

উত্তরাপথঃ ব্যায়ামকে দীর্ঘকাল ধরে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়, কিন্তু আপনি কি জানেন যে এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও ভালো প্রভাব ফেলতে পারে? সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্যায়াম মানসিক চাপকে একেবারে কম করতে পারে।সেইসাথে এটি মানসিক চাপের নেতিবাচক প্রভাবগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষেত্রে একটি প্রাকৃতিক এবং কার্যকর উপায়।
আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিওলজির জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গেছে সেই সমস্ত ব্যক্তি যারা ব্যায়াম সহ বিভিন্ন শারীরিক কাজকর্মে বেশি সক্রিয় ছিল তাদের মধ্যে হৃৎপিণ্ড সহ রক্তনালীর ব্যাধিগুলি অর্থাৎ Cardiovascular diseases কম ছিল ।গবেষকরা দেখেছেন যে একজন ব্যক্তি যখন ব্যায়াম করেন, তখন তার শরীর এন্ডোরফিন নিঃসরণ করে – যা “ফিল-গুড” হরমোন নামেও পরিচিত – এটি উদ্বেগ এবং বিষন্নতার অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে। এই হরমোনগুলি প্রাকৃতিক ভাবে ব্যথানাশক হিসাবে কাজ করে, এবং একজন ব্যক্তিকে সুস্থতা এবং সুখের অনুভূতি দেয়। অতিরিক্তভাবে, ব্যায়াম সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের উৎপাদন বাড়ায়,যা মানুষের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখে ,সেইসাথে সুখ এবং মানসিক শান্তির অনুভূতি দেয়। প্রসঙ্গত ২০১৯ সালে আনুমানিক ১৭.৯ মিলিয়ন মানুষ হৃৎপিণ্ড এবং রক্তনালীর ব্যাধিগুলিতে (Cardiovascular diseases )মারা গেছে, যা বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর ৩২%। এই মৃত্যুর মধ্যে ৮৫% হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের কারণে হয়েছে।
হার্ভার্ড মেডিকেলের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের একজন গবেষক এবং কার্ডিওলজিস্ট, সিনিয়র লেখক আহমেদ তাওয়াকোলের মতে, মানসিক হতাশায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমাতে ব্যায়াম সহ শারীরিক কার্যকলাপ প্রায় দ্বিগুণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে মস্তিষ্কের স্ট্রেসের উপর ব্যায়াম সহ শারীরিক কার্যকলাপের প্রভাব বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এই পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ।গবেষণার জন্য, গবেষকরা ৫০,০০০টিরও বেশি অংশগ্রহণকারীদের মেডিকেল রেকর্ড বিশ্লেষণ করেছেন। তাদের ব্যায়াম সহ শারীরিক কাজকর্মের উপর একটি সমীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। দলটি গণ জেনারেল ব্রিঘাম বায়োব্যাঙ্কের ডেটা ব্যবহার করেছে, এটি মূলত একটি গবেষণা প্রোগ্রাম যা মানুষের জিন, জীবনধারা এবং পরিবেশ কীভাবে তাদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে তা বোঝার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।গবেষণায় ৭৭৪ জন অংশগ্রহণকারীর মস্তিষ্কের ইমেজিং পরীক্ষা এবং চাপ-সম্পর্কিত মস্তিষ্কের কার্যকলাপের পরিমাপ করা হয়। ১০ বছর ধরে চালানো এই সমীক্ষায় ,৫০,০০০ জনের মধ্যে যে সমস্ত অংশগ্রহণকারীরা ব্যায়াম সহ বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত ছিল তাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগ হওয়ার ঝুঁকি ২৩% কম ছিল যারা গবেষকদের দেওয়া সুপারিশগুলি পূরণ করেনি তাদের তুলনায়।
ব্যায়াম মস্তিষ্কের চাপকে কম করে কর্টিসলের মাত্রা হ্রাস করে, “স্ট্রেস হরমোন” যা আমাদের শরীর চাপের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি করে। কর্টিসলের উচ্চ মাত্রা মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়,কোনও বিষয় নিয়ে চিন্তা করার ক্ষমতাও কমে যায়। ব্যায়াম করটিসলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, কার্যকরভাবে মস্তিষ্কের উপর চাপের নেতিবাচক প্রভাব কমায়।এই হরমোনের পরিবর্তনগুলি ছাড়াও, নিয়মিত ব্যায়াম মস্তিষ্কের গঠনগত পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্যায়াম হিপোক্যাম্পাসের আকার বাড়াতে পারে – মস্তিষ্কের সেই অংশ যা স্মৃতি এবং শেখার জন্য দায়ী – সেইসাথে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ উন্নত করতে পারে। সুতরাং, এবার থেকে আপনি যখন মানসিক চাপ অনুভব করবেন,সেইসময় দৌড়ানো, জিমে যাওয়া বা দ্রুত হাঁটার কথা বিবেচনা করুন।এটি কেবল আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতিই করবেন না,এটি আপনার মস্তিষ্কের চাপকেও শান্ত করবে এবং আপনার মানসিক সুস্থতাকে বাড়িয়ে তুলবে।
সূত্রঃ “Effect of Stress-Related Neural Pathways on the Cardiovascular Benefit of Physical Activity” by H. Zureigat, M. T. Osborne, S. Abohashem, K. Mezue, C. Gharios, S. Grewal, A. Cardeiro, N. Naddaf, G. Civieri, T. Abbasi, A. Radfar, W. Aldosoky, A. V. Seligowski, M. M. Wasfy, J. S. Guseh, T. W. Churchill, R. P. Rosovsky, Z. Fayad, A. Rosenzweig, A. Baggish, R. K. Pitman, K. W. Choi, J. Smoller, L. M. Shin and A. Tawakol, J. Am. Coll. Cardiol. 2024, 83, 1543.
আরও পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে বিতর্কে এ আর রহমান
উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন