ্ট্র এবং গোয়া হল এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ, যেখানে অন্য দল থেকে নির্বাচনে জয়ী বিধায়করা একই দলের সাথে হাত মিলিয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।  এসব ক্ষেত্রে দলগুলো কিছুই করতে পারছে না, নির্বাচন কমিশনও কোনো সুষ্ঠু সমাধান করতে পারছে না।  তাই, দলত্যাগ বিরোধী আইনকে নতুন করে কার্যকর করার চেয়ে দলত্যাগ অনেক বেশি স্বাভাবিক।

অন্যদিকে, দলত্যাগ বিরোধী আইনের সমর্থকরা মনে করেন যে রাজনৈতিক ব্যবস্থার অখণ্ডতা বজায় রাখা এবং দলগুলির দ্বারা ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করা প্রয়োজন। তারা যুক্তি দেয় যে স্থিতিশীল শাসনের জন্য দলীয় আনুগত্য অপরিহার্য এবং রাজনীতিবিদদের তাদের কর্মের জন্য শুধু দলের প্রতি নয়, ভোটারদের প্রতিও যাদের ভোটে তারা নির্বাচিত হচ্ছেন তাদের জবাবদিহি করা উচিত।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top