Indian Citizenship Act 6A; বিতর্কের মাঝে একনজরে ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন ৬এ

উত্তরাপথঃ ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন ৬ এ (Indian Citizenship Act 6A) যা নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ১৯৮৫ নামেও পরিচিত, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন যা আসাম রাজ্যে বসবাসকারী ব্যক্তিদের জন্য ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জন এবং নির্ধারণের সাথে সম্পর্কিত। ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন ৬ এ- (Indian Citizenship Act 6A) সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে হলে আমাদের ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তিতে ফিরে যেতে হবে।সেই সময় আসামে  ছয় বছর ধরে চলা আন্দোলনের ফলস্বরূপ, ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন ৬ এ।সেই সময় আইনটি রাজ্যে নাগরিকত্বের জটিল সমস্যার সমাধান এবং দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সমাধানের উপায় হিসাবে প্রণীত হয়েছিল।

এক নজরে ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন ৬ এ (Indian Citizenship Act 6A)

  ১। আইনটি মার্চ, ১৯৭১, আসামে ভারতীয় নাগরিকত্ব নির্ধারণের জন্য কাট-অফ তারিখ হিসাবে সেট করা হয়। এই তারিখের আগে ভারতে প্রবেশকারী ব্যক্তিরা নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য।   

২।  এটি বড় আকারের অভিবাসনের কারণে রাষ্ট্রের মুখোমুখি হওয়া অনন্য পরিস্থিতি এবং চ্যালেঞ্জগুলিকে বিবেচনা করে আইনটি নাগরিকত্ব অর্জনের প্রক্রিয়া সম্পর্কিত আসামের ব্যক্তিদের জন্য কিছু শিথিলকরণ এবং ছাড় দেওয়া হয়।

৩।   আইনটি ১ জানুয়ারী, ১৯৬৬ থেকে  ২৪ মার্চ,১৯৭১-এর মধ্যে আসামে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিদের জন্য জন্মসূত্রে নাগরিকত্বকে স্বীকৃতি দেয় ৷ এই বিধানটি সেই সময় অসমে চলতে থাকা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে আসামে জন্মগ্রহণকারীদের উদ্বেগের সমাধান করার লক্ষ্যে করা হয়।

 ৪। আইনটি এমন ব্যক্তিদের অনুমতি দেয় যারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আসামে তাদের বসবাস প্রমাণ করতে পারবে।শুধুমাত্র সেই সমস্ত ব্যক্তিরা নিবন্ধনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে।

৫। আইনটি কিছু সম্প্রদায়কে বাদ দেয়, যেমন বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের আসামে ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জন থেকে। এই বর্জন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে অভিবাসন সম্পর্কিত নির্দিষ্ট উদ্বেগের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল।

বিতর্ক এবং সমালোচনা:

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ নাগরিকত্ব আইনের ধারা ৬ এ(Indian Citizenship Act 6A) এর সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে যে পিটিশন সুপ্রীম কোর্টে জমা পড়েছে তার শুনানি করছে। সেখানে বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ এই বিষয়ে শুনানি করছেন। ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ছাড়া বেঞ্চে রয়েছেন আরও চার জন ,তারা হলেন বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি এমএম সুন্দরেশ, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র। সুপ্রীম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ সামনে নিয়ে এসেছে।

১। ভারতের আইনে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কোনো বাধ্যকতা না থাকলেও কেন নাগরিকত্ব আইনের ৬ এ ধারায় সাবেক পূর্ব পাকিস্তান থেকে ১লা জানুয়ারি ১৯৬৬ থেকে ২৫শে মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত অসমে প্রবেশ করা বাংলা-ভাষী শরণার্থীদের জন্যে নাগরিকত্বের ব্যবস্থা করা হয়েছে ?

২। পশ্চিমবঙ্গে আসা বাঙালি শরণার্থীদের নাগরিকত্ব কেন দেওয়া হয়নি সে কথাও তুলেছে সুপ্রীম কোর্ট।  এই শুনানির সময়ে বেঞ্চ ইউনিয়ন সরকারের কাছে অসমে ৬ এ ধারায় কতজন উদ্বাস্তু বাঙালি নাগরিকত্ব পেয়েছেন সে তথ্য জানতে চেয়েছে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে

উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top