মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় ধন ভান্ডার সম্ভবত বুধ গ্রহে রয়েছে

উত্তরাপথঃমহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় ধন ভান্ডার সম্ভবত বুধ গ্রহে রয়েছে। লাইভ সায়েন্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, বেইজিং-এর সেন্টার ফর হাই-প্রেশার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অ্যাডভান্সড রিসার্চের বিজ্ঞানী এবং গবেষণার সহ-লেখক ইয়ানহাও লিন দাবী করেছেন যে বুধের পৃষ্ঠের কয়েকশ মাইল নীচে হীরার ১৪.৪৮ কিলোমিটার পুরু স্তর রয়েছে। যদিও এই হীরাগুলির খনন করা অসম্ভব, তবে তারা মহাবিশ্বের কিছু রহস্যের উত্তর দিতে পারবে। নতুন আবিষ্কার বুধের গঠন এবং নির্দিষ্ট চৌম্বক ক্ষেত্র সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করেছে।

লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনে ও নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, বুধের গ্রাফাইট ভূত্বকের নীচের স্তরটি ১৮ কিলোমিটার (১১ মাইল) পর্যন্ত পুরু স্তরের উপস্থিতি নির্দেশ করে যে বুধ, ছোট এবং ভূতাত্ত্বিকভাবে নিষ্ক্রিয় হওয়া সত্ত্বেও, এর একটি চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে। যদিও এটি পৃথিবীর তুলনায় অনেক দুর্বল। ইয়ানহাও লি’র মতে, বুধ সম্ভবত অন্যান্য গ্রহের মতো একটি ম্যাগমা মহাসাগরের শীতল থেকে তৈরি হয়েছে। এই  অঞ্চলটি আগে মহাসাগর কার্বন এবং সিলিকেট সমৃদ্ধ ছিল পরবর্তীকালে এর মধ্যে থাকা ধাতুগুলি শক্ত হয়ে স্ফটিক হয়ে গেছে।

বহু বছর ধরে, বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে বুধের আবরণের তাপমাত্রা এবং চাপ বুধে কার্বনের অস্তিত্বের জন্য ঠিক ছিল। ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে বুধের আবরণ পূর্বের ধারণার চেয়ে ৫০কিলোমিটার (৮০মাইল) গভীর হতে পারে। অর্থাৎ, সেখানে তাপমাত্রা এবং চাপ পূর্বের অনুমানের চেয়ে বেশি ছিল, যার কারণে সেখানে হীরা তৈরির মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যা কার্বনকে স্ফটিকে পরিণত করেছিল।

বুধ সম্পর্কে আরও জানার জন্য, বেলজিয়াম এবং চীনা গবেষকরা পৃথিবীতে পরীক্ষা চালান। তিনি খুব উচ্চ চাপে কিছু রাসায়নিক মিশ্রণে চাপ দেন। বিজ্ঞানীরাও কম্পিউটার মডেলের সাহায্য নেন। বিজ্ঞানী লিন দাবি করেছেন যে এই কম্পিউটার সিমুলেশন বুধ গ্রহের অভ্যন্তরীণ অংশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে বুধ গ্রহের ভিতরে যদি হীরার একটি স্তর থাকে তবে এটি ১৫ কিলোমিটার পুরু স্তর হতে পারে। বুধের অভ্যন্তরে হীরা থাকলেও তা বের করা হবে না। কারণ সেখানকার তাপমাত্রা খুব বেশি এবং হীরাগুলো বুধের পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪৮৫ কিলোমিটার নিচে।

এর আগে আমেরিকান মহাকাশ সংস্থা নাসার মেসেঞ্জার মিশন বুধের পৃষ্ঠে কালো দাগ দেখেছিল যা গ্রাফাইটের। এটি কার্বনের একটি রূপ। বুধে কার্বনের উপস্থিতি বিজ্ঞানীদের গবেষণা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। গবেষকরা বলছেন যে হীরার স্তরটি বুধের পৃষ্ঠের থেকে অনেকটাই নীচে এবং গ্রহটির তাপমাত্রা দিনের বেলায় থাকে ৪৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top