অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্ত উপভোগ করেছি ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণে-অধ্যাপক ডঃ নিমাই চন্দ্র দে

পরিবারের সাথে অধ্যাপক ডঃ নিমাই চন্দ্র দে

আজ আমরা যাকে নিয়ে লিখতে চলেছি তিনি হলেন বাঁকুড়া শালডিহা কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ডঃ নিমাই চন্দ্র দে। তিনি কোনও রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার প্রাপ্ত বা নিদেনপক্ষে রাজ্যসরকারের পুরষ্কার প্রাপ্ত কোনও অধ্যাপক নন। তবে তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, আসানসোল, রানিগাঞ্জ, রঘুনাথপুর, বর্ধমান, দুর্গাপুর, আরামবাগ, বিষ্ণুপুর সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে। তাঁর এই বিপুল জনপ্রিয়তা যে কোনও ব্যক্তির ঈর্ষার কারণ হতে পারে ।

শোনা যায় ডঃ দে’র জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ তিনি এমন একজন অধ্যাপক যিনি ভৌত রসায়নের (Physical Chemistry) মত জটিল বিষয়কে খুব সহজ ভাবে ছাত্রছাত্রীদের কাছে উপস্থাপন করতেন। তারফলে ভৌত রসায়ন তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় বিষয় হয়ে উঠেছিল। এখনও বাঁকুড়ায় রসায়ন নিয়ে আলোচনা করতে হলে ডঃ নিমাই চন্দ্র দে’র নাম অবশ্যই আলোচনায় আসবে ।

তাঁর প্রাক্তন ছাত্রদের কথায় আজ থেকে প্রায় ২০-২৫ বছর আগে থেকে দক্ষিণবঙ্গের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা দেশে ও বিদেশে ভৌত রসায়নে তাদের উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। তাদের এই কৃতিত্বের বড় অংশের দাবীদার ডঃ দে। তাদের মতে স্যার চাইলেই শহরের কোনও বড় কলেজে অধ্যাপনা করতে চলে যেতে পারতেন,কিন্তু স্যার গ্রামের ছাত্রদের কথা ভেবে কথাও যাননি

আজ ডঃ দে’র তৈরি ছাত্ররা দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান যেমন DRDO, ISRO, BARC, IIT, NIPER, IISER, NIT, CSIR, NISER সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এছাড়া তাঁর বহু ছাত্রছাত্রী সরাসরি শিক্ষকতার সাথে যুক্ত।

আজ ডঃ দে’র সাথে তাঁর কর্মজীবন সহ তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন উত্তরাপথের প্রধান সম্পাদক গার্গী আগরওয়ালা মাহাতো

উত্তরাপথঃ আপনি কেন শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন?

ডঃ দেঃ আমি ছাত্রাবস্থা থেকেই নীচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট কোচিং দিতে শুরু করি পরিবারের কিছু আর্থিক বাধ্যবাধকতার কারণে। এরপর আমি যখন M.Sc. পড়তে শুরু করি তখন আমার সহপাঠীদের কিছু অর্থের বিনিময়ে কঠিন বিষয়গুলো বুঝিয়ে দিই এর আগে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে একটি বিদ্যালয়ে সাম্মানিক শিক্ষক হিসাবে কাজ করি এবং তখন থেকেই শিক্ষকতা পেশার উপর আমার আগ্রহ বাড়তে থাকে। এছাড়া আমার সংগ্রামী জীবনে আমার শিক্ষকেরা আমার জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তারা আমাকে নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে,সহানুভূতি দিয়ে আমার পাশে থেকেছেন। আমিও সেই সময়েই প্রতিজ্ঞা করি আমি শিক্ষক হয়ে আমার ছাত্রছাত্রীদের পাশেও চিরকাল এই ভাবেই থাকব। সেই ভালোবাসা থেকেই আমার এই শিক্ষকতার পেশায় আসা।

উত্তরাপথঃ শুনেছি আপনি পুরুলিয়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহন করেন, তারপর দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আপনি বাঁকুড়া শালডিহা কলেজের রসায়নের অধ্যাপক হন। আপনার জার্নি সম্পর্কে যদি কিছু বলেন যাতে আগামী দিনে অন্যরাও অনুপ্রেরণা পায়।

ডঃ দেঃ হ্যাঁ, আমার জন্ম ২৭সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ সালে পরাধীন ভারতে পুরুলিয়ার এক গ্রামে। আমি যখন ছোট সেই সময় আমার বাবা মারা যান।আমার মা কে সংসারের সমস্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেই সময় দেশ সদ্য স্বাধীন হয়েছে দেশে পর্যাপ্ত  পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। সবনিয়ে এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে আমাকে বড় হতে হয়েছে। তবে আমার মা আমাকে পড়াশুনার ব্যাপারে সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন,আমার পাশে থেকেছেন এবং অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তাঁর সীমিত সামর্থ্য দিয়ে। এরপর ষষ্ঠ শ্রেণীতে পরার সময় আমি একটি বৃত্তি পাই। এরপর আমি অনার্স পাশ করি সেখানেও মাস্টারমশায়রা আমাকে  অনেক সাহায্য করেন এরপর M.Sc.পাশ করি এবং তাতে ভালো ফল করি। তারফলে তৎকালীন শালডিহা কলেজের সম্পাদক মহাশয় স্বর্গত আশ্বিনী কুমার পতি মহাশয় আমাকে শালডিহা কলেজে যোগদান করার জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং আমি শালডিহা কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করি। ১৯৭১ সালের ১লা এপ্রিল থেকে ২০০৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমি শালডিহা কলেজে অধ্যাপনা শুরু করি। কিন্তু আমার অধ্যাপনার জীবনও অত সহজ ছিল না। কিন্তু আমি বরাবর নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে অধ্যাপনার জগতে নিজের কিছু অবদান রাখার চেষ্টা করেছি। তাই আমি বাকিদেরও বলব তোমরা যে কাজই কর মন দিয়ে কর তাতেই সফলতা আসবে।

উত্তরাপথঃ অধ্যাপনার জীবনে আপনার গর্বের মুহূর্ত কোনটি?

ডঃ দেঃ আমার জীবনে Ph D করার খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু চাকুরি করার জন্য তা সম্ভব হচ্ছিলনা। ১৯৭৬ সালে UGC-র একটা স্কিম আসে, সেই স্কিমে আমি PhD করার জন্য ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ৪ বছর সবেতন ছুটি পাই। সেই সমই আমি Indian schools of mines ধানবাদ থেকে গবেষণা করি এবং ১৯৮০ সালে  PhD ডিগ্রী পাই। আমার অধ্যাপনার জীবনে এটি আমার এক বিশেষ গর্বের মুহূর্ত।

উত্তরাপথঃ আপনি যখন নিজে ছাত্র ছিলেন সেই সময়ের আপনার বিশেষ কোনও অভিজ্ঞতা?

ডঃ দেঃ আমার ছাত্র জীবন অসংখ্য তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা কারণ দারিদ্র মানুষকে পদে পদে অপমানিত করে। আমার ছাত্র জীবনে আমি রান্না করে, বাজার করে অসম্ভব কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে গেছি। আমি অনার্স পড়ার জন্য যখন বিষ্ণুপুর রামানন্দ কলেজে ভর্তি হয় সেখানেও অনার্সের কোনও পরিকাঠামো ছিলনা কারণ আমরাই অনার্সের প্রথম ব্যাচ ছিলাম। সেই সময় আমি অনেক পরিশ্রম করে অনার্সেও ভালো ফল করি। যারা আমাকে সেই সময় সাহায্য করেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন গুনিয়াদা স্কুলের মাস্টার মশায় যামিনী মোহন পন্ডা, বিষ্ণুপুর রামানন্দ কলেজের অধ্যক্ষ রমাপতি ভট্টাচার্য মহাশয় এবং আরও কয়েকজন শিক্ষক আমার জীবনের উন্নতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

উত্তরাপথঃ বতর্মান শিক্ষার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি আপনাকে সবচেয়ে বেশী হতাশ করে?

ডঃ দেঃ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় চাকুরিহীনতা আমাকে সবচেয়ে বেশী ব্যথিত করে। যখন ভালো ভালো ছাত্র ছাত্রীরা Ph.D. এবং Post doc.করে এসে আমাকে বলে স্যার কোনও চাকুরির অফার পাচ্ছিনা এটি আমাকে খুব ব্যথিত করে ।

উত্তরাপথঃ আপনি কিভাবে আপনার ছাত্রদের মূল্যায়ন করবেন? আপনার ছাত্রদের কে কোথায় প্রতিষ্ঠিত?

ডঃ দেঃ আমার প্রথম দিকের ছাত্রছাত্রীদের বেশীর ভাগ প্রত্যন্ত গ্রামের পরিকাঠামো বিহীন অবস্থার মধ্যদিয়ে বড় হয়েছে। তারপর তারা যখন এই কলেজে ভর্তি হয় সেই সময় দেখেছি তাদের প্রচণ্ড সংগ্রাম করে এগিয়ে যেতে। বর্তমানে আমার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সবাই দেশে – বিদেশের বিভিন্ন উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত। আমার ছাত্রছাত্রীদের তালিকা খুব দীর্ঘ। তবে এই মুহূর্তে আমি দুই – এক জনের কথা বলতে পারি একজন হলেন ডঃ সুশান্ত ব্যানার্জী আই আই টি খড়গপুরের প্রফেসর এবং অন্যজন ডঃ আদিনাথ মাঝি বিশ্ব ভারতীর কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান।

উত্তরাপথঃ আপনার শিক্ষকতার যাত্রাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

ডঃ দেঃ আমার শিক্ষকতার জীবন খুব একটা সহজ ছিল না। ১৯৭১ সালে কলেজে যোগদান করার পর ১৯৭২ সালে কলেজের সহযোগী শিক্ষকদের সহযোগিতায় রসায়ন বিভাগের অনার্স কোর্স খুলতে সক্ষম হই এবং খুব কম সময়ের মধ্যে আমরা এটিকে কলেজের একটি প্রাইম সাবজেক্টের বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হই । আমি যখন ক্লাসে পড়াতাম এবং ছাত্রছাত্রীরা তা বুঝতে পারত সেটা আমাকে খুব আনন্দ দিত। আমাদের কেমিস্ট্রি বিভাগ থেকে বহু ছাত্র ভালো রেজাল্ট করে বেরিয়েছে।

উত্তরাপথঃ এই দীর্ঘ অধ্যাপনার জীবনে কোনও উল্লেখযোগ্য স্মরণীয় মুহূর্ত?

ডঃ দেঃ আমি খুব এই দিক থেকে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি যে আমি আমার অধ্যাপনার জীবনে একটি নয়,অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্ত উপভোগ করতে পেরেছি আমার প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণে। আমি যখন শুনি তারা বড় বড় পদে প্রতিষ্ঠিত এটা আমার কাছে খুব আনন্দের এবং খুব স্মরণীয় মুহূর্ত।

উত্তরাপথঃ শিক্ষকতা একটি সহজ না কঠিন কাজ। আপনি কিভাবে এটিকে দেখেন?

ডঃ দেঃ আমার মতে শিক্ষকতা একটি কঠিন কাজ, এটি অন্য আর পাঁচটি কাজের মত নয়। এখানে একজন শিক্ষককে সব সময় তাঁর চালচলন, পোশাক-আশাক, কথাবার্তা মার্জিত রাখতে হয় যাতে অন্যরা তা অনুকরণ করে নিজেকে একজন দায়িত্ববান এবং আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে পারে। তাই আমি এটিকে একটি দায়িত্বপূর্ণ কঠিন কাজ বলে মনে করি।

উত্তরাপথঃ রসায়নে আপনি বাঁকুড়া তথা দক্ষিণ বঙ্গের একজন জনপ্রিয় অধ্যাপক ছিলেন। বর্তমানে আপনি কিভাবে সময় কাটান?

ডঃ দেঃ ২০০৬ সালে অবসর গ্রহণের পর আমি কেমিস্ট্রি অনার্সের ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার জন্য আমার সমস্ত কেমিস্ট্রি অনার্সের নোটপত্রগুলিকে টাইপ করে এবং প্রায় ৯৬ টির মত রসায়নের সাম্মানিক স্তরের উপযোগী ভিডিও লেকচার ইউ টিউবে আপলোড করেছি। এছাড়া আমি একটি বই লিখেছি Thermodynamics- Principles and Applications নামে যেটি New Central Book Agency প্রকাশ করেছে।

উত্তরাপথঃ আমাদের বতর্মান শিক্ষক বা আগামীদিনের শিক্ষক বা ছাত্রদের জন্য বিশেষ কোন বার্তা?

ডঃ দেঃ আমাদের বতর্মান শিক্ষক বা আগামীদিনের শিক্ষক বা ছাত্রদের কাছে একটি বার্তা  ছাত্রশিক্ষক সম্পর্ক যেন মধুর থাকে। যাতে শিক্ষকও ছাত্রকে স্নেহ দিয়ে কাছে টেনে নেয় আর ছাত্রও শিক্ষকের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দিতে পারে।

উত্তরাপথঃ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ডঃ দেঃ আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।

ডঃ দে’র সাথে সাক্ষাৎকারের মাঝে

ডঃ দে’র সম্পর্কে তার ছাত্রছাত্রীদের মতামত জানতে দেখুন সাহিত্য ও শিল্পের পাতায়।

খবরটি শেয়ার করুণ

4 thoughts on “অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্ত উপভোগ করেছি ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণে-অধ্যাপক ডঃ নিমাই চন্দ্র দে”

  1. Dr. Dibyendu Sekhar Bag

    Dear Editor-in-Chief,
    I must appreciate your effort and thank you much for your initiative for highlighting our well respected professor, Dr. Nimai Chandra Dey. I also got a chance to remember my old days, remembrance with sir and his blessings to me. Also you gave us the opportunity to express our feelings which is merely small with respect to his calibre and potential to be appreciated. He is more than a Rastrapati Awardee and he is an example of it in my opinion.
    Finally I wish your Uttarapath to highlight many more of similar kind and it’s popularity and progress.

    Regards,
    Dr Dibyendu Sekhar Bag
    DMSRDE (DRDO), Ministry of Defence, Govt. Of India
    Kanpur-208013

  2. Respected Sir,
    প্রণাম জানাই সুদূর ব্যাঙ্গালোর থেকে I নিজেকে গর্বিত অনুভব করি যখন মনে হয়, কম দিনের জন্যে হলেও আমিও আপনার ছাত্র I আপনার সান্নিধ্য এবং আশীর্বাদ না পেলে বুঝতে পারতাম না আপনি কতটা ইউনিক I আপনার কোনো তুলনা হ়না না স্যার I আপনার কোনো দ্বিতীয় হয় না I পুরস্কারের অনেক উর্ধে আপনি I আপনি ভালো থাকুন, আপনি সুস্থ থাকুন স্যার I অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই উওরাপথ.com কে তাদের এইরকম একটি প্রতিবেদন উপস্থাপনার জন্য I

    With best regards !
    Sunil Mandal
    Joint Director
    (Strategic Missilrs System)
    Min of Defence
    Govt of India
    Bangalore/560013

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে

উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top