

উত্তরাপথঃ উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম লবণাক্ত জলের হ্রদ, গ্রেট সল্ট লেক, সঙ্কুচিত হচ্ছে। ২০২২ সালে, এর জলস্তর সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। যা উটাহের মানুষের জন্য অনেক সমস্যার সৃষ্টি করছে।গ্রেট সল্ট লেক এই অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি যেমন এই অঞ্চলের মানুষের জন্য কর্মসংস্থান এবং আয়ের ব্যবস্থা করে, তেমনি এটি প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল । হ্রদটি নিকটবর্তী পাহাড়ে তুষার তৈরিতেও সাহায্য করে।
পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটির নতুন গবেষণা হল প্রথম বিশদ গবেষণা যেখানে হ্রদের জলস্তর কেন এত কমে যাচ্ছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এই প্রবণতা কীভাবে কম করা যাবে তা অন্বেষণ করা হয়েছে। পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দেখেছেন যে হ্রাসের প্রধান কারণ হল হ্রদে কম জল প্রবাহিত হচ্ছে (খরা, জলের বিচ্যুতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে) এবং উষ্ণ তাপমাত্রার কারণে হ্রদ থেকে আগের থেকে অনেক বেশী জল বাষ্পীভূত হচ্ছে।
বিগালকে এবং তার সহকর্মীরা সময়ের সাথে সাথে হ্রদের জলস্তরের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করার জন্য একটি মডেল তৈরি করেছেন। তাদের মতে হ্রদে কম জল প্রবাহিত হচ্ছে সবচেয়ে বড় সমস্যা। এর ফলে হ্রদের দুই-তৃতীয়াংশ জল হ্রাস পেয়েছে। বাকি এক-তৃতীয়াংশ উষ্ণ তাপমাত্রা থেকে বাষ্পীভবনের কারণে কম হচ্ছে। জলবায়ু উষ্ণ হতে থাকলে, বাষ্পীভবন বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে হ্রদের জলের স্তর আরও কমে যাবে।
তারা দেখেছেন যে হ্রদের প্রধান নদীগুলির জলপ্রবাহ কমে যাওয়া হ্রদের আকার হ্রাসের একটি প্রধান কারণ। সম্ভবত খরা, জল অন্য ব্যবহারের জন্য সরিয়ে নেওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এটি হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে হ্রদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাসের জন্য জলপ্রবাহ কমে যাওয়া দায়ী, বাকি অংশটি ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে বাষ্পীভবন বৃদ্ধির কারণে।
আরেক গবেষক লোইকিথ উল্লেখ করেছেন, “জলবায়ু উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে হ্রদ থেকে আরও জল বাষ্পীভূত হয়। এই উষ্ণতা না থাকলে, ২০২২ সাল হ্রদের জন্য এত কম বছর হত না। যদিও জলপ্রবাহের অভাবই প্রধান সমস্যা, বাষ্পীভবন এই রেকর্ড সর্বনিম্নে পৌঁছাতে বড় ভূমিকা পালন করেছে।”
গবেষকরা জোর দিয়েছিলেন যে জলপ্রবাহের উন্নতি স্বল্পমেয়াদে হ্রদকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করতে পারে, তবে চলমান উষ্ণায়নের সাথে সাথে, বাষ্পীভবন সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদে জল হ্রাস করতে থাকবে।
সঙ্কুচিত হ্রদটি সল্টলেক সিটি এলাকায় বসবাসকারী ১.২ মিলিয়ন মানুষের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিও তৈরি করছে। হ্রদটি সঙ্কুচিত হওয়ার সাথে সাথে এর শুষ্ক স্তর আরও উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে বাতাসে ধুলোবালির পরিমাণ বেড়ে, যা বায়ুর গুণমানকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে বলে গবেষকদের ধারনা।
**কী করা যেতে পারে?** সমস্যা সমাধানের জন্য, গবেষকরা স্থানীয় আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং মানুষের ক্রিয়াকলাপ হ্রদের জলের প্রবাহকে কীভাবে প্রভাবিত করছে তা অধ্যয়ন এবং বোঝার পরামর্শ দিয়েছেন। যা হ্রদ পুনরুদ্ধারের সর্বোত্তম সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
সূত্রঃ “Explaining the 2022 Record Low Great Salt Lake Volume” by Siiri Bigalke, Paul Loikith and Nicholas Siler, 21 January 2025, Geophysical Research Letters.
DOI: 10.1029/2024GL112154
আরও পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে
উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন