

উত্তরাপথঃ সম্প্রতি জার্মান থিঙ্কট্যাঙ্ক দ্বারা প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (২.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) সীমিত করার লক্ষ্য পূরণ করতে, নয়টি প্রধান এশিয়ান অর্থনীতিকে ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি (Renewable Energy) থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুতের অংশ বর্তমানে ৬% থেকে কমপক্ষে ৫০% বৃদ্ধি করতে হবে।বার্লিন-ভিত্তিক অ্যাগোরা এনার্জিওয়েন্ডের গবেষকদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই নবায়নযোগ্য শক্তির(Renewable Energy) প্রায় এক তৃতীয়াংশ বায়ু এবং সৌর শক্তি থেকে আসা উচিত এছাড়াও জলবিদ্যুৎ এবং অন্যান্য পরিষ্কার উৎস এবং অবশিষ্টাংশ জীবাশ্ম জ্বালানী ।
গবেষণায় ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির শক্তি পরিকল্পনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে যেখানে শক্তির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে এবং জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ধনী দেশ যেখানে মাথাপিছু গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি রয়েছে।এছাড়াও গবেষণায় উঠে এসেছে বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ চীন বা অন্য প্রধান অবদানকারী দেশ ভারতের প্রসঙ্গ ।
প্রাক-শিল্পকাল থেকে ১.৫C (২.৭F) বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে জলবায়ুর একটি প্রান্তিক মান হিসাবে বিবেচনা করা হয় যার থেকে বেশী হলে বিপর্যয়ের ঝুঁকি বেড়ে যায়। জাতিসংঘের পূর্ববর্তী একটি বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন অনুসারে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে বিশ্ব সম্ভবত তার বেশিরভাগ প্রবাল প্রাচীর হারাবে, একটি মূল বরফের শীট অপরিবর্তনীয় গলে যেতে পারে এবং জলের ঘাটতি, তাপ তরঙ্গ এবং চরম আবহাওয়া থেকে মৃত্যু বাড়তে পারে।
Agora Energiewende গবেষকরা দেখেছেন যে এশিয়ান দেশগুলি জীবাশ্ম জ্বালানির উপর তাদের অত্যধিক নির্ভরতার কারণে তাদের সরকার কর্তৃক ঘোষিত জাতীয় পরিকল্পনাগুলি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতির সাথে সংযুক্ত নয়।Agora Energiewende-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রকল্পের প্রধান ম্যাথিস রগনারের মতে, এক্ষেত্রে বায়ু এবং সৌর শক্তির মতো প্রমাণিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে, দেশগুলি তাদের জীবাশ্ম জ্বালানী পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ সীমিত করতে পারে। জীবাশ্ম জ্বালানির নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করা এড়াতে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত নয়টি দেশকে প্রতি বছর ৪৫ থেকে ৫৫ গিগাওয়াট সৌর শক্তি এবং ২০ গিগাওয়াট বায়ু শক্তি উৎপাদন করতে হবে। ২০২১ সালে, তারা মোট মাত্র ১১.৯ গিগাওয়াট সৌর শক্তি এবং ১.৫ গিগাওয়াট বায়ু শক্তি তৈরি করেছিল। গবেষণায় জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং তাইওয়ানের জ্বালানি পরিকল্পনা পর্যালোচনা করা হয়েছে।
জাতিসংঘের একটি বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে যে জলবায়ুর পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পদক্ষেপের পরিকল্পনাগুলি এখনও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে্ । ২০১৬ সাল থেকে বিশ্ব যে পরিচ্ছন্ন শক্তি ব্যবহারের কথা বলেছে তার বেশিরভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ভারতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। যদিও বায়ু এবং সৌর প্রযুক্তি প্রতি বছর সস্তা হচ্ছে, অন্যান্য এশিয়ান দেশগুলির মধ্যে, শুধুমাত্র জাপান এবং ভিয়েতনাম বায়ু এবং সূর্য থেকে তাদের ক্ষমতার দশমাংশেরও বেশি আহরণ করে।
জাতিসংঘের দীর্ঘস্থায়ী শক্তি ইউনিট সাসটেনেবল এনার্জি ফর অল-এর চিফ অফ স্টাফ কণিকা চাওলা বলেছেন, চীনা এবং ভারতীয় পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির(Renewable Energy) ব্যবহার বৃদ্ধি কিছুটা হলেও অন্যান্য এশিয়ান দেশগুলি অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। তবে এই ধরনের পরিবর্তন কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে বলে তিনি মনে করেন এবং শক্তি নিরাপত্তা উন্নত করতে পারে, চাওলা বলেছেন, যিনি প্রতিবেদনে জড়িত ছিলেন না।অনেক দেশ এখনও বৃহৎ জলবিদ্যুৎ বাঁধের উপর খুব বেশি নির্ভর করে, যার মধ্যে প্রচুর সামাজিক এবং পরিবেশগত খরচ জড়িত হতে পারে এবং খরার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়া প্রত্যেকের বার্ষিক ৮ থেকে ১৪ গিগাওয়াট সৌর শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্য রাখা উচিত। যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক এম্বারের একটি সমীক্ষা অনুসারে ইন্দোনেশিয়া এখন বায়ু এবং সৌর শক্তি থেকে তার ১% এরও কম শক্তি পায়। দক্ষিণ কোরিয়া এবং থাইল্যান্ড এখনও জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভর করে।
দশকের শেষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে জাপানকে বছরে গড়ে ৯ গিগাওয়াট এবং ভিয়েতনামকে প্রায় ১০ গিগাওয়াট সৌরশক্তি উৎপাদন করতে হবে। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে লক্ষ্যগুলি অর্জনযোগ্য কারণ উভয় দেশই অতীতে একই রকম উৎপাদন করেছে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং ফিলিপাইনকে তাদের গ্রিডে প্রতি বছর সূর্য থেকে ১ থেকে ৩ গিগাওয়াট শক্তির উৎপাদন যোগ করতে হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার বায়ু শক্তিতে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি প্রয়োজন – প্রতি বছর গড়ে ৮ গিগাওয়াট বৃদ্ধি করতে হবে যেখানে জাপানকে প্রায় ৩ গিগাওয়াট যোগ করতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিয়েতনামের নতুন বায়ু শক্তি ক্ষমতায় প্রায় ৪ গিগাওয়াট স্থাপন করা উচিত।অন্যান্য দেশে বায়ু শক্তির কম সম্ভাবনার অর্থ হল তাদের প্রতি বছর এক থেকে ২ গিগাওয়াট লক্ষ্য করা উচিত।
প্রতিবেদনে বায়ু এবং সৌর শক্তিতে স্থানান্তরকে দ্রুত করার জন্য একটি “দৃষ্টান্ত পরিবর্তন” করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মধ্যে তেল এবং গ্যাসের জন্য ভর্তুকি অপসারণ করা অন্তর্ভুক্ত থাকবে যা পুনর্নবীকরণযোগ্যকে শক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করবে।সেই সাথে পুনর্নবীকরণযোগ্যকে শক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে আমলাতান্ত্রিক বাধাগুলি যেমন পারমিট এবং বিনিয়োগকে সহজতর করে তোলার কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে
উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন