সম্পাদকীয়-  প্রশ্নের মুখে ভারতীয় মশলা

এতদিন ভারতীয় মশলা  তাদের উচ্চমানের জন্য পরিচিত ছিল।এটা খুবই দুঃখজনক এবং উদ্বেগজনক যে ভারতীয় মশলা কোম্পানিগুলোকে নিয়ে  বিশ্ব বাজারে প্রশ্ন উঠছে। সিঙ্গাপুর এবং হংকং-এ কিছু ভারতীয় মশলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা ভারতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম মশলা উৎপাদনকারী এবং রপ্তানিকারক দেশ। এক্ষেত্রে ভারতীয় মসলার উপর কোনো আপত্তি তার সুনামকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই, ভারত সরকার সিঙ্গাপুর এবং হংকং-এর খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে এই বিষয়ে যথাযথভাবে বিস্তারিত অভিযোগ জানতে চেয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠাতে এই দুই দেশের ভারতীয় দূতাবাসকে নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকারও তার নিজস্ব স্তরে তদন্ত করছে এবং অভিযুক্ত ভারতীয় কোম্পানিগুলির কাছ থেকে সম্পূর্ণ বিবরণ চাওয়া হয়েছে। মসলা নিয়ে এসব দেশ থেকে আগে থেকেই অভিযোগ আসছিল, কিন্তু পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছল কী করে যে সেখানে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রয়োজন হল। খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো প্রায়শই রেকর্ড পর্যায়ে অভিযোগের প্রতিকার করেছে ,তারপরও এই মশলা কোম্পানিগুলোর কী অবহেলার কারণে এই  নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হল?

প্রাথমিক অভিযোগ বা আলোচনা থেকে জানা যায় যে প্রশ্নে থাকা পণ্যগুলি অনুমোদিত সীমার বেশি কীটনাশক ইথিলিন অক্সাইডের মত কীটনাশকের কথিত উপস্থিতির কারণে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাহলে কি কোম্পানিগুলি বেশি উৎপাদন বা লাভের জন্য মানের সাথে আপস করেছে? সরকারের উচিত অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে পাবলিক ডোমেনে দিয়ে দেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে সমস্ত মসলা উৎপাদনকারীরা সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে।

সিঙ্গাপুর এবং হংকং থেকে আরও অফিসিয়াল তথ্য পাওয়ার পর সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোনও ভারতীয় সংস্থা বা তার পণ্য অযথা লক্ষ্যবস্তু না করা হয়। অন্যদিকে ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার মতো অঞ্চল থেকে নতুন মশলা এবং স্বাদের উত্থান ভারতীয় মশলাকে প্রতিযোগিতার সামনে দাঁড় করিয়েছে। বিশ্বে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা যত বাড়ছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও বাড়ছে। মনে রাখতে হবে, বিশ্ব যখন ভারতকে ওষুধ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে জানতে শুরু করেছে, তখন কিছু দেশে আমাদের দেশের তৈরি অনেক ওষুধকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।

তবে এটাও সত্য যে আমাদের দেশের কিছু কিছু সংস্থা তাদের পণ্যের মান নিয়ে দেশও প্রশ্নের মুখে। সুতরাং এই উদ্বেগগুলিকে সামনে রেখে এবং তাদের পণ্যের গুণমান এবং সুরক্ষা উন্নত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে, ভারতীয় কোম্পানিগুলি বিশ্ব বাজারে তাদের অব্যাহত সাফল্য নিশ্চিত করতে পারবে। এই অবস্থায় আমাদের গুনমান নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলিকে আরও বেশী সতর্ক হতে হবে যাতে প্রতিটি দ্রব্যের গুণমান দেশ ও দেশের বাইরে বজায় থাকে। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে আমাদের পণ্যের মান যাতে চীনা পণ্যের মত নিকৃষ্ট না হয়।চীনা পণ্য শুধুমাত্র তার সস্তা দামের জন্য বিশ্ব বাজারে টিকে রয়েছে। ভারতকে বিশ্ব বাজারে নিজের উপস্থিতি ঠিক রাখতে আরও বেশী সতর্ক থাকতে হবে, মনে রাখতে হবে অভিযোগ প্রতিটি ব্যবসার একটা দিক।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে

উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top