উত্তরাপথ
বারদুয়ারী মসজিদ
প্রাচীন বাংলার রাজধানী এবং হিন্দু মুসলিম সংস্কৃতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন এই গৌড়। এটি পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় অবস্থিত। মালদা শহর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে প্রাচীন বাংলার রাজধানীর ধ্বংসস্তূপের শহর গৌড়। ১২ থেকে ১৬ শতাব্দীর মধ্যে বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়।।চার শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একডজনের বেশি রাজবংশ এখানে শাসন করেছেন। গৌড়ে বাংলার ইসলামিক আমলের বহু দর্শনীয় ধ্বংসাবশেষ আজও বিরাজমান। ইতিহাস এবং তার সাথে স্থাপত্যকলা মিলে মিশে রয়েছে এই প্রাচীন শহরের ধ্বংসস্তূপে। পঞ্চম শতাব্দীতে গৌড় মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। সপ্তম শতাব্দীতে গৌড় ছিল বাংলার শক্তিশালী রাজা শশাঙ্কের অধীনত্ব। । অষ্টম শতাব্দী থেকে গৌড় পাল রাজবংশের শাসনের অধীনে ছিল। পাল রাজাদের শাসনের পরে সেন রাজবংশের শাসন শুরু হয়। এরপর সেন রাজাদের হারিয়ে মুঘল এবং আফগানরা দ্বাদশ শতাব্দীতে গৌড় দখল করে।এরপর যথাক্রমে খিলজি বংশ, মামলুক সলতানত, বলবান রাজবংশ এবং তুঘলক সলতানতের রাজধানী শহর হিসাবে গৌড় পরিচিত হয়। আলাউদ্দিন আলী শাহের রাজত্বকালে তিনি তার রাজধানী পান্ডুয়ায় স্থানান্তরিত করেন । তবে পান্ডুয়াতে বেশীদিন রাজধানী থাকেনি। তারপর বেশ কয়েক বছর ধরে একের পর এর রাজা গৌড়ে রাজত্ব করেছেন। শেষ পর্যন্ত ১৫৭৫ সালের অক্টোবর মাসে মুনিম খানকে প্লেগ মহামারীর কারনে মৃত্যুর কবলে পড়তে হয়। এই মহামারীর পর শহরটিকে পরিত্যাক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। একসময়ের সমৃদ্ধ শহরে তখন প্রকৃতি ছাড়া আর কারও বসবাস ছিলনা। এরপর অনেক বছর পেরিয়ে যায়, প্রথমে স্থানীয়রা এবং পরে ব্রিটিশ আধিকারিক দ্বারা গৌড়ের ধ্বংসাবশেষ বহুবার ভাঙচুর করা হয়। ধ্বংসাবশেষ থেকে মূল্যবান জিনিষপত্র লুঠ করে তারা চলে যায়। গৌড়ের হিন্দু সভ্যতার প্রায় কিছুই এখন অবশিষ্ট নেই। পর্যটকরা আজ যে সমস্ত ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করে সেগুলির বেশিরভাগই পরের সাম্রাজ্যকালের মানে ইসলামিক আমলের। এখনও সেসব ধ্বংসাবশেষ দেখলে তাদের স্থাপত্যকলার নিদর্শন কিছুটা হলেও পাওয়া যায়।
দাখিল দরওয়াজা
বর্তমানে যেসব ভগ্নাবশেষ গুলি রয়েছে তারমধ্যে দাখিল দরওয়াজা অন্যতম। আক্ষরিক অর্থে যা ‘প্রবেশদ্বার’ নামে পরিচিত। মালদহের দাখিল দরওয়াজা হল বাংলার সুলতানি আমলে নির্মিত প্রাচীনতম এবং মহিমান্বিত স্থাপত্য কাঠামোর মধ্যে একটি। এই দাখিল দরওয়াজা যা আজও দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে । এটি আবার ‘সালামি দরওয়াজা’ নামেও বিখ্যাত, কারণ এখান থেকে কামান ছোড়া হত । দুর্গের এই প্রাচীন প্রবেশদ্বারটি ২১ মিটার দীর্ঘ এবং ৩৪.৫ মিটার চওড়া।
বোরোসোনা মসজিদ
ফিরোজ মিনারটি দাখিল দরওয়াজা থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সুলতান সাইফুদ্দিন ফিরোজ শাহের শাসনকালে নির্মিত, এই পাঁচ তলা টাওয়ারটি ।
চামচিকে মসজিদ
বল্লাল বাটি হল বাইশ গাজী প্রাচীরের ঘেরের মধ্যে একটি অপেক্ষাকৃত নতুন খননকৃত স্থান যেখানে বল্লাল সেনের একটি রাজকীয় প্রাসাদ বিদ্যমান ছিল বলে মনে করা হচ্ছে ।
চামচিকা মসজিদটি ১৪৭৫ সালে সুলতান ইউসুফ শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছিল চামচিকা কারণ এটি ছিল বাদুড়ের সুরক্ষিত আশ্রয়স্থল, স্থানীয়ভাবে চিকাস নামে পরিচিত। মসজিদটিতে একটি একক গম্বুজ বিশিষ্ট ভবন রয়েছে, যা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
বারদুয়ারী মসজিদ (বামদিকে) ও ফিরোজ মিনার (ডানদিকে)
বারোদুয়ারি মসজিদ,৫০.৪ মি বাই ২২.৮ মিটার এবং ১২ মিটার। উচ্চতায়, ইট এবং পাথরের একটি বিশাল আয়তাকার কাঠামো, এই মসজিদটি গৌরের বৃহত্তম স্মৃতিস্তম্ভ। যদিও নামের অর্থ বারোটি দরজা, এই স্মৃতিস্তম্ভটি আসলে এগারোটি দরজা রয়েছে। বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ দ্বারা শুরু করেছিলেন এবং ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে তার পুত্র নাসিরুদ্দিন নাসরত শাহ এটি সম্পন্ন করেছিলেন। ইন্দো-আরবি স্থাপত্য শৈলী এবং অলঙ্কৃত পাথরের খোদাই বারোদুয়ারীকে পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ করে তুলেছে।
বল্লাল বাটি
এছাড়াও রয়েছে রামকেলিধাম। এর ইতিহাস ৫০০ বছরের বেশি পুরোনো । ইতিহাসে রয়েছে চৈতন্য মহাপ্রভু নীলচল যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার সময়ে ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দে ১৫ জুন জৈষ্ঠ সংক্রান্তির দিন তৎকালীন বাংলার রাজধানী এই গৌড়ের রামকেলিতে পদার্পন করেছিলেন এবং একটি তমাল গাছের নিচে টানা ৩ দিন ধ্যান করেছিলেন, এখানেই শ্রী চৈতন্যদেবের পদ যুগলের চিহ্ন আছে। চৈতন্যদেবের আগমনের খবর যায় বাংলার নবাব আলাউদ্দিন হুসেন শাহ এর কাছে। গৌড় ছিলো তখন গোটা বাংলা-বিহার-ওড়িশারার রাজধানী। চৈতন্যদেবের আগমনের খবরেই তার রাজসভার দুজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দবিরখাস ও সাকির মল্লিক কে চৈতন্যদেবের কাছে পাঠান। এই দবির খাস ও সাকির মল্লিকই পরবর্তীকালে চৈতন্যদেবের কাছ থেকে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষা লাভ করে রূপ গোস্বামী এবং সনাতন গোস্বামী নামে পরিচিতি লাভ করেন । চৈতন্যদেবের কথামত রূপ এবং সনাতন গোস্বামী রামকেলিকে বৃন্দাবন মতো গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। বৃন্দাবনের মতো এখানেও শ্যাম কুণ্ড, রাধা কুণ্ডের মত অষ্টসখী নির্মাণ করা হয় পুরো রামকেলী জুড়ে। চৈতন্যদেবের আগমনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য আজও প্রতিবছর ৭ দিন ব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলা বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর লোকজনের সমাগম হয়।
এইভাবে আজও গৌড়ে হিন্দু ও মুসলিম সংস্কৃতি এক সাথে বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন
আগামী ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে কি সলমন খানকেও দেখা যাবে কলকাতায় ?
উত্তরাপথ: একেই বলে রথ দেখা কলা বেচা। এলেন ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের শতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে,আর বাড়তি পাওনা হিসেবে পেয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে একান্ত সাক্ষাতের সুযোগ। কালো টয়োটা এসইউভি ডব্লিউবি০২এএন৬৬৪৯ গাড়িতে করে বিকেল ৪টে ২০ মিনিটে পৌঁছেযান মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে। অবশ্য রাস্তায় উপচে পড়া ভিড়ের জন্য দু'বার দাঁড়াতে হয়েছিল গাড়িতে থাকা সুপারস্টারকে। পুলিশি নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢোকে সলমন খান। আগেই নিজের টালির চালার বাড়ির সামনে আটপৌড়ে শাড়িতে অপেক্ষায় .....বিস্তারিত পড়ুন
হয়ে গেল পরিণীতি ও রাঘবের এনগেজমেন্টে
উত্তরাপথ: আংটি বদলের মাধ্যমে হয়ে গেল পরিণীতি চোপড়া ও রাঘব চাড্ডার এনগেজমেন্টে । পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের উপস্থিতিতে একে-অপরকে আংটি পরিয়ে দিলেন রাঘব-পরিণীতি। শনিবারের মায়াবী সন্ধ্যায় রাঘব ও পরিণীতির জুটি থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না। এনগেজমেন্টে পরিণীতি পরেছিলেন ক্রিম রঙের সালোয়ার স্যুট। অপরদিকে রাঘব পরেছিলেন সাদা রঙের কুর্তা-পায়জামা। পরিণীতি ও রাঘবের এনগেজমেন্টে তাদের গোটা পরিবারকে দেখা গেল আনন্দ করতে। .....বিস্তারিত পড়ুন
যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রবীর ঘোষও আমি
ড. জীবনকুমার সরকার: ৭ এপ্রিল ২০২৩ প্রয়াত হলেন যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রবীর ঘোষ। তাঁর প্রয়াণে দেশ ভারাক্রান্ত। যুক্তিবাদীরা চরম মর্মাহত। আমিও। তাঁর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়েছিলাম সে এক ইতিহাস। ১৯৯৪ সালে মাধ্যমিক পাস করে গাজোল হাইস্কুলে সবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি। নতুন বইয়ের মধ্যে ডুবে আছি। আর নিয়মিত ক্লাস করছি। এইভাবে পুজোর ছুটি এসে যায়। পুজোর ছুটির আগের দিন অর্থাৎ যেদিন স্কুল হয়ে এক মাসের জন্য বন্ধ থাকবে স্কুল, সেইদিন আমি আর রাজেন লাইব্রেরীতে যাই। রাজেন আমার ছাত্রজীবনের সেরা বন্ধু। দুজনে কী বই নেবো, কী ধরনের বই নিয়ে .....বিস্তারিত পড়ুন
সময়
অনসূয়া পাঠক: একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার সবুজ বোস। রাজারহাট নিউটাউনের একটি বহুতল আবাসনে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখী জীবন তার। কাজের বাইরে উনার নেশা বলতে নামীদামী পুরানো মডেলের হাত ঘড়ি কালেকশন। এই বিষয়ে তাঁর সংগ্রহশালাটি রীতিমতো চমকে দেবার মতো। তিনি যে বিদেশী মডেলের রিস্ট ওয়াচটি সবচেয়ে বেশী ব্যাবহার করেন সেটা হঠাৎই একদিন খারাপ হয়ে যাওয়াতে পার্শ্ববর্তী করিম চাচার ঘড়ির দোকানে তিনি যান। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে দোকানের শো কেসে তাঁর নজর আটকে যায় জার্মানি মডেলের একটি পুরানো ঘড়ির দিকে। এই .....বিস্তারিত পড়ুন