নাসার Bennu Asteroid-র OSIRISREx দল গ্রহাণু বেন্নু থেকে পাথর ও ধুলো সংগ্রহ করছে। ছবিটি NASA Solar System এর X-একাউন্ট থেকে গৃহীত।
উত্তরাপথঃ মহাকাশ অন্বেষণের ক্ষেত্রে, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি আমরা যা ভেবেছিলাম তার সীমানাকে অতিক্রম করেছে। এই ধরনের একটি যুগান্তকারী উন্নয়ন হল বেনু অ্যাস্টেরোড (Bennu asteroid )এর আবিষ্কার। এটি এমন একটি বৈপ্লবিক আবিষ্কার যা আমরা গ্রহাণুগুলিকে অন্বেষণ এবং বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
বেনু নামক গ্রহাণুটির পূর্ববর্তী নাম ছিল 1999 RQ36।২০১৩ সালের একটি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ৯ বছর বয়সী মাইক পুযিও (Mike Puzio) এর নামকরণ করে বেনু।বেনু হলো মিশরীয় দেবতা যাকে ধূসর রঙের সারস জাতীয় পাখি হিসেবে চিত্রিত করা হয়। এই গ্রহাণুটি আকারে প্রায় ৫০০ মিটার চওড়া যা কিনা আমেরিকার বিখ্যাত Empire State Building বা ফ্রান্সের বিখ্যাত আইফেল টাওয়ার দুটির থেকেও আরো বড়। পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে প্রায় ১৯ কোটি কিলোমিটার দূরে যে সমস্ত গ্রহাণু ঘুরে বেড়াচ্ছে বেণুও তাদের মধ্যে একটি| প্রায় ২০০র কাছাকাছি গ্রহাণু যাদের কক্ষপথ বেশ ভালো ভাবে বিজ্ঞানীদের জানা তাদের মধ্যে বেনু হলো অন্যতম এবং এটির কক্ষপথের সাথে পৃথিবীর কক্ষপথের বেশ মিলও আছে| সূর্যের চারিদিকে ঘুরতে পৃথিবীর যেমন ৩৬৫ দিন (লিপ ইয়ার হলে ৩৬৬ দিন) লাগে তেমনই বেনুর লাগে ৪৩৬ দিন এবং প্রতি ৬ বছর অন্তর এটি পৃথিবীর বেশ কাছেও চলে আসে।
নাসা OSIRIS-REx এর মাধ্যমে গ্রহাণু বেনু (Bennu asteroid )থেকে ১০০ থেকে ২৫০ গ্রামের মতো নমুনা সংগ্রহ করেছে। সেই নমুনার মধ্যে জল ও কার্বন পাওয়া গেছে। নাসা জানিয়েছে, মোট সংগৃহীত উপাদানের ৫ শতাংশ কার্বন।সংবাদ সম্মেলনে নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাইরের কোথাও থেকে পৃথিবীতে আনা সবচেয়ে বড় কার্বনসমৃদ্ধ নমুনা এটি। এতদিন আমরা কার্বন ও জলসমৃদ্ধ যে ধরনের নমুনা খুঁজছিলাম, এগুলো ঠিক তা-ই। পৃথিবী গঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলেই মনে হচ্ছে এগুলোকে।’
পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয় কার্বন ও জলকে। আসলে এগুলোকে প্রাণের মূল উপাদানও বলা যায়। বেনু গ্রহাণুতে (Bennu asteroid) যেহেতু কার্বন ও জলের উপাদান আছে, সে ক্ষেত্রে এই নমুনা গবেষণায় উন্মোচিত হতে পারে পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য।সেই সাথে মহাবিশ্ব এবং এর মধ্যে আমাদের স্থান সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।কারণ বেনু গ্রহাণুটির বয়স প্রায় ৪৫০ কোটি বছর। আনুমানিক এই সময়েই সৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবী। বিজ্ঞানীরা তাই এই নমুনা নিয়ে বেশ আশাবাদী।
NASA এই বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণার জন্য আগামী দুই বছর, মিশনের বিজ্ঞান দল নমুনাগুলির বৈশিষ্ট্য এবং মিশনের বৈজ্ঞানিক লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ করবে। যা ভবিষ্যত প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের আরও গবেষণার রসদ যোগাবে। OSIRIS-REx-এর বিজ্ঞান কর্মসূচির অংশ হিসাবে, বিশ্বজুড়ে ২০০ টিরও বেশি বিজ্ঞানীদের একটি দল রেগোলিথের বৈশিষ্ট্যগুলি অন্বেষণ করবে, যার মধ্যে অনেক মার্কিন প্রতিষ্ঠানের গবেষক, NASA অংশীদার JAXA (Japan Aerospace Exploration Agency), CSA (কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি), এবং বিশ্বের অন্যান্য বিজ্ঞানীরা রয়েছে।
OSIRIS-REx অভিযানের প্রধান বিজ্ঞানী ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার অধ্যাপক দান্তে লরেটা। তিনি বলেন, ‘বেনু গ্রহাণুর পাথর ও ধূলিকণার মধ্যে সংরক্ষিত আছে প্রাচীন রহস্য। সেই রহস্য উন্মোচিত হলে সৌরজগৎ সৃষ্টির রহস্যও জানা যাবে।‘এর আগে, ২৪ সেপ্টেম্বর বেনু গ্রহাণু থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফেরে নভোযান ওসাইরিস-রেক্স। সেই নমুনা প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করা হয় টেক্সাসে অবস্থিত নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে। এখন পর্যন্ত কোনো গ্রহাণু থেকে সবচেয়ে বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এ অভিযানেই। তবে এটাই কোনো গ্রহাণু থেকে প্রথম নমুনা সংগ্রহের ঘটনা নয়। এর আগে, জাপানি নভোযান হায়াবুসা২ র্যুগু (Ryugu) গ্রহাণু থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিল। অবশ্য সে সময় সংগৃহীত নমুনার পরিমাণ ছিল খুব কম, এক চা-চামচের সমান।
OSIRIS-REx অভিযান শুরু হয় ২০১৬ সালে। তখন এ মিশনের বাজেট ছিল ১০০ কোটি ডলার। দুই বছর পর, ২০১৮ সালে নভোযানটি বেনু গ্রহাণুর কাছে পৌঁছায়। এর আরও দুই বছর পরে, ২০২০ সালে নভোযানটি রোবটিক আর্ম ব্যবহার করে বেনু গ্রহাণু থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। সেখান থেকে নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসতে সময় লাগে আরও প্রায় আড়াই বছর। এ সময়ে নভোযানটি প্রায় ৬২০ কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে। বেনু গ্রহাণুর নমুনা সংগ্রহ শেষ করেই OSIRIS-REx অ্যাপোফিস নামের একটি গ্রহাণুর দিকে যাত্রা করেছে। সব ঠিক থাকলে নভোযানটি ২০২৯ সালের মধ্যে ওই গ্রহাণুর কাছে পৌঁছাবে।
সূত্র – NASA website থেকে প্রাপ্ত
আরও পড়ুন
World Population: উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে চলেছে বিশ্বের জনসংখ্যা
উত্তরাপথ: সারা পৃথিবীতে জাতিসংঘের উদ্যোগে গত মঙ্গলবার ১১ জুন পালিত হয়েছে বিশ্ব জনসংখ্যা (World Population) দিবস। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা বিভাগ জানিয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা হবে ৯৭০ কোটি। অর্থাৎ প্রায় এক হাজার কোটি। এই সময়ে ভারত, চীন ও নাইজেরিয়া হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তিন জনবহুল দেশ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ১৯৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ২৫০ কোটি। ২০২২ সালে জনসংখ্যা হয় ৮০০ কোটি। .....বিস্তারিত পড়ুন
Chandrayan 3: চন্দ্রযান-৩ সফল উৎক্ষেপণ, অবতরণ করবে ২৩ অগস্ট
উত্তরাপথ: চন্দ্রযান - ৩ প্রকল্পের সফল উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষ করল দূরদর্শনের মাধ্যমে আপামর ভারতবাসী । চন্দ্রযান-৩ প্রকল্পের পরিচালক পি ভিরামুথুভেল এবং ইসরো প্রধান এস সোমানাথও তাদের আনন্দ ভাগ করে নিলেন যখন LVM3 M4 যানটি সফলভাবে উৎক্ষেপণ হল। "চন্দ্রযান-৩, তার সুনির্দিষ্ট কক্ষপথে, চাঁদের উদ্দেশ্যে তার যাত্রা শুরু করেছে। ইসরো জানিয়েছে, উৎক্ষেপণের সময় মহাকাশযানের অবস্থা স্বাভাবিক ছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
UCC: Uniform Civil Code এবারও অভিন্ন হবে না
উত্তরাপথ: Uniform Civil Code (ইউসিসি) এ বারও ইউনিফর্ম হবে না। গত ৩রা জুলাই সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ ইঙ্গিত দেওয়া হয়। কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রবীণ বিজেপি নেতা সুশীল কুমার মোদি পরামর্শ দিয়েছেন যে উপজাতি সমাজ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বিজেপির এক দিল্লীর নেতার বক্তব্য , তফসিলি উপজাতিরা তাদের নিজস্ব নিয়ম-কানুন তৈরি করে এবং সেগুলি অনুসরণ করে। এই ধরনের লোকেরা সাধারণত বন এবং পাহাড়ে বাস করে।তাদের আদিমতা, ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা, সামাজিক, শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা .....বিস্তারিত পড়ুন
Life in Saturn: শনিতে কি প্রাণের "ছোঁয়া"?
ড. সায়ন বসু: গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী গায়া (Gaia) এবং উরেনাস (Urenus)-এর সন্তান এঙ্কেলাডাস (Enceladus) ছিলেন একজন দৈত্য | দেবতা এবং দৈত্যদের যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন যুদ্ধ এবং জ্ঞানের দেবী এথেনার (Athena) বিপক্ষে | এমনও মনে করা হয় যে এঙ্কেলাডাসকে ইতালির সিসিলিতে অবস্থিত এতেনা (Etena) পর্বতের নীচে সমাধি দেওয়া হয় | বলা হয়ে থাকে ভূমিকম্প এবং অগ্ন্যুৎপাতের জন্যে নাকি তার নিঃশ্বাস দায়ী | ঠিক তেমনই শনির একটি ছোট উপগ্রহ যার নামও এঙ্কেলাডাস তা থেকেও প্রচুর পরিমানে ফসফরাসের হদিশ পাওয়া গেছে যা কিনা বৈজ্ঞানিকদের .....বিস্তারিত পড়ুন