Durga Puja Economy এইবছর, ৫০,০০০, কোটি টাকার বেশী অঙ্ক ছুঁয়েছে

Durga Puja Economy এইবছর, ৫০,০০০, কোটি ছবি – উত্তরাপথ

উত্তরাপথঃ পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা (Durga Puja)মানে এক বিশাল অর্থনৈতিক লেনদেন।এই বছর দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে অর্থনীতি (Durga Puja economy) ৫০,০০০ কোটি টাকার বেশী অঙ্ক ছুঁয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে। রেস্তোরা এবং খুচরো দোকানগুলি গত বছরের তুলনায় এই বছর ২০% বেশী উপার্জন নিবন্ধন করেছে।গত বছর এই লেনদেন ৪০,০০০ কোটি টাকা ছিল বলে অনুমান ।২০২০ – ২১ সালে করোনা মহামারির কারণে দুর্গাপূজা পালনে প্রশাসন থেকে অনেক বাঁধা নিষেধ আরপ করা হয়েছিল ।কিন্তু এর আগে ২০১৯ সালে ৩২,০০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল বলে অনুমান। ব্রিটিশ কাউন্সিল, আইআইটি খড়গপুর এবং লন্ডনের “কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি এবং রাজ্য সরকার কর্তৃক পরিচালিত একটি সমীক্ষা দ্বারা ২০১৯ সালের চিত্রটি তুলে ধরা হয়েছে।

   বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ট্যাগ পাওয়ার পর, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক লেনদেন (Durga Puja economy),পর্যটকের উপস্থিতি আগের চেয়ে বেশি হয়েছে। কর্পোরেট হাউসগুলি আরও বেশি বিনিয়োগ করছে যা ক্লাবগুলিকে আরও বেশি স্পনসরশিপ এবং বিজ্ঞাপন থেকে আয় বাড়াতে সাহায্য করছে।তথ্যে প্রকাশ কলকাতায় ৩,০০০ টি পূজার মধ্যে প্রায় ১০টির গড় বাজেট ৫০ লাখ টাকার বেশি; ৭০টি পূজা প্রতিটি প্রায় ২৫-৫০ লাখ টাকা খরচ করে; ১০০টি পূজা প্রতিটি প্রায় ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে ; এবং বাকি পূজাগুলির বাজেট প্রায় ৫-১০ লক্ষ টাকা।পুজো কমিটিগুলির মতে কর্পোরেট বিজ্ঞাপন গত বছরের তুলনায় এবছর ২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তাদের বাজেট বাড়ানোর সুযোগ দিয়েছে।

 প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সারা রাজ্যে ৪০,০০০ টিরও বেশি দুর্গাপূজা ক্লাব রয়েছে । দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয় তিন-চার মাস আগে থেকে। দুর্গাপূজার এই প্রস্তুতির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত থাকে কমপক্ষে দুই-তিন লক্ষ লোক যা রাজ্যের অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দুর্গাপূজার (Durga Puja) সময় রাজ্যে ভারত সহ  বিদেশ থেকে বিশাল  সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে।উৎসবকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত সজ্জা, শৈল্পিক ভাস্কর্য এবং বিশাল শোভাযাত্রা পর্যটকদের আকর্ষণ করে ।পর্যটকদের এই বিশাল আগমন পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্পকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে।সেইসাথে হোটেল, গেস্টহাউস, রেস্তোরাঁ এবং পরিবহন পরিষেবাগুলিরও  চাহিদা বৃদ্ধি পায়,যা রাজ্যের রাজস্ব বৃদ্ধি সহ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে।

দুর্গাপূজা তার জটিল কারুকাজ করা মূর্তি এবং শৈল্পিক সজ্জার জন্য পরিচিত। উৎসবটি মৃৎশিল্পী, ভাস্কর, চিত্রশিল্পী এবং মণ্ডপ কারিগরদের তাদের দক্ষতা এবং কারুকার্য প্রদর্শনের জন্য একটি উপযুক্ত ক্ষেত্র প্রদান করে। প্রতিমা্র বিভিন্ন সাজসজ্জার সামগ্রীর চাহিদা এই  সময় তুঙ্গে থাকে । শোলা শিল্পের সাথে যুক্ত কারিগরদের জন্য এই সময় এক বিরাট বাজার তৈরি হয়, যা স্থানীয় শিল্পী এবং কারুশিল্পের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের এক উল্লেখযোগ্য কর্ম সংস্থান তৈরি করে। সারা বছর ধুকতে থাকা এই ক্ষেত্রটি উৎসবের মরসুমে সারা বছরের ক্ষতি পূর্ণ করে লাভের মুখ দেখে, যা রাজ্যের অর্থনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদান করে।

দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে লোকেরা প্রচুর নতুন জামাকাপড় এবং আনুষাঙ্গিক কেনাকাটায় লিপ্ত হয়। টেক্সটাইল এবং ফ্যাশন শিল্প এই সময় চাহিদা বৃদ্ধির সাক্ষী কারণ ব্যক্তিরা শাড়ি, কুর্তা-পাজামা এবং আনুষাঙ্গিক সহ ঐতিহ্যবাহী পোশাক ক্রয় করে। স্থানীয় তাঁতি, দর্জি এবং ডিজাইনারদের ব্যবসা এই সময় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পায়,যা বস্ত্র খাতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে।

খাদ্য পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপূজা(Durga Puja)উদযাপনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রাস্তার খাবারের বিক্রেতা, রেস্তোরাঁ এবং মিষ্টির দোকানগুলির বাইরে এই সময় লম্বা লাইন দেখা যায়। রসগোল্লা এবং সন্দেশের মতো ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের চাহিদা এই সময় বেশি হয়। খাদ্য ও আতিথেয়তা শিল্পও এই সময় চাহিদা বৃদ্ধির সাক্ষী, যা রাজ্যের সামগ্রিক বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।

পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা হল সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক এবং উদ্ভাবনী প্যান্ডেল (সজ্জিত অস্থায়ী কাঠামো) তৈরি করার জন্য বিখ্যাত। এখানে বিভিন্ন পূজা কমিটির মধ্যে এই নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতার একটি আনন্দময় পরিবেশ তৈরি হয়। এই সময় বিজ্ঞাপন এবং বিপণন সংস্থাগুলি এই প্যান্ডেলগুলির প্রচার এবং দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুর্গাপূজা এই সংস্থাগুলির জন্য তাদের সৃজনশীলতা এবং দক্ষতা প্রদর্শনের একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ প্রদান করে, যার ফলে তাদের এই সময় ব্যবসা এবং আয় বৃদ্ধি পায়।

দুর্গাপূজার অর্থনৈতিক (Durga Puja economy )প্রভাব নির্দিষ্ট শিল্পের বাইরেও বহু দূর বিস্তৃত। এটি বিপুল সংখ্যক লোকের জন্য অস্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। প্রতিমা তৈরি এবং প্যান্ডেল নির্মাণের সাথে জড়িত কারিগর এবং শ্রমিক থেকে শুরু করে অনুষ্ঠান সংগঠক, নিরাপত্তা কর্মী এবং পরিষেবা কর্মী, পুরোহিত, ঢাকি, প্রতিমা পরিবহনের সাথে জড়িত শ্রমিক এবং ‘ভোগ’ এবং খাবারের ব্যবস্থার সাথে যুক্ত ক্ষেত্র সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে,এবং অনেকের জন্য এটি সারা বছরের আয়ের এক উল্লেখযোগ্য উৎস ।

পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে দুর্গাপূজার (Durga Puja economy)প্রভাব যথেষ্ট।সেই সাথে দুর্গাপূজার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।আমাদের দেশের অর্থনীতিতে দুর্গাপূজার প্রভাব ব্রাজিলের অর্থনীতিতে রিও ডি জেনিরো কার্নিভাল এবং জাপানে চেরি ব্লসম উৎসবের অবদানের সমান বা বেশি। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি এই পুজাকে আরও বিশ্বজনীন করে তুলেছে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Scroll to Top