উত্তরাপথঃ ইসরায়েল-গাজা সংঘাতে বিভিন্ন নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ আসছে, যা অস্ত্রগুলির মানবিক প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এই অস্ত্রগুলির মধ্যে রয়েছে ফসফরাস বোমার ব্যবহার, যা প্রানী এবং পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করার সম্ভাবনার কারণে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) গাজা উপত্যকা এবং লেবাননে ‘নিষিদ্ধ’ সাদা ফসফরাস বোমা ফেলার অভিযোগ তুলেছে। ইসরায়েলে বিরুদ্ধে এই বিতর্কিত যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এর আগে গাজায় ‘নিষিদ্ধ’ সাদা ফসফরাস বোমা ফেলার অভিযোগ করে ফিলিস্তিনিও।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আল-কারামার বোমা হামলার একটি ভিডিও পোস্ট করেছিল মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফরম এক্সে। এবার মানবাধিকার গোষ্ঠী হিউম্যান রাইটস ওয়াচও (এইচআরডব্লিউ) একই অভিযোগ আনল। ফসফরাস বোমা, সাদা ফসফরাস বা WP যুদ্ধাস্ত্র নামেও পরিচিত, এতে অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল পদার্থ থাকে যা অক্সিজেনের সংস্পর্শে জ্বলে ওঠে। এগুলি প্রাথমিকভাবে স্মোক স্ক্রিন তৈরি, লক্ষ্য চিহ্নিতকরণ এবং আলোকসজ্জা প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়।ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এটির ব্যবহার এলাকার সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতির সম্ভাবনার কারণে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।অত্যন্ত দাহ্য এই বোমা জনবহুল জায়গায় এর ব্যবহার মারাত্মক। মানুষ, ঘরবাড়ি, মাঠ এবং বেসামরিক ভবনসহ আশেপাশে যাই থাকুক তা পুড়িয়ে ফেলবে।
জনবহুল এলাকায় ফসফরাস বোমার ব্যবহার নিয়ে পরিবশবিদরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।তাদের মতে এর ব্যবহার গুরুতর আঘাত, পোড়া এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের প্রভাব, সেইসাথে অবকাঠামো এবং পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে। ফসফরাস পোড়ার চিকিৎসা করা বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, যার ফলে টিস্যুর গভীর ক্ষতি হতে পারে এবং সম্ভাব্য জটিলতা বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। উপরন্তু, ফসফরাস দহনের সময় নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যখন বেসামরিক ব্যক্তিরা শ্বাস নেয়।
ইসরায়েল-গাজা সংঘর্ষে ফসফরাস বোমার ব্যবহার আন্তর্জাতিক মানবিক আইন (IHL) এবং সমানুপাতিকতা এবং পার্থক্যের নীতিগুলির সাথে সম্মতি সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্থাপন করে। IHL-এর অধীনে, দ্বন্দ্বের পক্ষগুলি যোদ্ধা এবং বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে পার্থক্য করতে এবং বেসামরিক এবং বেসামরিক বস্তুর ক্ষতি কমানোর জন্য সমস্ত সম্ভাব্য সতর্কতা অবলম্বন করতে বাধ্য। ফসফরাস বোমার মতো এমন দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রয়েছে এমন অস্ত্রের ব্যবহার এই নীতিগুলি লঙ্ঘন করতে পারে।
ইসরায়েল-গাজা সংঘর্ষে ফসফরাস বোমার ব্যবহার আন্তর্জাতিক নিন্দা ও পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সহ মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই অস্ত্রগুলির কারণে সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং অবিলম্বে তাদের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিও সংঘাতে লিপ্ত উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। ফসফরাস বোমা নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টা নতুন নয়। ১৯৮০ সালে, এই ধরণের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধ করার জন্য নির্দিষ্ট প্রচলিত অস্ত্রের কনভেনশন (CCW) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
ইসরায়েল-গাজা সংঘাতে ফসফরাস বোমার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য মানবিক উদ্বেগ তৈরি করেছে যা অবিলম্বে পদক্ষেপের প্রয়োজন। এই অস্ত্র নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টা জোরদার করা উচিত এবং বিদ্যমান আইনি কাঠামোকে শক্তিশালী করতে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ভবিষ্যতের যেকোনো সংঘাতে পরিবেশ ও নাগরিক সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এবং ফসফরাস বোমার মতো নির্বিচারে অস্ত্রের বিকাশ ও ব্যবহার দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা ও নিষিদ্ধ করা উচিত।
আরও পড়ুন
পরম সুন্দরী
মৈত্রেয়ী চৌধুরী: চাকরির বাজার ভীষণ মন্দা। পাত্র সৃজিত এম. এস.সি পাশ করেও কোনো চাকরি পাচ্ছে না। অগত্যা পরিবারের ব্যাবসার হাল ধরেছে। পারিবারিক সূত্রে তাদের মিষ্টির বেশ বড় দোকান রয়েছে। সৃজিত পড়াশোনা তে বেশ ভালো ছাত্র ছিল। প্রতিদিন সকালে পেপারে চাকরির বিজ্ঞাপন খোঁজা তার একটি কাজ। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান, বয়স তো থেমে থাকবে না। বাবা মা ছেলের বিয়ে নিয়ে বেশ চিন্তিত। তারা কিছু দিনের মধ্যেই ছেলের বিয়ে দেবেন এরকম স্থির করেন। মোনালিসা ভূগোলে সদ্য এম.এ, পি. এইচ. ডি করে একই ভাবেই চাকরির খোঁজ করে যাচ্ছে। বাবা সুভাষ বাবু সরকারি .....বিস্তারিত পড়ুন
কৃষ্ণগহ্বরের "ছায়া" ও "ছবি"
ড. সায়ন বসু: ১৭৮৩ সালে ভূতত্ত্ববিদ জন মিচেল (John Michell) ‘ডার্ক স্টার’ (dark stars) শিরোনামে একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেন। তার গবেষণা পত্রের বিষয়বস্তু ছিল "বিপুল পরিমাণ ভর বিশিষ্ট কোন বস্তু যার মহাকর্ষের প্রভাবে আলোক তরঙ্গ পর্যন্ত পালাতে পারে না"। এখান থেকেই মূলত কৃষ্ণগহ্বরের (Black Hole) ধারণা আসে এবং এটি নিয়ে গবেষনা ও অনুসন্ধান শুরু হয়। পরবর্তিতে অবশ্য এটি বিজ্ঞান মহলে একটি অযৌক্তিক তত্ত্ব হিসেবে বেশ অবহেলার স্বীকার হয়। আলোর মত কোন কিছু বেরিয়ে আসতে পারবে না এমন একটি তত্ত্ব বিজ্ঞানীদের কাছে বেশ অযৌক্তিক মনে হয়েছিল। তাই ধীরে ধীরে থেমে যায় কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষনা। .....বিস্তারিত পড়ুন
আর্চারি এশিয়াতে ভারতের সর্বোচ্চ পদক অর্জন
উত্তরাপথ: যাকে বলে ক্লিন সুইপ! আর্চারির এশিয়া কাপ স্টেজ ২ ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিং টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে ভারত। ফাইনালে ভারতের পুরুষ-মহিলা কম্পাউন্ড আর্চারি দলের সামনে দাঁড়াতে পারেনি কোনও প্রতিপক্ষ। পদকতালিকায় আসরে অংশগ্রহণ করা দেশগুলোকে পিছিয়ে সর্বোচ্চ পদক অর্জন করেছে ভারতের নারী ও পুরুষ আর্চারি দল। ৯টি সোনাসহ সবমিলিয়ে জিতেছে ১৪টি পদক। এছাড়াও ৫টি রৌপ্য ও ২টি ব্রোঞ্জ .....বিস্তারিত পড়ুন
মতুয়া আন্দোলনের এক মনোগ্রাহী ভাষ্য
অরবিন্দ পুরকাইত: আপাত বা গভীর কোনও স্তরেই তেমন কিছু তফাৎ পরিলক্ষিত না হলেও, বর্ণবাদী সমাজে একই পাড়ায় একেবারে প্রায় পাশাপাশি কেবল বিশেষ বিশেষ ঘরে জন্মানোর নিমিত্ত - শিক্ষাদীক্ষা পরের কথা – ভূমিষ্ঠ হওয়া থেকেই আজীবন একজন শ্রদ্ধা-ভক্তি-প্রণাম পাওয়ার অদৃশ্য শংসাপত্রের অধিকারী আর অন্যজনের সেবা-শ্রদ্ধা-ভক্তির অদৃশ্য দাসখতের দায়বদ্ধতা! কেন-না সৃষ্টিলগ্নেই একজন প্রজাপতি ব্রহ্মার মুখনিসৃত আর অন্যজন পদজ যে! সুতরাং মুখ থাকবে সবার উপরে, সবার নিচে পা – এতে অস্বাভাবিকতা বা আশ্চর্যের তো কিছু নেই! কিন্তু কেবল সেবা-শ্রদ্ধাতেই সব মিটে .....বিস্তারিত পড়ুন