যন্ত্রনার নীল গভীরতা থেকে প্রাপ্তির সবুজ দ্বীপ 🌼 প্রগতির পথে আন্দোলনের পথে নারী🌼

অসীম পাঠক, বাঁকুড়া

“বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর “

আকাশ থেকে নেমে এসে নয় মাটির উপর দাঁড়িয়ে মানুষের দিন যাপন প্রাণ ধারণের গ্লানি …. সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের সময়ে দাঁড়িয়ে নারী প্রগতির তাৎপর্য সমাজের গভীরে নিহিত সমস্যাকে সমাধানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ঋগ্বেদে নদীতমা বলা হয়েছে যে নদীকে সেই সরস্বতী নদীতটে ভারতীয় সভ্যতার প্রথম প্রান চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। এখানে আর্য সংস্কৃতি ও হরপ্পীয় সভ্যতার যে নিদর্শন পাওয়া গেছে তাতে নারী সমাজের প্রতি বিশেষ মর্যাদার উল্লেখ রয়েছে। সমাজ সভ্যতার অগ্রগতির পরিবর্তনে যুক্তি ও বোধের সহর্ষ করমর্দনের অভাব বাব বার পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা উপেক্ষিতা, লাঞ্ছিতা, অপমানিতা, অত্যাচারিতা রূপেই প্রকাশিত।

লাহোরের এক কিশোরী বাড়ীর অমতে বিয়ে করে একটি ছেলেকে। বিয়ের কিছুদিন পর ছেলেটির স্থান হয় জেলে। আর মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয় হোমে। এর কিছুদিন পরেই আদালতে যাওয়ার পথে মেয়েটিকে হত্যা করে তার ভাই। এরকম অসংখ্য ঘটনার কথা পাকিস্তানে ছড়িয়ে রয়েছে। গোটা বিশ্বে মেয়েদের উপর অত্যাচারের বীজ বপন করা হয় ছোটবেলায় পরিবারের উষ্ণতার মধ্যেই। পরে ঐতিহ্য সংস্কৃতি আর ধর্মের জল পেরিয়ে সেই বীজ পরিণত হয় মহীরুহে। এই শোষন আর শাসনের বেড়া টপকাতে গেলে একটি মেয়ের যে বিদ্রোহ ঘোষনা করা উচিৎ তার জোর আমাদের দেশের নরম মাটির মেয়েদের নেই। এর জন্য বিচার ব্যাবস্থাও দায়ী। দীর্ঘদিনের অভ্যাস থেকে মেয়েদের উপর অত্যাচার সম্পর্কে বিচারকরা যে মতামত দেন তাতে স্বাভাবিক ভাবেই থেকে যায় বৈষম্যের সম্ভাবনা। ফলে বিচার ব্যাবস্থায় তত্ত্বগত কোন খামতি না থাকলেও সিদ্ধান্ত কিন্তু মেয়েদের বিরুদ্ধেই যায়।

প্রতি বছর ৮ ই মার্চ আমরা নারী দিবস পালন করি। কিন্তু নারী জাতির উপর সম্মান জানাতে কুণ্ঠা বোধ করি। ১৯০৮ সালে এই দিনেই নিউইয়র্কে বস্ত্রশিল্পে নিযুক্ত নারী শ্রমিকরা তাদের কাজের সময়সীমা কমানো ও মজুরী বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করেন। পরের বছর ওই একই দিনে ভোটাধিকারের দাবীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহিলারা সরব হন। কিন্তু পুরো বিশ্বজুড়ে মৌলিক অধিকারের পাশে অন্য যে সমস্যা তা কিন্তু যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই রয়ে যায়। দরকার ছিল প্রশাসনিক কিছু পদক্ষেপের। আইন প্রণয়ন করে নারী নির্যাতন বন্ধের চেয়েও বড় ছিল উদার ও মানবিক দৃষ্টি দিয়ে সমস্যাকে দুরীকরনের প্রচেষ্টা। বাল্যবিবাহ সতীদাহ পরে ভ্রুণ হত্যা এইসব জুলন্ত রাজনৈতিক সামাজিক সমস্যার মূলে অর্থনীতিরও একটা ভূমিকা রয়েছে। সমাজে নারী সচেতনতা সম্ভব যদি অর্থনৈতিক ভাবে নারীদের স্বাবলম্বী করা হয়। বর্তমানে মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হয়েছে , মানুষ এখন যান্ত্রিক।

খাসি সমাজের মতো মাতৃতান্ত্রিক না হোক, বা বিভিন্ন উপজাতি দের সংস্কৃতি, অরণ্য অধ্যুষিত আদিবাসী জনজতির সংস্কৃতির মতো না হোক, নারী সমাজকে মর্যাদার আসনে আনতে গেলে শিক্ষিত স্বনির্ভর হতে হবে ….. তাদের মধ্যে অধিকার বোধ জাগ্রত করতে হবে। সামাজিক অনুষ্ঠানে উৎসব পার্বনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নারী স্বাধীনতা নারী প্রগতি কে শুধুমাত্র মঞ্চের বক্তৃতায় আটকে না রেখে ব্যাবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিটি পরিবারের পুরুষ রা তাদের পরিবারের মহিলাদের সাথে যদি ভালো ব্যাবহার করে তাহলে এই সমস্যা ধীরে ধীরে কমবে, নারীরা ভোগ্য পণ্য নয়। সামাজিক অধিকারে পুরুষ নারী সম মর্যাদায় ভূষিত।

যুগে যুগে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি নারীসমাজ কে আলোর পথ দেখিয়েছে। আর্থিক অভাব অনটনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা দিয়েছে বেশ কিছু বৈপ্লবিক পটভূমি। কারো উপর নির্ভর করে বা পুরুষের মুখাপেক্ষী হয়ে জীবন ধারণ নয় তারা নিজের যোগ্যতায় বাঁচবে। ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে বিলগ্নিকরণ নারীদের প্রেরণা যোগাবে। কৃষি ক্ষেত্রেও বিপ্লব আসবে, যদি মহিলা দের কে সঠিক কাজে লাগানো যায়, গৃহকর্মের পর ও বিভিন্ন চাষবাস ….. সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মেয়েরা তখনই জিততে পারবে মখন শিল্প বানিজ্যে তারা প্রসার লাভ করবে।

গ্রাম বাংলার জঙ্গলমহলের গরীব মায়েরা পিঁপড়ার ডিম খেয়ে বেঁচে থাকেন। এঁরা ওটাকেই ভবিতব্য মনে করেণ। এঁদের কে যদি সেলাই প্রশিক্ষণ এবং ম্যাঙ্গো জুস, স্কুল ইউনিফর্ম সেলাই বিভিন্ন কাজে লাগানো যায়, তাহলে দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারবেন। আর মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের কে পড়াশোনার যাবতীয় ব্যাবস্থা সরকারের দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে।
ভৌগোলিক সীমানায় দাঁড়িয়ে মালভূমি রাঢ়ভূমি সমভূমি গ্রাম শহরে বিভিন্ন সামাজিক অবস্থানের প্রেক্ষাপটে নারী সমাজ কে কাজের দায়িত্ব বন্টন করতে হবে …… একটি চারাগাছ কে যেমন সঠিক ভাবে লালিত পালিত করলে সে বর্ধিত হবে, তেমনই মহিলাদের ও কাজের ক্ষেত্রে লালন পালন করার নৈতিক দায়িত্ব সরকারের উপর ই বর্তায় …..

“যেনাহং নামৃতা স্যাম্‌ কিমহং তেন কুর্যাম্‌।” যার দ্বারা আমি অমৃতা না হব তা নিয়ে আমি কী করবো… সেরকম যে সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নারী সমাজের সমানাধিকারকে সামাজিক স্বীকৃতি দেয়না, সেই সভ্যতার বিকাশ এখনো হয়নি।

ভারতবর্ষের সনাতন (চিরকালীন) জ্ঞানভান্ডার সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞানের অভাবেই বহু মানুষ এভাবে নারী সম্প্রদায়ের অযথা অবমাননা করতে শেখে। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ১০/৩৫ নং শ্লোকটিতে নারীর মধ্যে ঐশ্বরিক গুণাবলীর ঐশ্বর্য নিহিত রয়েছে বলে যে ঘোষনা করেছেন, তার প্রতি নারী সমাজের সযত্ন মনোযোগ আকর্ষনের মাধ্যমে তাঁদের হীনমন্যতা দূর করাই আমাদের অবশ্যকর্তব্য বলে মনে করি। আমাদের সমূহ আশঙ্কা হয় যে, গীতার নবম অধ্যায়ের ‘রাজগুহ্য যোগ’ থেকে ৩২ নং শ্লোকটির ভুল অনুবাদ এবং বিকৃত ব্যাখ্যা কোনও কোনও প্রচলিত বিতর্কিত গীতা-ব্যাখ্যায় নারীর মর্যাদা সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে অনেকেই বিভ্রান্তিবোধ করে থাকেন। শ্লোকটি এরকম –

মাং হি পার্থ ব্যপাশ্রিত্য যেহপি স্যুঃ পাপযোনয়ঃ ।
স্ত্রিয়ো বৈশ্যাস্তথা শূদ্রাস্তেহপি যান্তি পরাংগতিম্ ।। (গীতা ৯/৩২)

শ্লোকটির যথার্থ অন্বয় হওয়া উচিত এইরকম –
“হে পার্থ (পৃথাপুত্র অর্জুন), যে কেউ পাপযোনিতে (নীচ বংশে) জন্মগ্রহন করে, (নীচকুলজাত) শূদ্র, চন্ডালেরা, স্ত্রীলোকেরা এবং বৈশ্য (ব্যবসায়ীরা), তারা যখনই একাগ্রমনে আমার প্রতি (শ্রীভগবানের প্রতি) আশ্রয়গ্রহন করে, তখন তারাও পরম গতি লাভ করে থাকে।” ….. অথচ আধুনিক শাস্ত্রকারের দল যে বাখ্যায় নারীদের ভূষিত করুক না কেনো, আসলেই নারী সমাজ সেই বৈদিক যুগ থেকে অবহেলিত। দেবদাসী প্রথা এরকমই এক অভিশাপ ছিলো, এখনো গ্রামে গঞ্জে নারীদের পরিচয় চার দেয়ালে আটকে।

প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলি নারীর কর্তব্য ও অধিকারের বিচিত্র চিত্র উপস্থাপন করে। গ্রন্থগুলি নারীদের আট ধরনের বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়।[৭][৮] পন্ডিতদের মতে, বৈদিক যুগের হিন্দু ধর্মগ্রন্থসমূহ এবং প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ভ্রমণকারীদের রেকর্ড অনুসারে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় হিন্দু সমাজে যৌতুক বা সতীদাহ প্রথা প্রচলিত ছিল না। এই অনুশীলনগুলি সম্ভবত ভারতীয় উপমহাদেশের আর্থ-রাজনৈতিক উন্নয়ন থেকে দ্বিতীয় সহস্রাব্দে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল। ইতিহাস জুড়ে, হিন্দু সমাজ অনেক নারী শাসক দেখেছে, যেমন রুদ্রমা দেবী, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং সাধু, যেমন অন্ডাল, দার্শনিক, যেমন মৈত্রেয়ী, এবং বৈদিক হিন্দু আচার -অনুষ্ঠানের মহিলা অনুশীলনকারী/ সঞ্চালক।

ব্রায়ান্ট এর মতে, হিন্দুবাদের প্রাচীন কাল থেকে আজ অবধি নারীকে ঐশ্বরিক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শাক্ত, শৈব রীতিতে দেবীকে কেন্দ্রীয় হিসাবে দেখা হয়। হিন্দুধর্মে শক্তি উপাসনা সম্পর্কিত সংস্কৃতীয় ঐতিহ্য ও বহু হিন্দু সম্প্রদায় এইসব ধর্মের মোড়কে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে আসছে …. বহু প্রতিবন্ধকতা সত্বেও এও এক ভালো দিক। এবং অনেক হিন্দু সম্প্রদায় এখনো মাতৃতান্ত্রিক।
আবার ইসলাম ধর্মেও যতোই পর্দানশীন এর পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক জারি থাকুক না কেনো, আসলেই সেখানে নারী সমাজের শিক্ষার কথা আলোচিত হয়েছে। পৃথিবীর কোন প্রাচীন ধর্ম নারীদের অমর্যাদা শেখায়না, তবুও যুগে যুগে কিছু মানুষ ধর্মের মোড়কে লোভ লালসর বিস্তারে পাপের প্রাসাদ তৈরী করে ….

সভ্যতা শুরুর সময় থেকে ক্রমবর্ধমান ইতিহাসে যে বিবর্তন এসেছে নারী মুক্তির পথে তা যথেষ্ট নয়। নিরাপত্তা হীনতায় ভুগতে ভুগতে নারী সমাজ অনেকটাই ক্লান্ত। তবুও আশার কথা যে লড়াই আন্দোলন এখনো নিভে যায়নি। যেখানে পাঁচ বছরের শিশু যৌন নিগ্রহের শিকার হয়, যেখানে অবাঞ্ছিত মাতৃত্বে হাজার হাজার নারী কলংকিতা হয় …. যেখানে শাঁখা সিঁদুরের সংস্কারে বন্দী কয়েদীর ইঙ্গিত সেখানে একটা আমূল পরিবর্তন অনেক লড়াইয়ের পথ।

রিক্ত নিঃস্ব নারী সমাজ যদি স্বনির্ভর হয় প্রতিবাদী হয় নিজের অস্তিত্ব ধরে রাখার কাজে যত্নবান হয় তাহলেই স্থায়ী সমাধান সম্ভব। প্রান – ই – তো প্রানের জন্ম দেয়, একটা প্রদীপ যেমন দশটা প্রণীপকে জ্বালিয়ে দেয় তেমনি একজনই রূপকার হয়ে থাকেন নতুন সৃষ্টির নতুন সম্ভাবনার। প্রগতির পথে নারী সেই সৃষ্টি সম্ভাবনার প্রতীক।
“ সুচেতনা এপথে আলো জ্বেলে এপথেই মানুষের আত্মার ক্রমমুক্তি ঘটবে সে অনেক শতাব্দীর মানব মনীষীর কাজ ” ।


খবরটি শেয়ার করুণ

1 thought on “যন্ত্রনার নীল গভীরতা থেকে প্রাপ্তির সবুজ দ্বীপ 🌼 প্রগতির পথে আন্দোলনের পথে নারী🌼”

  1. Pingback: তীর ভাঙ্গা ঢেউ - উত্তরাপথ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে

উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে   ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি  গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ  ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top