Coconut Shell: প্লাস্টিকের বিকল্পের সন্ধানে কাজ করে চলেছে ‘থেঙ্গা”

‘থেঙ্গা” যার অর্থ মালয়ালমে নারকেল। কেরালার স্টার্টআপটি প্লাস্টিকের বিকল্পের সন্ধানে কাজ করে চলেছে ।পরিবেশ বান্ধব এই উদ্ভাবনী স্টার্টআপটি প্লাস্টিকের উপর আমাদের নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প পণ্য তৈরি করতে নারকেলের খোসা (coconut shell) ব্যবহার করছে। নারকেলের খোসা, যা এতদিন ধরে বর্জ্য হিসেবে বিবেচিত হত, ‘থেঙ্গা’র ছোঁয়ায় এটি একটি নতুন উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছে। এই প্রাকৃতিক সম্পদের অব্যবহৃত সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়ে, থেঙ্গা নারকেলের খোসাকে প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যে রূপান্তরিত করছে। ‘থেঙ্গা’র এই উদ্ভাবনী পদ্ধতি শুধুমাত্র বর্জ্যই কমাচ্ছে না বরং সহজলভ্য এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য সম্পদ ব্যবহার করে বৃত্তাকার অর্থনীতিকেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

উত্তরাপথের পক্ষ থেকে আমাদের প্রধান সম্পাদক গার্গী আগরওয়ালা মাহাত থেঙ্গার প্রধান মারিয়া কুরিয়াকোসের সাথে কথা বলেন।একটি ফেলে দেওয়া জিনিষ থেকে মারিয়া কিভাবে প্লাস্টিকের পরিবেশ-বান্ধব বিকল্প সন্ধান করল সেই নিয়েই আজকের আলোচনা।

উত্তরাপথঃ আপনার সংস্থার নাম?

মারিয়া কুরিয়াকোসঃ ‘থেঙ্গা’ কারণ মালয়ালমে নারকেলকে থেঙ্গা বলে।আমরা যেহেতু শুধুমাত্র নারকেলের খোসা নিয়ে কাজ করি তাই আমাদের সংগঠনের নাম থেঙ্গা ।

উত্তরাপথঃ কত সালে আপনি এই প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেন?

মারিয়া কুরিয়াকোসঃ আমরা এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালে প্রথম শুরু করি ,তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে এটি শুরু হয় ২০২০ সালে।

উত্তরাপথঃ হঠাৎ একটি অন্যরকম বিষয়ের উপর কাজ করে সংস্থা তৈরি করার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?

মারিয়া কুরিয়াকোসঃ আমি বরাবর পরিবেশ সচেতনতা মূলক বিভিন্ন কাজে আগ্রহী। এটি শুরু করার আগে আমি মুম্বাইয়ে একটি কর্পোরেট অফিসে কাজ করতাম কিন্তু সেখানে কাজ করে আমি ঠিক সন্তুষ্ট হতে পারছিলাম না। আমি কেরালায় ফিরতে চাইছিলাম ।আমি কেরালার প্রকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে এমন এক ব্যবসা করতে চাইছিলাম যা পরিবেশ বান্ধব হবে। আপনারা সবাই জানেন, নারকেল কেরালার অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ। 

উত্তরাপথঃবর্তমানে কতজন সদস্য এই প্রতিষ্ঠানের কাজের সাথে সরাসরি যুক্ত  রয়েছে?

মারিয়া কুরিয়াকোসঃ আমাদের ৩৬ জন দক্ষ কারিগর রয়েছে এছাড়াও ১০জনের মত মহিলা রয়েছে যারা প্যাকিং সহ  অন্যান্য কাজের সাথে যুক্ত।সব মিলিয়ে ৫০জনের মত সদস্য এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত।  

উত্তরাপথঃ আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি ?

মারিয়া কুরিয়াকোসঃ আমরা ভবিষ্যতে ক্যাটারিং থেকে প্যাকেজিং সব ক্ষেত্রেই কাজ করতে আগ্রহী। আমরা প্ল্যাস্টিক প্লেট ও কনটেনারের বিকল্প হিসাবে প্রাকৃতিক উপাদান (নারকেলের খোসা)দিয়ে এই সমস্ত জিনিসগুলি তৈরির চেষ্টা করছি । আমরা সবাই জানি খেলনার জগতে একক ভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার হয়ে আসছে । আমরা নারকেল খোসা ব্যবহারের মাধ্যমে প্লাস্টিক খেলনার বিকল্প তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছি। আমরা যদি প্লাস্টিকের বিকল্পের সন্ধানে আমাদের এই উদ্যোগটি সফল ভাবে পূরন করতে পারি তাহলে এক পরিবেশ বান্ধব বিকল্প সকলের সামনে প্রস্তুত করতে পারব।  

উত্তরাপথঃ আপনারা এখন কি কি জিনিস তৈরি করছেন?

মারিয়া কুরিয়াকোসঃ আমরা এখন রান্নাঘরের জিনিসপত্র যেমন বাটি , চা এর কাপ, কাটলারী সেট, , টেবিলওয়্যার, বাগান এবং ঘর সাজানোর উপকরণ সহ প্রায় ৪০ রকম উপকরণ আমরা এখন তৈরি করছি।

 উত্তরাপথঃ আপনাদের তৈরি জিনিষগুলির কিভাবে আপনারা মার্কেটিং করেন?

মারিয়া কুরিয়াকোসঃ আমরা আমাদের জিনিসগুলি সরাসরি অনলাইনে আমাদের শপিং সাইট থেকে বিক্রি করি ,এছাড়াও আমাজনেও আমাদের জিনিষ বিক্রি করি। আমরা আমাদের দ্রব্য দেশের সাথে বিদেশেও বিক্রি করি।

উত্তরাপথঃ আপনি কি মনে করেন এটি প্ল্যাস্টিকের বিকল্প প্রতিস্থাপন?

মারিয়া কুরিয়াকোসঃ অবশ্যই ,এটি প্ল্যাস্টিকের উত্তম বিকল্প। এটি খারাপ হয়ে গেলে খুব সহজেই পরিবেশে মিশে যায়, প্ল্যাস্টিকের মত কোনও দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব পরিবেশের উপর সৃষ্টি করে না।  

উত্তরাপথঃ আপনার সংস্থাটির সম্পর্কে কিছু বলুন?

মারিয়া কুরিয়াকোসঃ এটি একটি হোম ব্রান্ড যারা ফেলে দেওয়া পরিবেশ বান্ধব জিনিষ দিয়ে তাদের পণ্য তৈরি করে।

উত্তরাপথঃ আপনাদের শূন্য বর্জ্য পরিবেশ বান্ধব উদ্যগের জন্য সরকারি কোনও সাহায্য পেয়েছেন?

মারিয়া কুরিয়াকোসঃ সরকারি সাহায্য বলতে আমাদের বিভিন্ন জায়গাতে স্টল করার জন্য এবং বিদেশে রপ্তানি করার ব্যাপারে আমরা সরকারি সহযোগিতা পায়।

উত্তরাপথঃ আপনার মূল্যবান সময় আমাদের দেওয়ার জন্য উত্তরাপথের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

মারিয়া কুরিয়াকোসঃ আপনাদেরও ধন্যবাদ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top