

উত্তরাপথঃ রাখিবন্ধন যা রক্ষা বন্ধন নামেও পরিচিত, এটি ভারতের বিভিন্ন অংশে এবং সারা বিশ্বের প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে পালিত একটি পবিত্র উৎসব। এটির অপরিসীম সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতিতে। এটি ভাইবোনদের মধ্যে ভালবাসা এবং সুরক্ষার বন্ধনের প্রতীক। আমাদের দেশে রাখির ইতিহাস আরও কয়েক শতাব্দী আগের , বিভিন্ন কিংবদন্তি এবং ঐতিহাসিক ঘটনা এর সঙ্গে যুক্ত।
রাখিবন্ধন সাথে যুক্ত একটি জনপ্রিয় কিংবদন্তি হল মেওয়ারের রানী কর্ণাবতী এবং সম্রাট হুমায়ুন। ১৬ শতকে, যখন মেওয়ার গুজরাটের বাহাদুর শাহের কাছ থেকে আসন্ন আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছিল, তখন রানী কর্ণাবতী সম্রাট হুমায়ুনের কাছে একটি রাখি পাঠিয়েছিলেন, তাঁর সাহায্য ও সুরক্ষার জন্য। অন্যদিকে হুমায়ূন তাকে তার বোন মনে করে সাথে সাথে তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন। এই ঐতিহাসিক ঘটনাটিকে প্রায়ই রাখি দ্বারা প্রতীকী বন্ধন এবং সুরক্ষার উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
আরেকটি কিংবদন্তি হল যমুনার, মৃত্যুর দেবতা যমের বোন। এটা বিশ্বাস করা হয় যে যমুনা যমের কব্জিতে একটি পবিত্র সুতো বেঁধেছিলেন, যা তাকে (যম) অমরত্ব দিয়েছিলেন।এরপর যম ঘোষণা করেছিলেন যারা তাদের বোনের কাছ থেকে রাখী গ্রহণ করবে সে সুরক্ষা এবং সৌভাগ্য পাবে।
রাখি শুধুমাত্র ভাইবোনের মধ্যে বন্ধনের উদযাপনই নয়, ইতিহাসেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়, রাখি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্য ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে কাজ করেছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভারতীয়দের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের বোধ জাগানোর উপায় হিসাবে রাখি বাঁধার এই উৎসবটিকে উৎসাহিত করেছেন।
আজ, রাখিবন্ধন উৎসব ভারত জুড়ে অত্যন্ত উৎসাহ এবং আনন্দের সাথে পালিত হয়। আজও বোনেরা তাদের ভাইদের হাতে রঙিন এবং আলংকারিক রাখি বেঁধে, তাদের ভালবাসা, সম্মান এবং ভাই এর দীর্ঘায়ু কামনা করেন, বিনিময়ে, ভাইরা উপহার দেয় এবং সারা জীবন তাদের বোনদের রক্ষা করার শপথ নেয়।এছাড়া রাখি রক্তের সম্পর্কের সীমানা অতিক্রম করে ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এমনকি প্রতিবেশীদেরও ভালবাসা, ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করে ।
রাখির ইতিহাস প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনী, কিংবদন্তি এবং ঐতিহাসিক ঘটনার গভীরে নিহিত। সময়ের সাথে সাথে এটি একটি লালিত উৎসবে পরিণত হয়েছে যা ভাইবোনের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করে এবং সমাজের সমস্ত মানুষের মধ্যেঐক্য ও সুরক্ষা বিস্তার করে।
আরও পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন