বিজ্ঞানীদের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে কিছু মাছের প্রজাতি সঙ্কুচিত হচ্ছে

উত্তরাপথঃ আমাদের গ্রহে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা আমাদের পরিবেশের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করছে।সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে কিছু মাছের প্রজাতি সঙ্কুচিত হচ্ছে এর প্রভাবে। বিজ্ঞানীদের করা এই গবেষণাটি আমাদের মহাসাগরের উষ্ণায়নের প্রত্যক্ষ পরিণতি বলে মনে করা হচ্ছে।

গবেষকদের একটি আন্তর্জাতিক দল দ্বারা পরিচালিত সাম্প্রতিক এই গবেষণায় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছের জনসংখ্যা পরীক্ষা করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে কড এবং হ্যাডকের মতো বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সহ অসংখ্য প্রজাতির আকার গত কয়েক দশক ধরে হ্রাস পাচ্ছে। আকারের এই হ্রাস সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র এবং মৎস শিল্প উভয় ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

এই প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীরা উত্তর আটলান্টিকের একটি মাছ কাঁটাযুক্ত স্কেটের উদাহরণ দিয়েছেন। বিজ্ঞানীদের মতে এটি দৈর্ঘ্যে এক মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে,কিন্তু বর্তমানে এটি ছোট হয়ে গেছে, অন্যদিকে  ম্যাকেরেলের মতো ছোট দেহের প্রজাতির মাছ প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে, গবেষকদের মতে, বাস্তুতন্ত্রের গঠন এবং কার্যকারিতা্র পরিবর্তনের ফলে কিছু মাছের প্রজাতি সঙ্কুচিত হচ্ছে ।গবেষকদের মতে আকারের এই সংকোচন শুধুমাত্র মাছের মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে তা নয়, এটি কিছু উদ্ভিদ এবং অমেরুদণ্ডী প্রজাতির প্রানীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে।আবার কিছু প্রজাতির দেহের আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেমন আর্কটিকের গাছপালা।

গবেষকদের মতে এই ঘটনার পিছনে প্রাথমিক কারণ হল বিশ্ব উষ্ণায়ন যা সমুদ্রের তাপমাত্রা কে বাড়িয়ে দিয়েছে। উষ্ণ জল খাদ্যের যোগান সহ মাছের বিপাকীয় হারকে প্রভাবিত করছে, যা শেষ পর্যন্ত তাদের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করছে। মাছ যখন উচ্চ তাপমাত্রার সংস্পর্শে আসছে, তখন তাদের বিপাকীয় হার বৃদ্ধি পায়, যার ফলে দেহে খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, অথচ প্রয়োজন মত খাদ্য তারা পায় না যার পরিণতিতে মাছের আকার ছোট হচ্ছে।

সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এই সমীক্ষাটি ১৭ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। গবেষকরা ৪,২৯২ টি স্তন্যপায়ী প্রাণী, অমেরুদণ্ডী প্রাণী, গাছপালা, মাছ, উভচর এবং সরীসৃপ সহ সমুদ্রতলের বিভিন্ন প্রজাতির উপর গবেষণা করেন।গবেষক দলের প্রধান গবেষক, ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে ডঃ ইনেস মার্টিনস বলেন, যে শরীরের আকার শুধুমাত্র প্রধানত সঙ্কুচিত হচ্ছে না বরং প্রজাতির প্রতিস্থাপন এবং প্রজাতির জনসংখ্যার মধ্যে পরিবর্তনের সংমিশ্রণের মাধ্যমে জীবগুলি ছোট হয়ে যাচ্ছে।তিনি আরও বলেন,“এই প্রবণতা মাছের মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট ছিল, যেখানে আমরা শরীরের আকার সঙ্কুচিত হওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ দেখেছি।অন্যান্য জীবের জন্য, আমাদের কাছে কম ডেটা উপলব্ধ রয়েছে এবং আমরা প্রকৃতপক্ষে গড় থেকে কোনও পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না।এটা প্রশ্নাতীত যে আমরা জীববৈচিত্র্যের বেশ বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করছি এবং বিভিন্ন জায়গায় আমরা যে ধরনের জীববৈচিত্র্য দেখতে পাই”।

মাছের প্রজাতি সঙ্কুচিত হওয়ার প্রভাব কেবল তাদের শারীরিক আকারের ক্ষেত্রে হচ্ছে তা নয়,এটি তাদের প্রজনন ক্ষমতাকে হ্রাস করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে,যা ভবিষ্যতে সমুদ্রে মাছের সংখ্যা হ্রাসের অন্যতম কারণ হতে পারে।সমুদ্রে এই মাছের ঘাটতি খাদ্য নিরাপত্তাকে যেমন প্রভাবিত করতে পারে তেমন মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল সম্প্রদায়ের জীবিকা নির্বাহের জন্য মারাত্মক পরিণতি ঘটাতে পারে।

এই সমস্যাটি সমাধান করার জন্য একটি বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন। প্রথম এবং সর্বাগ্রে, গ্লোবাল হিটিং প্রশমন এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর প্রচেষ্টা অপরিহার্য। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমিত করার জন্য জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, আমরা সামুদ্রিক জীবনের উপর বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারি। সেইসাথে সামুদ্রের একটি এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসাবে স্থাপন করে মাছের সংখ্যার সংরক্ষণ করার পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

খবরটি শেয়ার করুণ

2 thoughts on “বিজ্ঞানীদের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে কিছু মাছের প্রজাতি সঙ্কুচিত হচ্ছে”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে

উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top