কথোপকথন: হঠাৎ একদিন


অসীম পাঠকঃ চরিত্র – অরিত্র ও অরুনিমা
স্থান – কোলকাতা কলেজ স্ট্রিট

অরুনিমা- আরে অরিত্র বাবু যে

অরিত্র- এ কি , ভুল দেখছি না তো?

অরুনিমা- আজ্ঞে না , আপনার ভুল দেখার কোন কারন নেই , তবে আমি ভূত দেখছি

অরিত্র- এই পেত্নী চুপ একটাও বাজে কথা বলবে না।

অরুনিমা- এই শোনো একটা মার ও মাটিতে পড়বে না , খুব তো মজা , বেশ ঘুরে বেড়াচ্ছো।

অরিত্র- ও আর তুমি বুঝি মঙ্গল গ্রহের জীব।

অরুনিমা- না না না কি যে বলেন অরিত্র বাবু , আপনি তো একমাত্র মানুষ যার বিষাদ ছাড়া আর অবশিষ্ট কিছু নেই।

অরিত্র- বিষাদ হয়তো আমার লেখায় থাকতে পারে , সে শুধু শব্দের মধ্যেই বন্দী। আর আমি ভালোবাসার পরিপূর্ণ বিষাদ বিলিয়ে আজ অনেক ক্লান্ত। আমার স্বপ্নের গভীরে মঞ্জরিত আমার উজ্জ্বল প্রেম।

অরুনিমা- তা ফ্রেমবন্দী সেই প্রেমের ঘ্রান আপনার মুখে খুদ গুঁড়োর মত লেগে থাক এ যুগের জীবনানন্দ।

অরিত্র- আমার সাথে ঝগড়া করতেই কি এতটা পথ এলে , চলো কফি হাউসে যাই ।

অরুনিমা- থাক তোমার দৌড় জানা আছে।

অরিত্র- ধূলোমাখা অতীত হাতড়ে শুধু একজনকেই পাই। আমি যে তার প্রেমে মগ্ন মৈনাক।

অরুনিমা- এই , একদম না। এসব কথা তোমার এক্সদের বলো। আমাকে পটাতে আসবে না।
তোমাকে চিনতে আমার বাকি নেই।

অরিত্র- এক্স ওয়াই জেড সব তো ক্ষনিকের মুহূর্ত ।
কিন্তু নীহারীকা স্থির উজ্জ্বল , সে আমার নীহারীকা।

অরুনিমা- আচ্ছা সে কে ? ও বুঝেছি তোমার কলেজের সেই ….

অরিত্র- সবই তো বোঝেন আপনি।

অরুনিমা- বুঝতে হচ্ছে অরিত্র বাবু।

অরিত্র- চলো না একটু বসি ।

অরুনিমা- গোটা পৃথিবীটা বসে বসে ঝিমুচ্ছে, সব যেনো কবিতার ফেরিওয়ালা।

অরিত্র- কবিতা আমার জীবনবোধ তবুও তাকে ভুলে থাকি , তাই বলে কি ভালোবাসি না ?

অরুনিমা- কে জানে বাপু , তোমার ভালোবাসা তুমিই জানো ।

অরিত্র আর জানে সেই মেয়ে।

অরুনিমা- আচ্ছা বলো তো এতদিন ফোন ধরোনি কেনো ? একটা মেসেজ নেই কল নেই। ঠান্ডা ঘরে ভালোবাসার ফাইল পাঠিয়ে দাবানলের দহন জ্বালায় তুমি কি কবিতা লিখছিলে ?

অরিত্র- না , লিখিনি কিছুই ।

অরুনিমা- তাহলে কার ধ্যানে বিভোর থেকে মহাকবি বাল্মীকী হয়ে উঠছিলে ?

অরিত্র- আমার চিন্তা চেতনা সব একজনকে ঘিরেই। সে আমার স্বপনচারিনী , গোপনচারিনী।

অরুনিমা- ও তাই , আমি ভাবলাম সে তোমার মাথাব্যাথার কারন , মন খারাপ অকারন।

অরিত্র- মন্দ বলোনি , এই পেত্নী শোনো , জানো কতবার তোমাকে চেয়েছি , কতবার আমার স্বপ্নে এসেছো।

অরুনিমা- তাই বুঝি পালাতে চাইছিলে ? ভালোবাসা বোঝবার মত ক্ষমতা তোমার নেই। কি করে বুঝবে , আসলে এতো স্বার্থপর আর হিংসুটে তুমি ….

অরিত্র- ঠিক।

অরুনিমা- ঠিক এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে তুমি অনেক ক্লান্ত। যেনো প্রবল সুনামির পর টিকে থাকা একটা দ্বীপ। তোমার ভেতরে কথারা সব গভীর ঘুমে। তুমি চেয়ে আছো কালো রাতের শেষে একটুকরো রোদের জন্য। আমি সেই রোদ মেলে ধরলাম তোমার চোখের সামনে।

অরিত্র- কি সুন্দর করে বললে, তুমি এমনিতেই আমার চোখে অনন্ত রূপসী। এই কল্লোলিনী তিলোত্তমার বুকে তুমি আমার সেই প্রেম , যে প্রেম মনে করিয়ে দেয় মানুষ শুধু কামনা বাসনা বিকৃতির মাংস পিন্ড নয়, অনেক বড়ো তার চাইতে।

অরুনিমা- চলো গঙ্গার পাড়ে যাবো। বেলাশেষের মায়াবী আলোয় এটুকুই আমার নিজের করে পাওয়া।

অরিত্র- জানতাম , একদিন ঠিক তুমি আসবে সব অবগুণ্ঠন সরিয়ে বাস্তবের রুক্ষ জীবনে।

অরুনিমা- সাহিত্যের শক্ত ভাষা রাখোতো , আমি তোমার লেখাকে ভালোবেসেছি ঠিক ই , কিন্তু বুঝেছি তুমি মানুষটা মন্দ নও, একটু আবেগের তবে কঠিন নও।

অরিত্র- তা এই মানুষটার ভুল গুলও শুধরে দিয়ে তুমি কি পারো না তার চওড়া বুকে মাথা রাখতে?

অরুনিমা- কেনো পারিনা , সে চাইলেই পারি।

অরিত্র- চলো , নির্মল প্রানের প্রবাহ যে গঙ্গায় সেই পথে যেতে যেতে কবিতার সব পান্ডুলিপি ভুলে তোমার চোখে আমার জীবনের কবিতা খুঁজি।

অরুনিমা- এই আমি সতীন নিয়ে ঘর করতে পারবো না কিন্তু। তোমার কবিতা রাখো। এরপর যদি পালাবার চেষ্টা করেছো তাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন। চিরতরে আমি পালাবো আর খুঁজেই পাবে না।

অরিত্র- কোথায় আর যাবো , যেখানে যত দূরেই যাই তুমি তুমি তুমি … অনন্ত নীলিমায় শুধু তুমি।

অরুনিমা আমি ,আমিই সব। এই আমি যা খুশী বলবো , মেজাজ দেখাবো, সব সহ্য করে পারবে তো আমার হাতটা এইভাবে ধরে রাখতে ?

অরিত্র পারবো।

অরুনিমা- ভালোবাসি একথা টি বারবার বলতে নেই নজর লেগে যায়। যে আছে মনের গভীরে তাকে আর কোথায় রাখবো?

অরিত্র- তোমার সব অভিযোগ মেনেও বলি তুমি আমার সাধনার ধন আর আরাধনার প্রাপ্তি। চলো আজকের মায়াবী সন্ধ্যাটা গঙ্গার বুকে কাটাই, তুমি প্রান খুলে গাইবে আমার পরান যাহা চায় ….

অরুনিমা- আর তোমার কাছে শুনবো হাজার বার শোনা সেই চেনা কবিতাটা , হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে পথে।

অরিত্র- সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে।

অরুনিমা- আমাদের নিবিড় নৈকট্যের সাক্ষী এই রাজপথ , ধূলোমাখা ফুটপাত অরন্যরাজি সমুদ্র নীল আকাশ।

অরিত্র- সেটাই তো, কোথা থেকে মুছবো তোমায় প্রেয়সী। আমার পরিপূর্ণ নিঃশ্বাসে তোমার বিশ্বাস ,
হৃদয়ের অতলান্তে তোমার
নীরব বিস্তার। তোমার সবঢ়কটা পাপড়ি উন্মুক্ত দিগন্তের নীলিমায় মেলেছে ডানা। আমি শুধু তোমার বয়ে চলা আর উড়ে যাওয়া দেখি। তোমার বিস্তারেই আমার অনুভতির আনন্দ।

অরুনিমা- অস্ত গোধূলির সন্ধ্যারাগে চলো দূরে দিগন্ত রেখায়
রেখে আসি কিছু কথার মালা।
মোহময় অনুভূতি আর নিঃসীম দিগন্তে যেনো নতুন অঙ্গীকার।
ভালোবাসার সীমানা হয় না ,
হয় না সমীকরন। অকথিত আলোর মুহুর্ত রামধনু রঙিন থাক
এ জীবনের প্রান্তরেখায়।

[দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে, দুজনের চোখেই জল।]

      
খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে

উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top