BPA-মুক্ত BPS যুক্ত জলের বোতলগুলি কি আমাদের জন্য নিরাপদ বিকল্প?

উত্তরাপথঃ BPA মানে বিসফেনল A।এটি একটি রাসায়নিক যৌগ যা সাধারণত জলের বোতল সহ বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্যে পাওয়া যায়।সাধারণত BPA যুক্ত পণ্য হরমোন এবং প্রজনন সমস্যার সাথে যুক্ত। তাই এই রাসায়নিকের সংস্পর্শ কমাতে BPA-মুক্ত জলের বোতল ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। BPA-মুক্ত BPS বোতলগুলি বিকল্প উপাদান থেকে তৈরি করা হয় যাতে বিসফেনল A থাকে না এবং বলা হচ্ছে যে এটি নিয়মিত ব্যবহারের জন্য একটি নিরাপদ বিকল্প। তাই সুস্থ্য জীবণের জন্য BPA-মুক্ত BPS যুক্ত জলের বোতলগুলি কি আমাদের কাছে নিরাপদ বিকল্প কি পরামর্শ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

যখন বিপিএ-মুক্ত প্লাস্টিক পণ্যগুলির সম্ভাব্য স্বাস্থ্যের প্রভাব সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং আলোচনা চলছে, সেইসময় মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের(University of Missouri) বিজ্ঞানীরা বিপিএ(BPA) বিকল্প খুঁজে পেয়েছেন, বিসফেনল এস(BPS)। বিজ্ঞানীদের মতে এটিরও(BPS) মানুষের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব রয়েছে।  ।

কয়েক দশক ধরে, বিজ্ঞানীরা প্রাণীদের উপর BPA র প্রভাব ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন করেছেন যার ফলাফলগুলি নির্দেশ করে যে রাসায়নিকটি প্রাথমিক গর্ভাবস্থার ক্ষতি, প্ল্যাসেন্টাল রোগ এবং জন্মের পরে স্বাস্থ্যের উপর বিভিন্ন নেতিবাচক ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু এই প্রতিকূল স্বাস্থ্যের প্রভাবগুলি আরও ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে তাই কোম্পানিগুলি প্লাস্টিক পণ্যগুলি তৈরি করতে বিকল্প রাসায়নিক ব্যবহার করার দিকে ঝুঁকছে। বর্তমানে বিভিন্ন কম্পানি জলের বোতল এবং খাবারের পাত্রগুলিতে   “BPA-মুক্ত” লেবেল লাগিয়ে দিচ্ছে।তবে , মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের(MU) বিজ্ঞানী চেরিল রোজেনফেল্ড(Cheryl Rosenfeld) সতর্ক করেছেন এই রাসায়নিক বিকল্পগুলি, যেমন বিসফেনল এস (BPS), এখনও মানুষের ব্যবহারের জন্য নিরাপদ নয়।

গবেষণায়, রোজেনফেল্ড এবং তার সহকর্মীরা ইদুরের উপর বিপিএসের (BPS), প্রভাব পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি বলেন,গর্ভাবস্থায় মা এর রক্ত যদি কোনও ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসে তবে তার প্রভাব বিকাশমান শিশুর মধ্যে স্থানান্তর হতে পারে।বিপিএসের মতো কৃত্রিম রাসায়নিকগুলি মাতৃ প্ল্যাসেন্টার মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারে, তাই মায়ের রক্তে যা কিছু সঞ্চালিত হয় তা সহজেই বিকাশকারী শিশুর কাছে স্থানান্তরিত হতে পারে। মানুষের গর্ভাবস্থায় BPS-এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলি অনুকরণ করার জন্য এই মাউস মডেলটি এখন আমাদের কাছে সেরা মডেল, কারণ ইঁদুর এবং মানুষ উভয়ের মধ্যেই প্লাসেন্টার গঠন একই রকম।

তবে BPA (bisphenol A) এবং BPS (bisphenol S) উভয়ই রাসায়নিক যৌগ যা সাধারণত জলের বোতল সহ বিভিন্ন প্লাস্টিক উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। যদিও বিপিএ(BPA)নিয়ে আজ পর্যন্ত অনেক বেশী গবেষণা হয়েছে BPS এর তুলনায় এবং গবেষণায় দেখা যায় যে বিপিএ এবং বিপিএস উভয়ই আমাদের সম্ভাব্য স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

BPA সাধারনত হরমোন সংক্রান্ত সমস্যা , প্রজনন সমস্যা মস্তিষ্ক এবং আচরণের উপর সম্ভাব্য প্রভাব সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য উদ্বেগের সাথে যুক্ত। এটি শরীরে ইস্ট্রোজেনকে অনুকরণ করে , যা এন্ডোক্রাইন সিস্টেমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। যাইহোক, এই প্রভাবগুলির পরিমাণ এবং মানুষের মধ্যে এর প্রভাব এখনও অধ্যয়ন এবং বিতর্কের পর্যায়ে রয়েছে।

একইভাবে, BPS-তে BPA-এর মতো হরমোন-নকল করার বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে। কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে BPS এর সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিও থাকতে পারে, যার মধ্যে অন্তঃস্রাব ব্যাঘাত এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব রয়েছে। যাইহোক, মানব স্বাস্থ্যের উপর BPS এর প্রভাব সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।

সম্ভাব্য ঝুঁকি কমাতে, বিশেষজ্ঞরা জলের বোতল এবং অন্যান্য প্লাস্টিকের পণ্যগুলির জন্য BPA-মুক্ত এবং BPS-মুক্ত বিকল্পগুলি বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।। গ্লাস, স্টেইনলেস স্টিল বা BPA/BPS-মুক্ত প্লাস্টিকের মতো উপকরণগুলি বেছে নেওয়া এই রাসায়নিকগুলির এক্সপোজার কমাতে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায় সাহায্য করতে পারে।

বিঃদ্রঃ- সর্বদা সর্বশেষ গবেষণা সম্পর্কে অবগত থাকার এবং ব্যক্তিগত পরামর্শের জন্য স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের সাথে পরামর্শ করা জরুরী।

সূত্রঃ: “Bisphenol A and bisphenol S disruptions of the mouse placenta and potential effects on the placenta–brain axis” by Jiude Mao, Ashish Jain, Nancy D. Denslow, Mohammad-Zaman Nouri, Sixue Chen, Tingting Wang, Ning Zhu, Jin Koh, Saurav J. Sarma, Barbara W. Sumner, Zhentian Lei, Lloyd W. Sumner, Nathan J. Bivens, R. Michael Roberts, Geetu Tuteja and Cheryl S. Rosenfeld, 18 February 2020, Proceedings of the National Academy of Sciences.

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে

উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top