এক প্রদীপ এর আত্মকথা

তারক নাথ নাগঃ আজ দীপাবলি অর্থাৎ বাঙালি দের কালীপুজো। আলোর রোশনাই এর উৎসব। সমস্ত কালো অন্ধকারকে মুছে ফেলে নতুন সূর্যের আলো তে আলোকিত হওয়ার উৎসব। তাই আজ সকাল থেকেই ছোট্ট প্রদীপ টি বেশ উৎসাহিত এবং আনন্দিত। সারাদিন সে আপন মনে ভেবে চলেছে আজ সন্ধ্যে হলেই সে এক সুন্দর দায়িত্ব পালনে নেমে পড়বে। সমস্ত অন্ধকার কে মুছে ফেলে সে সকল কে আলো দেবে। কিন্তু পরক্ষনেই তার মনে এক গভীর চিন্তার রেখা দাগ কেটে চলে যায়, আপন মনে ভাবতে থাকে সে তো নিজে থেকে আলো দিতে পারবে না। যতক্ষণ না তাকে কে কেউ তেল সলতে দিয়ে সাজিয়ে না দেয়। সে ভাবতে থাকে এ কেমন অদৃষ্টের খেলা। নিজে থেকে ভালো কাজ করতে চাইলেও অপরের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। সে নিজেই মনে মনে বলতে থাকে “হে ঈশ্বর এ তোমার কেমন লীলা”। আবার ভাবতে থাকে এসব ভেবে লাভ নেই। নিশ্চয় তাকে আজ কেউ সলতে নামের অলঙ্কার দিয়ে সাজিয়ে দেবে। তেল দিয়ে তাতে প্রাণের সঞ্চার ঘটাবে। এই সব ভাবতে ভাবতে কখন সে ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় এক জোরালো শব্দে। সবার হৈ হুল্লোর এ। সূর্য কখন যেনো অস্তাচলে গেছে। চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। এই তো তার জ্বলে ওঠার সময়। কিন্তু কাউকে তো দেখতে পাচ্ছে না সে। অবশেষে তার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হওয়ার সময় এলো। ইশ্বর যেনো তার দিকে চোখ মেলে তাকালেন। কেউ এসে তাকে কোলে তুলে নিয়ে গেলো গান শোনাতে শোনাতে। তারপর সে সাজলো। সমস্ত প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে তার হৃদয় বিদীর্ণ করে বেরিয়ে এলো অগ্নিশিখা। যা দিয়ে সে দুর করতে চেয়েছে সমস্ত অন্ধকার কে। হাসি ফুটলো তার মুখে, হঠাৎ সে দেখলো। আশেপাশের সবই তার আলোয় আলোকিত, কিন্তু সে তার নিজের তলদেশ দেখে বুঝতে পারে পুরো অন্ধকার। আলোর বিন্দু মাত্র ছটাও নেই। দুঃখে, বেদনায় সেই ছোট্ট প্রদীপের মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। সে ভেবে পায়না, যে বাসনা নিয়ে সমস্ত পৃথিবী বাসীর দুঃখ কষ্টের অন্ধকার এর অবসান ঘটিয়ে নতুন আলোয় আলোকিত করার পণ করেছে। অথচ সে নিজের জীবনের অন্ধকার দুর করতে ব্যর্থ।
সে বলতে থাকে “হে ঈশ্বর এ তোমার কেমন বিচার”।
ঠিক তখন ই আরেক অন্য প্রদীপ তার কাছে এসে হাতে হাত রেখে বলে দুঃখ করোনা বন্ধু আমি আছি তোমার পাশে, তুমি যেমন ভাবে অন্যকে আলোকিত করো, তোমার জীবন কে আমি আলোকিত করবো, সারা জীবনে যতই ঝড় ঝাপটা আসুক, ছেড়ে যাব না কখনো, দুজনের মুখে হাসি ফুটে, নতুন জীবন শুরু করে।

হঠাৎ ভোর হয়, দুই প্রদীপ এর ই তেল শেষ হয়ে যায়, তারা নিভে যায়। আবার অন্ধকারে চারিদিক ঢাকা পড়ে যায়। সাথে সাথে তাদের একসাথে জীবন কাটানোর প্রতিশ্রুতি ও এক গভীর অন্ধকারে বিলীন হয়ে যায়।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top