

উত্তরাপথঃ জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) একটি বৈশ্বিক সংকট যা সারা বিশ্বের মানুষকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে। উষ্ণায়নের ঘটনা থেকে শুরু করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সুদূরপ্রসারী এবং ধ্বংসাত্মক। জাতিসংঘ জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নয়নশীল দেশের পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের আর্থিক ক্ষতি বেশি হচ্ছে। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, নারী-পুরুষের ক্ষয়ক্ষতির হিসাবের এই ব্যবধান ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে।
গত ৫ মার্চ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উষ্ণায়নের কারণে গ্রামীণ এলাকার পুরুষপ্রধান পরিবারগুলো যতটা আয় হারাচ্ছে, তার চেয়ে মহিলাপ্রধান পরিবারগুলোর আয় কমেছে আট শতাংশ বেশি। বন্যার ক্ষেত্রেও পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় তিন শতাংশ বেশি।এ ব্যবধানের অর্থ হলো, বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের হারানো আয় উষ্ণায়নের কারনে ৩ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার বেশি এবং বন্যার ক্ষেত্রে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার বেশি।গবেষকদের অনুমান, গড় তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ার সাথে সাথে পুরুষপ্রধান পরিবারগুলোর তুলনায় নারীপ্রধান পরিবারগুলোর আয় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যাবে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চরম উচ্চ তাপমাত্রার মধ্যেও পুরুষদের তুলনায় নারী ও শিশুদের বেশি কাজ করতে হয়। এমন পরিবেশে গ্রামাঞ্চলের শিশুরা সপ্তাহে গড়ে প্রায় এক ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করে।
এফএও’র গ্রামীণ রূপান্তর ও লিঙ্গ সমতা বিষয়ক উপ-পরিচালক লরেন ফিলিপসের মতে বিশ্বের সরকারগুলো মহিলাদের অসুবিধার কারণগুলো বিবেচনা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের(Climate Change ) ক্ষেত্রে প্রাপ্ত সহায়তাও এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়নি, যা লিঙ্গ সমতা ব্যবধানের সমাধান করবে। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এ প্রতিবেদনেই আর্থিক ক্ষতির ব্যবধান পরিষ্কারভাবে পরিমাপ করা হয়েছে।ফিলিপস বলেন, এ লিঙ্গ ব্যবধান জিডিপি বৃদ্ধিতে নাটকীয় প্রভাব ফেলতে পারে। মহিলাদের ওপর নজর দিয়ে আমরা যদি সাড়ে চার কোটি মানুষের নিরাপত্তাহীনতা কমাতে পারি, তবে সেটি বৈশ্বিক জিডিপি এক শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে।
জলবায়ু সংকটের কারণে মহিলারা পুরুষদের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো সমাজের মানসিকতা যার প্রভাব সমাজে বিদ্যমান মহিলা-পুরুষ বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলছে ; যেমন- জমির মালিকানার ক্ষেত্রে অসম অধিকার, মহিলাদের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব প্রভৃতি। নারীরা জল, জ্বালানি ও খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে দায়িত্ব সমাজে বেশি বহন করেন।অধিকন্তু, কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে মহিলাদের নিয়োগ করা হয়। এর মানে হল পরিবর্তনশীল আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মহিলাদের জীবিকা হারানোর ঝুঁকি বেশি। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে দুর্যোগে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মৃত্যুর সম্ভাবনা ১৪ গুণ বেশি।বিন্তু তা সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি যেমন খরা বা বন্যার প্রভাব থেকে তাদের বেড়িয়ে আসার ক্ষেত্রে মহিলাদের সাহায্য করার জন্য বীমা পাওয়ার সম্ভাবনা কম । যা তাদের আর্থিক দুর্বলতাকে অনেক ক্ষেত্রে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং দুর্যোগের পরে তাদের জীবন পুনর্নির্মাণ করাও তাদের পক্ষে অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে।


জলবায়ু পরিবর্তনের আর্থিক ফলাফলের দ্বারা নারীরা অসমভাবে প্রভাবিত হচ্ছে যা জাতিসংঘের সাম্প্রতিক গবেষণাতে স্পষ্ট। কিন্তু এই সমস্যাটি মোকাবেলা করার জন্য, এমনভাবে নীতি নির্ধারণ করতে হবে যাতে মহিলাদের ক্ষমতায়ন আরও বেশি মাত্রায় করা যায়। সেইসাথে স্থায়ী জীবিকাতে মহিলাদের আরও বেশী মাত্রায় অন্তর্ভুক্ত করনের মাধ্যমে মহিলাদের মহিলাদের আর্থিক ক্ষতি কিছুটা হলেও কম করা যায়।
আরও পড়ুন
Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে
উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন
বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন