দৈনিক ২২ মিনিটের কাজকর্ম আমাদের দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার প্রভাব কম করতে পারে

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার প্রভাব কম করতে দৈনিক ২২ মিনিটের কাজকর্ম ছবি – উত্তরাপথ

উত্তরাপথঃ অত্যধিক বসে কাজ আমাদের বেশিরভাগের জন্য বর্তমানে একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে সেই সমস্ত চাকরির সাথে যুক্ত লোকেদের যাদের দীর্ঘ সময় অফিসে টানা বসে কাজ করতে হয়।দীর্ঘ সময় এক টানা বসে কাজ আমাদের স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে এই কথা আমরা বারবার শুনেছি, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যায়াম বা কাজকর্ম আমাদের দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার প্রভাব মোকাবেলায় সাহায্য করতে পারে।

ব্রিটিশ জার্নাল অফ স্পোর্টস মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে যে ২২ মিনিটের মাঝারি থেকে জোরালো কাজকর্ম বা ব্যায়াম আপনার স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন যে একজন ব্যক্তি যত বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কার্যকলাপে জড়িত থাকে যেকোনো রোগে অকালে  তার মৃত্যুর ঝুঁকি ততটাই কমে যায়।এটিকে সঠিক ভাবে পরিমাপ করার জন্য গবেষকরা অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকার লাগানো লোকেদের চারটি পৃথক গ্রুপে বিভক্ত করেন, যাতে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বসে থাকা সময় এবং মৃত্যুর মধ্যে সম্পর্ককে সঠিক ভাবে পরিমাপ করা যায়।

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার প্রভাব পর্যবেক্ষণের জন্য গবেষকরা দুই বছর ধরে সুইডেন, নরওয়ে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের  কমপক্ষে ৫০ বছর বয়সী ১২,০০০ জন লোককে বিশ্লেষণ করেন। অংশগ্রহণকারীরা ন্যূনতম চার দিনের জন্য প্রতিদিন ১০ ঘন্টা তাদের নিতম্বে মুভমেন্ট ডিটেকশন ডিভাইস পরেছিলেন এবং টানা ২ বছর ধরে গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।গবেষনায়  লিঙ্গ, শিক্ষাগত স্তর, ওজন, উচ্চতা, ধূমপানের ইতিহাস, অ্যালকোহল গ্রহণ, এবং তাদের বর্তমান এবং/অথবা পূর্ববর্তী কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ক্যান্সার এবং/অথবা ডায়াবেটিস সহ যাবতীয় বিষয় কে মাথায় রেখে গবেষকরা এই পর্যালোচনা করেন।

অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকার ডেটার বিশ্লেষণে দেখা গেছে যারা প্রতিদিন ৮ ঘন্টা বসে থাকে তাদের তুলনায় যারা দৈনিক ১২ ঘন্টার বেশি সময় বসে থাকেন তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৮% বেড়ে যায় । তবে শুধুমাত্র তাদের মধ্যে  এই ঝুঁকি কম যারা দৈনিক ২২ মিনিটেরও কম সময় ধরে মাঝারি থেকে জোরালো শারীরিক কার্যকলাপে যুক্ত ছিল।

এটি একটি পর্যবেক্ষণমূলক অধ্যয়ন ,এখানে অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকারগুলি সমস্ত কার্যকলাপের ধরন এবং তাদের সংশ্লিষ্ট তীব্রতা সঠিকভাবে শ্রেণীবদ্ধ করতে পারেনি – উদাহরণস্বরূপ সাইক্লিং, বাগান করা বা বসে কিছু ব্যায়ামকে। তবুও, গবেষকরা উপসংহারে পৌঁছেছেন অল্প পরিমাণে মাঝারি থেকে জোরালো শারীরিক কার্যকলাপ বেশী সময় ধরে বসার ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি কমানোর জন্য একটি কার্যকর কৌশল হতে পারে, মাত্র ২২ মিনিটের বেশি মাঝারি থেকে জোরালো শারীরিক কার্যকলাপ বেশী সময় ধরে বসে থাকার ঝুঁকি দূর করে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে

উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে   ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি  গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ  ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top