টেফলনের বিকল্প? এই আবিষ্কার বদলাতে পারে রান্নার পাত্রের ভবিষ্যৎ

উত্তরাপথঃ টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের Faculty of Applied Science & Engineering–এর গবেষকেরা এমন এক নতুন উপাদান তৈরি করেছেন, যা রান্নার বাসন সহ বিভিন্ন দৈনন্দিন জিনিসে ব্যবহৃত প্রচলিত নন-স্টিক কোটিংয়ের তুলনায় অনেকটা নিরাপদ হতে পারে। এই নতুন কোটিং জলের মতোই তেল বা চর্বিকেও সহজে প্রতিহত করতে সক্ষম, অথচ এতে প্রচলিত ক্ষতিকর PFAS (per- and polyfluoroalkyl substances)–এর মাত্রা অনেক কম।

টেফলন ও PFAS-এর বিজ্ঞান

১৯৩০-এর দশকে তৈরি হওয়া টেফলন (PTFE) রান্নার পাত্রে বিপ্লব ঘটায়। টেফলন PFAS পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, যেখানে কার্বন-ফ্লোরিনের শক্তিশালী বন্ধন থাকে। এই বন্ধন ভাঙা প্রায় অসম্ভব, তাই টেফলন খুব ভালো নন-স্টিক বৈশিষ্ট্য দেখায়। কিন্তু এই রাসায়নিক ভেঙে না গিয়ে পরিবেশে থেকে যায় বহু বছর ধরে—তাই একে বলা হয় “forever chemicals”

PFAS শুধু টেকসইই নয়, জীবদেহেও জমতে থাকে। খাদ্যশৃঙ্খল ধরে এগোতে এগোতে এর ঘনত্ব আরও বেড়ে যায়। গবেষণা বলছে, দীর্ঘদিন PFAS–এর সংস্পর্শে থাকলে ক্যানসার, জন্মগত ত্রুটি, এমনকি অন্যান্য জটিল স্বাস্থ্যসমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।

বিকল্প খোঁজার চেষ্টা

গবেষক দলটি এবার ব্যবহার করেছে PDMS (polydimethylsiloxane) নামক উপাদান, যা সাধারণভাবে ‘সিলিকন’ নামে পরিচিত। সিলিকন অনেক ক্ষেত্রে জীবদেহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ (যেমন: চিকিৎসায় ইমপ্লান্টে ব্যবহৃত হয়), কিন্তু এতদিন পর্যন্ত PFAS–এর মতো সিলিকনের ক্ষেত্রে কার্যকর তেল-প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখা যায়নি।

এই সীমাবদ্ধতা কাটাতে গবেষক স্যামুয়েল আউ তৈরি করেছেন নতুন এক প্রযুক্তি—ন্যানোস্কেল ফ্লেচিং”। এখানে PDMS–এর ক্ষুদ্র শিকল (bristles) একটি বেস উপাদানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এরপর প্রতিটি শিকলের প্রান্তে যুক্ত করা হয় PFAS–এর সবচেয়ে ছোট অণু, যা এক কার্বনের সঙ্গে মাত্র তিনটি ফ্লোরিন নিয়ে গঠিত। এর ফলে তৈরি হয় তীরের পালকের মতো গঠন, যা জলের পাশাপাশি তেলও প্রতিহত করতে পারে।

পরীক্ষায় সাফল্য

নতুন কোটিং কাপড়ের ওপর প্রয়োগ করে বিভিন্ন তেলের ফোঁটা ফেলা হয়। পরীক্ষার ফল অনুযায়ী এটি আমেরিকান টেক্সটাইল কেমিস্টদের নির্ধারিত মানদণ্ডে ৬ নম্বর পেয়েছে—যা প্রচলিত PFAS কোটিংয়ের সমতুল্য।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এখানে যে PFAS ব্যবহার করা হয়েছে তা সবচেয়ে ছোট অণু, যা দেহে জমা হয় না এবং তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। অর্থাৎ, প্রচলিত দীর্ঘ-শৃঙ্খল PFAS–এর মতো বিপজ্জনক নয়।

গবেষকরা মনে করছেন, এই প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হলে রান্নার বাসন থেকে শুরু করে দৈনন্দিন বহু পণ্যে PFAS–এর ব্যবহার অনেকটাই কমানো যাবে। যদিও এখনও সম্পূর্ণ PFAS-মুক্ত কার্যকর বিকল্প পাওয়া যায়নি, এই গবেষণা সেই দিকেই এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

“Nanoscale fletching of liquid-like polydimethylsiloxane with single perfluorocarbons enables sustainable oil-repellency” by Samuel Au, Jeremy R. Gauthier, Boran Kumral, Tobin Filleter, Scott Mabury and Kevin Golovin, 23 July 2025, Nature Communications.
DOI: 10.1038/s41467-025-62119-9

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়

উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে।  সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে

উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে

উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে   ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি  গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ  ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top