মৈত্রেয়ী চৌধুরী


তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে সুধাময়ের সংসার। ছেলে আকাশ পড়াশোনা করে, ভালো রেজাল্ট ও করে। তারপর সুজাতা, মেয়েটি ছোট থেকে কথা বলতে পারে না,কারণ ছয় বছর বয়সে চোখের সামনে বাসের ধাক্কায় মায়ের মৃত্যু দেখে কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।তাই ঘর সংসারের সব দায়দায়িত্ব তার কাঁধে। ছোট মেয়ে মায়া, যেমন নাম তেমনি চেহারা, চোখদুটো মায়ামাখা,ওকে দেখে আদর না করে পারা যায় না,তবে অসম্ভব দুরন্ত। চার মাস বয়সে সে তার মাকে হারিয়েছে।তাই মা কি, সে বেচারি বুঝতে ই পারে নি।
পাড়ার স্কুলের মাস্টার সোমনাথ বাবু পেছন থেকে ডাক দিল ও সুধাময় বাবু আর তো পারা গেলো না। পরপর দুই বছর হয়ে গেল মায়া সপ্তম শ্রেণীতে রয়েছে। এ বছর তো শেষ ,পাশ না করলে টিসি দিয়ে বের করে দেওয়া হবে। সুধাময় বাবু বললেন মাস্টার মায়া তো আপনার টিউশনি তে পড়ে…. সোমনাথ বাবু মাঝ কথায় বাঁধা দিয়ে বলেন আমি তো আপনাকে অনেক আগেই জানিয়েছি, মায়ার মাথাটা একটু মোটা, পড়াশোনা ঢোকে না।ওর দ্বারা পড়াশোনা হবে না। আবার দেখুন আপনার বড় ছেলে আকাশ, সে তো এই গ্রামের গর্ব। আপনার দুই সন্তান একদম দুই মেরুর।
নিরুপায় সুধাময় বাবু বাড়ি এসে মায়াকে ধমক দিয়ে বলেন,এই বারের পরীক্ষায় পাশ করতে না পারলে আসছে ফাল্গুনে তোর বিয়ে দিয়ে দেবো। মায়া তো কান্নায় ভাসায়, বাবা আমি বিয়ে করবো না।
কিছুদিন পরেই পরীক্ষার ফল বের হলো। মায়া সে দিনটিতে ভয়ে সারা গ্রাম, বাগান ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, ও দুপুরে বাড়ি ফিরলো, তখন দেখে বাবা মুখ কালো করে বাড়িতে আসছেন। মায়া বুঝে গেলো তার ফলাফল অনেক কান্নাকাটি,অনেক বাঁধা উপেক্ষা করেই ফাল্গুনের চব্বিশ তারিখে পাশের গ্রামের কড়িভূষণ হালদারের ছেলে সুশান্ত হালদারের সঙ্গে পরিণয় বন্ধন সুসম্পন্ন হয়। মায়া বারো বছর বয়সেই পাড়ি দেয় শ্বশুর বাড়িতে। একান্নবর্তী পরিবারে এই ছোট মেয়েটিকে বিয়ের পরদিন থেকেই অ কথা , কুকথা,শুনতে হচ্ছিল। বাড়ির বড় গিন্নীরা কথায় কথায় অপমান করতেন, এমনকি চুলের মুঠি ধরাও বাদ যেতো না, মায়া স্বামীর কাছে নালিশ করতে গেলে সেখানেও জুটে ধমক, আর তাই বুঝি ঈশ্বর মায়ার জন্য অন্য কিছু ই ভেবেছিল। বছর যেতে না যেতেই দীর্ঘদিনের কিডনি বিকল এর় সমস্যার জন্য মারা গেল সুশান্ত। সুধাময় বাবু মেয়ের কথা চিন্তা করেই বাড়িতে নিয়ে এলেন।
একরত্তি মেয়ে মায়া মুখকালো করে সাদা শাড়ি পরে বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়।মেয়ের এই দশা সুধাময় বাবু অসহায় বাবার মতো সহ্য করেন। মাঝেমধ্যে নিজের অসহায়তায় কেঁদে ফেলেন, আবার নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দেন। এইভাবে ই দিন যাপন হচ্ছিল তাদের।তিনটি বসন্ত অতিক্রান্ত হওয়ার পর দোল পূর্ণিমা তিথিতে মায়ার বাল্য বান্ধবী সন্ধ্যা মায়ার বাড়িতে আসে। সন্ধ্যা কে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে মায়া। সদ্য বিবাহিতা সন্ধ্যা মায়াকে বলে চল, এবছর আমরা একসাথে দোল খেলবো। মায়া বলে আমার জীবনের সব রঙ তো মুছে গেছে, আমার রঙ খেলতে নেই। কে বলেছে যে তোর জীবনে কোনো রঙ নেই? আমার দাদা তোর সম্বন্ধে সবকিছু জেনেই তোকে বিয়ে করতে চেয়েছে। আমি কাকুর সাথে কথা বলবো।সুধাময় বাবু শুনে বললেন এ কি কথা বলছো মা তুমি? তোমার দাদা তো ইঞ্জিনিয়ার, বেশ বড় কোম্পানি তে চাকুরী করে, সে মায়াকে? না না সে কি করে হয়? তুমি কি রসিকতা করছো মা? সন্ধ্যা এ কি বলছেন , কাকাবাবু আমি আপনাদের এই সমস্যা নিয়ে রসিকতা করবো? দাদা আমাকে অনেক আগে ই বলেছিল। দাদার কোম্পানির একজন মায়ার শ্বশুর বাড়ির দেশের লোক। সেই দাদা মায়ার কথা, সুশান্তর কথা দাদাকে সব বলেছেন। তাই দাদার মায়ার প্রতি একটা ভালোবাসা জন্মায়,সেই থেকেই ভালোলাগা।
এইভাবে দুজনের বাড়ির বয়জ্যেষ্ঠদের আশীর্বাদে চারহাত এক হলো।মায়ার জীবনে দেখা দিল অন্য এক বসন্ত।
আরও পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি
উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন