উত্তরাপথঃ ছুটির মরসুম ক্রিসমাস (Christmas), কিন্তু আমরা বেশিরভাগই ক্রিসমাস উদযাপনের পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে চিন্তা করি না। আমরা কেনই বা করব? এটি বছরের একটি সময় যখন খাওয়া, পান করা এবং আনন্দ-উৎসব করা রাষ্ট্র-অনুমোদিত। কিন্তু এই উৎসবের সময়ে ক্রিসমাস বর্জ্য (Christmas waste) কতটা পরিবেশগতভাবে দুঃস্বপ্ন আমাদের জন্য বয়ে আনে তা দেখে আপনি অবাক হতে পারেন।
ক্রিসমাস কাছে আসার সাথে সাথে, অনেক শিশু আশা করে যে সান্তা তাদের জন্য অনেক খেলনা আনবে।এই খেলনা বাচ্চাদের শেখার এবং কৌতূহলী হওয়ার সুযোগ দেয় ঠিকই ,কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সমস্ত খেলনার ৮০ শতাংশ ল্যান্ডফিল, ইনসিনারেটর বা সমুদ্রে শেষ হয়। খেলনার এই প্লাস্টিক দূষণ আমাদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য এক বড় হুমকি। তবে বড়দিনের কোন অংশটি থেকে সবচেয়ে বেশি পরিবেশ দূষিত হয় তা সঠিকভাবে বলা কঠিন। উৎসবের এই সময়টিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য অপচয়,হয় ।এছাড়াও অবাঞ্ছিত উপহার এবং গৃহস্থালীর জিনিসপত্র, কাগজ এবং প্লাস্টিকের মোড়ক ইত্যাদি আমাদের ল্যান্ডফিলগুলিকে ভরাট করে। এক প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছর ক্রিসমাসের সময় ল্যান্ডফিলগুলিতে ১০০ মিলিয়নেরও বেশি আবর্জনা ব্যাগ পাঠানো হয়েছিল ।
এখন প্রশ্ন, বড়দিনে কত খাবার নষ্ট হয় ? গত ক্রিসমাসে ভারতে প্রায় £৬৪ মিলিয়ন মূল্যের খাবার নষ্ট হয়েছিল, যা প্রায় ৭ মিলিয়ন টন। UKতে ২ মিলিয়ন টার্কি, ৫ মিলিয়ন ক্রিসমাস পুডিং এবং ৭৪ মিলিয়ন কিমা পাই ল্যান্ডফিলে গেছে। এই বর্জ্যকে (Christmas waste )যদি পুনর্ব্যবহার করা যেত তাহলে তা ৫৭ বছর ধরে UKতে ব্যবহৃত মোট খাদ্যের সমান। ইকোলজি সেন্টারের মতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, আমরা থ্যাঙ্কসগিভিং এবং নববর্ষের আগের দিনে বর্জ্যের ২৫% বৃদ্ধি দেখা গেছে। এটি ১ মিলিয়ন টন অতিরিক্ত খাদ্য বর্জ্য। খাদ্য বর্জ্য সমস্যা শুধুমাত্র ক্রিসমাসের সময়টাতে হয় তেমনটা নয়। আমরা যত বেশি খাই,তার থেকে বেশি সম্ভাব্য বর্জ্য তৈরি করি যা যেকোনও উৎসবের সময় ভায়াবহ আকার ধারন করে। পরিবেশবিদদের মতে একক-ব্যবহারের প্লাস্টিকের চেয়ে খাদ্য বর্জ্য জলবায়ু সংকটে বেশি অবদান রাখে।
খাদ্য বর্জ্য শুধুমাত্র একটি মাত্র পণ্য শেষ হয়ে যাওয়া নয় এর সাথে যুক্ত বস্তুটির ক্রমবর্ধমান উৎপাদন প্রক্রিয়াটিকেও ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া। উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি একটি না খাওয়া কিমা পাই ফেলে দিয়েছেন। এটির মধ্যে থাকা মাংসটি কেবল নিজেই বিনের মধ্যে যায় না, এর সাথে যুক্ত সমস্ত প্রক্রিয়াটিকেও সঙ্গে নিয়ে যায়। প্রজনন, খাওয়ানো, ওষুধ দেওয়া, জবাই করা, প্যাকিং, বিতরণ এবং কোল্ড স্টোর করা, তারপর সেই মাংসটিকে আপনার বাড়িতে আনতে, ফ্রিজে রাখতে এবং রান্না করতে যে জ্বালানির ব্যবহার হয় । তারপর সেই ফেলে দেওয়া খাবারটি ল্যান্ডফিলের আবর্জনা ব্যাগের ভিতরে পচে যায়, এবং এটি পচে যাওয়ার সাথে সাথে মিথেন গ্যাস পরিবেশে ছেড়ে দেয়। মিথেন একটি গ্রিনহাউস গ্যাস যা কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়েও বহু গুণ বেশি শক্তিশালী।
উপহার দেওয়া এবং গ্রহণ করা ক্রিসমাস সময়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যার অর্থ মোড়ানো কাগজ এবং প্যাকেজিংও এর সঙ্গে জড়িত। ক্রিসমাসের সময় ২০২২ সালে শুধুমাত্র ভারতে ১২৫,০০০ টন প্লাস্টিক প্যাকেজিং ফেলে দেওয়া হয়েছিল এবং যুক্তরাজ্যে এই পরিমাণ আরও বেশী ছিল, যার বেশিরভাগই ল্যান্ডফিলে যায় কারণ মোড়ানোর কাগজ সবসময় পুনর্ব্যবহারযোগ্য হয় না।
চীন থেকে পাঠানো কৃত্রিম প্লাস্টিকের ক্রিসমাস ট্রি থেকে ক্রিসমাস কার্ড এগুলির বেশীরভাগ ক্রিসমাসের পর ল্যান্ডফিলে যায়। এছাড়াও ক্রিসমাসের সময় আমাদের অনেকেই ক্রিসমাস উপহার পেয়ে থাকি, এই উপহারগুলির প্রতি ৫ টির মধ্যে ১টি উপহার অবাঞ্ছিত থাকে, যা ল্যান্ডফিলে শেষ হয়। এক প্রাতিবেদন অনুসারে সারা বিশ্বের প্রায় ৮০% মানুষ উপহার কেনাকে অত্যন্ত ব্যায় বহুল বলে মনে করেন, যার অর্থ আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই অনুপযুক্ত এবং অবাঞ্ছিত বস্তুগুলিকে উপহার হিসেবে বেছে নিতে বাধ্য হন, বিশেষ করে যাদের আমরা খুব ভালোভাবে চিনি না তাদের জন্য।পুনে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের (PMC) কঠিন বর্জ্য বিভাগের রিপোর্ট অনুযায়ী গত বছর ২০২২ সালে শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসে ৬১MT-এর বেশি কঠিন বর্জ্য সংগ্রহের রেকর্ড রয়েছে যার বেশীরভাগ ক্রিসমাসের দিনগুলিতে জমা বর্জ্য (Christmas waste )।
এখন প্রশ্ন ক্রিসমাসের দিনগুলিতে বর্জ্য (Christmas waste) কমানোর উপায় কি?ক্রিসমাস ঐতিহ্যে আমরা এতটাই মজে থাকি যে টেকসই বিকল্পটি বেছে নেওয়া অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, বিশেষ করে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে। কিন্তু এই সময়টিতে যদি একটু সচেতনতার সাথে আমরা ১০০% পুনর্ব্যবহারযোগ্য বা বায়োডিগ্রেডেবল মোড়ানো কাগজ ব্যবহার করি, অন্যকোনও ধাতব বা চকচকে কাগজ এড়িয়ে তাহলে তা অনেকটাই পরিবেশ বান্ধব বিকল্প হতে পারে।
অবাঞ্ছিত উপহার চয়ন করার পরিবর্তে একটি জীবন্ত,পাত্রযুক্ত গাছ চয়ন করুন যা ছুটির পরে রোপণ করা যেতে পারে।আবার আপনি যদি একটি কৃত্রিম গাছ পছন্দ করেন তবে একটি উচ্চ মানের একটি কৃত্রিম গাছ বেছে নিন যা পরিবেশগত প্রভাব কমাতে বহু বছর ধরে ব্যবহার করা যেতে পারে।
খাবারের অপচয় কমাতে সাবধানে খাবার পরিকল্পনা করুন। পরে ব্যবহারের জন্য অবশিষ্টাংশ সংরক্ষণের জন্য রেফ্রিজেরিটার ব্যবহার করুন,অথবা অবশিষ্ট খাবার যাদের প্রয়োজন তাদের মধ্যে দান করে দিন। আপনার উৎসবের খাবারে আরও বেশী উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার অন্তর্ভুক্ত করার কথা বিবেচনা করুন।
ক্রিসমাসের দিনগুলিতে ভ্রমণের প্রয়োজন হলে কারপুলিং বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করুন। শিশুদের ক্রিসমাসের ঐতিহ্যের পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে শেখান এবং পরিবেশ-বান্ধব উৎসব পালনে তাদের জড়িত করুন।বর্জ্য হ্রাস এবং সম্পদ সংরক্ষণের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে তাদের দায়িত্ববোধকে উৎসাহিত করুন।
আরও পড়ুন
Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি
উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন