সিলেবাস বিতর্কে মানুষের ক্রমবিকাশ তত্ত্ব

উত্তরাপথ

ছবি: Cradle of Humankind মেরোপেঙ গুহা, সাউথ আফ্রিকা।

ইতিহাস বই থেকে মুঘল যুগ সংক্রান্ত অধ্যায় বাদ পড়েছে আগেই। এবার বিজ্ঞানের পাঠ্যক্রম থেকে ছাঁটা হল চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদের তত্ত্ব। সিবিএসই বোর্ডের নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রম থাকবে না বিবর্তনবাদ। এন সি আর টি -র এই সিদ্ধান্তের নিন্দায় সরব হয়েছেন দেশের প্রধান সারির বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানীদের মতে, এটা শিক্ষার উপহাসের সামিল। চিঠিতে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞানের বোধ গড়ে তোলার জন্য বিবর্তনের জ্ঞান থাকা দরকার। নইলে বিজ্ঞান শিক্ষা অপূর্ণ থেকে যাবে। বিবর্তন অধ্যায় বাদ দিয়ে প্রকৃত শিক্ষার সঙ্গে উপহাস করা হয়েছে। বিবর্তন শুধু বিজ্ঞান নয়, চারপাশের পৃথিবীটাকে বোঝার জন্যও দরকারি। বিজ্ঞান এবং দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিক বুঝতে ডারউইনের তত্ত্ব কার্যকর।

ছবি: মেরোপেঙ মিউজিয়াম (মেরোপেঙ গুহা, সাউথ আফ্রিকা) থেকে তোলা।

এনসিইআরটি-র উদ্দেশে খোলা চিঠি পাঠিয়েছে ‘ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি’ নামে দেশের একটি স্বেচ্ছাসেবী বিজ্ঞান সংগঠন। ওই সংগঠনের  চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন আইআইটি, আইআইএসইআর, টাটা ইনস্টিটিউটের মতো দেশের একাধিক প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ১৮০০ বিজ্ঞানী, বিজ্ঞান শিক্ষক এবং বিশেষজ্ঞ।কোভিডের অতিমারির পর ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনোর বোঝা কমানোর জন্য পাঠ্যক্রম কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নেয় ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি। সেই প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞানের বইয়ের নবম অধ্যায় ‘বংশগতি ও বিবর্তন’কে বদলে শুধু ‘বংশগতি’ রাখা হয়েছে। শিক্ষাবিদরা মনে করেছিলেন, এটা একটা শিক্ষাবর্ষের জন্যই করা হয়েছিল। তবে এখন স্থায়ীভাবে তা পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি) নামে যে সংস্থা দেশে সিলেবাস ‘র‍্যাশনালাইজেশনে’র কাজ করে থাকে, তারাই দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান টেক্সটবুক থেকে এই বিষয়টি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।দেশের বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদরা অনেকেই মনে করছেন, যে দক্ষিণপন্থী আদর্শের দল এখন ভারতে ক্ষমতায় রয়েছে তাদের সমাজদর্শন ও ধ্যানধারণার ভিত্তিতেই এনসিইআরটি এই পদক্ষেপ নিয়েছে।ভারতের কোনও কোনও বিজ্ঞানী এমনও দাবি করছেন যে  হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে ভগবান বিষ্ণুর যে ‘দশাবতারে’র কথা বলা হয়েছে – তাতে বিবর্তনবাদ ডারউইনের থিওরির চেয়ে অনেক ভালভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত ভারতের  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রথম দফার সরকারেই বিবর্তনবাদ নিয়ে তীব্র বিতর্ক উসকে দিয়েছিলেন তৎকালীন মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সত্যপাল সিং। তাঁর যুক্তি ছিল, “কেউ কি কখনো দেখেছে একটা বাঁদরকে ধীরে ধীরে মানুষে পরিণত হতে।  মানুষ যখন থেকে পৃথিবীতে এসেছে, তখন থেকেই সে মানুষই ছিল” বলেও দাবি করেছিলেন তিনি।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে

উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top