সরকারি চাকরিতে দুর্নীতি  ছিল, আছে  এবং  থাকবে

উত্তরাপথ

ছবি সৌজন্য : এইচ টি

সরকারি চাকুরি ও নিয়োগ দুর্নীতি একে অপরের পরিপূরক। আমাদের দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের একই দৃশ‍্য। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে  নিয়োগ প্রায় নেই-ই। যদিও  কোথাও সামান্য  কিছু নিয়োগ হচ্ছে তাতে পর্বত প্রমাণ দুর্নীতি। পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, ডাব্লুবিসিএস অফিসার পদে নিয়োগ, পঞ্চায়েত কর্মী সহ আশা কর্মী নিয়োগ, গ্রুপ সি কর্মচারী নিয়োগ সর্বত্র সরকারি চাকরিতে দুর্নীতির অভিযোগ সম্প্রতি এসএসসি র নিয়োগ দুর্নীতি এর ব্যতিক্রম নয়। দুর্নীতির এই তালিকা প্রতিদিন দীর্ঘ থেকে  দীর্ঘতর হচ্ছে। এখনো পযর্ন্ত  এসএসসিতে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার লেনদেন  হয়েছে বলে খবর। এর আগে বাম আমলেও সরকারি চাকুরীতে  নিয়োগে বহু  দুর্নীতি হয়েছে। তবে পার্থক্য একটাই  তৃণমূল আমলে দুর্নীতির মূল কথাই হল ফেলো  কড়ি, নাও  চাকুরি। কিন্ত বাম আমলে বেশিরভাগ  সরকারি চাকুরি  সংরক্ষিত ছিল তাদের পাটি ক‍্যাডারদের জন‍্য। এক একটি পরিবার থেকে দুই /তিন জন করে কমরেড সরকারি চাকুরি হস্তগত করতেন। তারপর বাকি ক্ষেত্রে ফেলো কড়ি, নাও  চাকরি। সম্প্রতি ‘স‍্যাট’  এর একটি রিপোর্ট সামনে এসেছে  সেখানে বাম আমলে খাদ্য দপ্তরে ৬১৪ জন  কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে।

নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ শুধু বাংলায় নয় সর্বভারতীয় স্তরে নিয়োগের ক্ষেত্রেও রয়েছে। সাধারণ চাকরি তো বটেই, দুর্নীতির স্পর্শ এড়াতে পারছেনা  বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাকেন্দ্র, সেনাবাহিনী  সহ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মতো সংস্থাগুলো। মধ‍্যপ্রদেশের ব‍্যাপম  কেলেঙ্কারি,  এছাড়াও পাঞ্জাব, আসাম, জম্মু, রাজস্থান সহ প্রায় সমস্ত রাজ‍্যে  নিয়োগে দুর্নীতির ঘটনা সামনে আসছে। সম্প্রতি  অরুনাচল প্রদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চাকরিতে সরাসরি  আর্থিক লেনদেনের  অভিযোগে সিবিআই  এফআইআর দায়ের করেছে। রেলের ক্ষেত্রেও  এই ধরনের  অভিযোগ প্রায়ই ওঠে।  নিয়োগ প্রক্রিয়াতে কখনও  অর্থ, কখনও  স্বজন পোষণ  আবার কখনও দলীয় পক্ষপাত যা ঘিরে তৈরী হচ্ছে  আইনি জট এবং ব‍্যহত হচ্ছে নিয়োগ প্রক্রিয়া, ফলে কর্মসংস্থান অধরাই থাকছে  শিক্ষিত বেকারদের।

যদিও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনও  দুর্নীতির  অভিযোগ মানতে  নারাজ  কেন্দ্র  ও  রাজ‍্য উভয়  সরকারই।  প্রশ্ন করলে কেন্দ্র, রাজ‍্য সরকারগুলোর দুর্নীতির প্রসঙ্গ তোলে আর রাজ‍্য কেন্দ্র বা অন্য  রাজ্যগুলোর দুর্নীতির তথ‍্য সামনে আনবে। এইভাবে বছরের পর বছর  নিয়োগ বন্ধ। লাখ লাখ শিক্ষিত যুবক -যুবতী উপযুক্ত কর্ম সংস্থানের অভাবে বসে আছে। তাদের জীবন থেকে একের পর এক মূল‍্যবান বছর চলে যাচ্ছে। কর্মসংস্থানকে কেন্দ্র করে তৈরী হচ্ছে  অসন্তোষ। বিভিন্ন রাজ্যে চাকরি প্রার্থীদের ক্ষোভ এখন রাস্তায় এসে পড়েছে। ন‍্যায় বিচারের আশায় তারা আদালতে যাচ্ছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মতো বিচারপতিরা লাখ লাখ চাকরি প্রার্থীদের একমাএ ভরসার জায়গা। তবে যে  সংখ্যক  চাকুরি  প্রার্থী ন‍্যায়বিচার পাচ্ছে সেই সংখ্যাটা খুবই সামান্য। সারা দেশের ক্ষেত্রে হিমশৈলের চূড়া মাত্র। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতাই আসার আগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যতই  তাদের আপসহীন মনোভাব দেখাক সরকারি চাকরিতে দুর্নীতি  ছিল, আছে  এবং  থাকবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top