প্রীতি গুপ্তাঃ– CAA কি বিজেপিকে কোনও রাজনৈতিক সুবিধা এনে দেবে? নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) দিনকয়েক আগে ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়েছে, যা দেশজুড়ে বিতর্কের ঢেউ উঠেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় সংসদ কর্তৃক পাস হওয়া এই আইনটির লক্ষ্য আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা।যদিও সরকারের দাবি যে CAA ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসাদের সাহায্য করার জন্য একটি মানবিক আইন, কিন্তু সমালোচকদের যুক্তি এই আইনটিতে মুসলিম অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে এবং ভারতীয় সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ নীতিগুলি লঙ্ঘন করা হয়েছে।
নির্বাচনের আগে সিএএ বাস্তবায়নকে ঘিরে মূল প্রশ্নগুলির মধ্যে একটি হল ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) (CAA) এর থেকে কোনও রাজনৈতিক সুবিধা পাবে কিনা। কেউ কেউ বলছেন লোকসভা ভোটের আগে মোদির এটি মাস্টারস্ট্রোক । সত্যিই তাই? হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলমানদের প্রান্তিক করার প্রচেষ্টার জন্য বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত হয়েছে। CAA কে সেই এজেন্ডার একটি ধারাবাহিকতা হিসাবে দেখা হচ্ছে বিরোধী দলগুলির দ্বারা। যার ফলে অনেকেই বিশ্বাস করে যে বিজেপি তার মূল হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভিত্তি থেকে সমর্থন পেতে একটা বড় অংশের ভোট হারাতে পারে।এই আইন প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যদি কোনও বৈষম্য হয়, সেই জিনিস আমরা মানি না।অন্যদিকে বিজেপি শিবিরের আশ্বাস, সিএএ কার্যকর হলে একজনের কাছ থেকেও নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়া হবে না।
এখন প্রশ্ন ২০১৯ সালে পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ঠিক কেন লোকসভা নির্বাচনের আগে কার্যকর করা হল। কি আছে এই আইনটিতে ? CAA-এর মূল রূপ বলে যে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আসা সেই দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলি সহজেই নাগরিকত্ব পাবে।এতে হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি ধর্মের মানুষের কথা উল্লেখ রয়েছে।কিন্তু সিএএ কার্যকর হওয়ার পরে, প্রশ্ন উঠছে দেশে সিএএ কার্যকর হওয়ায় কারও ক্ষতি হবে কিনা এবং এই সিএএ আইনের ফলে যারা অনেক উপকৃত হতে চলেছেন তারা কারা।CAA-এর অধীনে ভারতে আসা হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি ইহুদি শরণার্থীরা নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু এর অর্থ এমন নয় যে সিএএ-এর অধীনে বিশ্বের কোনও দেশের অমুসলিম উদ্বাস্তুরা নাগরিকত্ব পাবে, CAA এর অধীনে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান সহ নির্যাতিত অমুসলিম অভিবাসীরা যারা ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ এর আগে ভারতে বসতি স্থাপন করেছিল, তারাই কেবল ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবে।
CAA আসার সাথে সাথে কেউ কি তাদের নাগরিকত্ব হারাবে? বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, এটি মুসলিম প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে সেইদেশের সংখ্যালঘু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার একটি আইন। CAA কার্যকর হওয়ার পরে, কোনও ভারতীয় নাগরিকের নাগরিকত্ব হারানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। উল্টোদিকে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেছেন, ‘ যদি CAA দেখিয়ে, NRC নিয়ে এসে কারও, যাঁরা এখানকার নাগরিক, তাঁদের নাগরিকত্ব ক্যানসেল করা হয়, তা হলে কিন্তু আমরা কেউ চুপ থাকব না। আমরা জোরালভাবে এটার প্রতিবাদ করব। আর CAA এর নাম করেও কাউকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেবে, এই চালাকিও আমরা করতে দেব না। ‘
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ক্ষেত্রে সিএএ বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ফ্য়াক্টর! তার কারণ মতুয়া ভোট। ২০১১ সাল থেকে এই মতুয়া ভোটের সিংহভাগই ছিল তৃণমূলের দখলে। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভায় সেই হিসেব বদলে যায়। বনগাঁ এবং রানাঘাট – মতুয়া অধ্যুষিত ২টি লোকসভা কেন্দ্রই তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজ্যের ১০২টি বিধানসভা কেন্দ্রে মতুয়াদের প্রভাব আছে। বাংলার অন্তত ৭৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মতুয়া ভোট। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩১টি সংরক্ষিত বিধানসভা আসনে তো কার্যত নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নেয় মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক।
তাই CAA চালু হওয়ার ফলে কি বদলে যেতে পারে বাংলার ভোটের সমীকরণ? সামগ্রিকভাবে, সিএএ বাস্তবায়ন শেষ পর্যন্ত বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে উপকৃত করবে কিনা তা দেখার বিষয়। যদিও আইনটি বিজেপির মূল হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদী আদর্শের অনুরূপ, কিন্তু এই আইনটির বিরোধিরা ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বহুত্ববাদের প্রতি বিজেপির দায়বদ্ধতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।আগামীদিনে CAA কি বিজেপিকে আদৌ কোনও রাজনৈতিক সুবিধা এনে দিতে পারবে ? সেটা দেখতে আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
আরও পড়ুন
Political Violence: রাজনৈতিক সন্ত্রাস করে এতবড় জয় অর্জন করা সম্ভব ?
উত্তরাপথ: পশ্চিমবঙ্গে ত্রি-স্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন ও Political Violence যেন একে অপরের পরিপূরক হয়ে গেছে । এবারের নির্বাচনে ব্যাপক ভাবে জয়লাভ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস ,বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, এবং বাম দল এবং কংগ্রেসের জোট সবচেয়ে কম আসন পেলেও ভোটের হার আগের বারের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের এই জয় আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে তাদের দলের কর্মীদের বাড়তি উৎসাহ দেবে সন্দেহ নাই। .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়
পশ্চিমবঙ্গের ছোট-বড় যে কোনও নির্বাচন মানেই রাজনৈতিক হিংসা । সদ্য অনুষ্ঠিত পঞ্চায়েত নির্বাচনও তার ব্যতিক্রম নয়।রাজনৈতিক হিংসা যাতে না হয় নির্বাচনে তার জন্য যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার পরও হিংসা অব্যাহত থাকল, সারা রাজ্যজুরে ঘটল তেরোটি মৃত্যুর ঘটনা ।পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘট হিংসা রাজ্যের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহ নাগরিকদের ভোটাধিকার নিয়ে আমাদের সামনে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। আমাদের রাজ্যে চলতে থাকা রাজনৈতিক হিংসার পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ একাধিক কারণ থাকলেও বেকারত্ব সহ দুর্বল গ্রামীন অর্থনীতি এর প্রধান কারণ । দুর্বল গ্রামীন অর্থনীতির কারণে বেশীরভাগ গ্রামীন এলাকার মানুষদের অর্থনৈতিক উপার্জনের সুযোগ খুব কম। বিশেষত স্বল্প শিক্ষিত সেই সব মানুষদের যারা না পায় সরকারি চাকুরি না পারে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতে, গ্রামীন অর্থনীতিতে বিশাল সংখ্যক মানুষ এই শ্রেনীর অন্তর্গত .....বিস্তারিত পড়ুন
৩৭০ ধারার সিদ্ধান্ত কি SC-এ বাতিল হতে পারে ?
উত্তরাপথ: ৩৭০ ধারা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় আদালত আগামী ২ আগস্ট থেকে এ বিষয়ে নিয়মিত শুনানি করবে। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় সহ ৫ বিচারপতির বেঞ্চ উভয় পক্ষের যুক্তি শুনবে। এ বিষয়ে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। এখন প্রশ্ন হঠাৎ কেন ৪ বছর পর সুপ্রিম কোর্টে ৩৭০ ধারা নিয়ে শুনানি হচ্ছে, পিটিশনকারীদের যুক্তি কী .....বিস্তারিত পড়ুন
Diabetes রাখুন খুব সহজেই নিয়ন্ত্রনে
উত্তরাপথ: ডায়াবেটিসের (Diabetes) সমস্যা সারা বিশ্বের লোকেদের এক প্রধান সমস্যা । ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ এর একটি রিপোর্ট অনুসারে ২০১৯ সালের ভারতে ৭৭ মিলিয়ন ব্যক্তির ডায়াবেটিস ছিল, যা ২০৪৫ সালের মধ্যে ১৩৪ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা এই ব্যক্তিদের প্রায় ৫৭% জানতেননা তাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে । একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা ডায়াবেটিসে (Diabetes )আক্রান্ত ব্যক্তিদের গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন সেই সাথে সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত .....বিস্তারিত পড়ুন