আদৌ  বিরোধী ঐক্য সম্ভব? 

উত্তরাপথ

যে কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সুস্থ গণতন্ত্রের কার্যকারিতার জন্য শক্তিশালী বিরোধী দলের উপস্থিতি অপরিহার্য। বিরোধী দলগুলো ক্ষমতাসীন দলকে জবাবদিহি করতে, বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান এবং বিকল্প সরকার হিসেবে নিজেদের উপস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর ঐক্য প্রায়ই জল্পনা-কল্পনা ও বিতর্কের বিষয় হয়ে থেকে যায়। এই প্রতিবেদনের লক্ষ্য কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিরোধী ঐক্যে’র সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা ।

বিরোধী ঐক্যের সম্ভাবনা নির্ধারণকারী প্রাথমিক কারণগুলির মধ্যে একটি হল ,একটি সাধারণ আদর্শগত ভিত্তির উপস্থিতি। বিরোধী দলগুলো যদি একই ধরনের মূল্যবোধ, নীতি ও নীতির উদ্দেশ্য ভাগ করে নেয়, তাহলে তাদের পক্ষে একত্রিত হয়ে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে লড়াই করা সহজ হয়ে যায়। সদ্য অনুষ্ঠিত পাটনায় ১৫ টি ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শগত দল কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী ঐক্যের সম্ভাবনা নিয়ে প্রথম পর্যায়ের বৈঠকে বসেন ।যদিও সেখান থেকে এখনো কোনও সমাধান সুত্র বেরিয়ে আসেনি তবে এবিষয়ে কিছু বলার আগে আমাদের পরবর্তী বৈঠক যা এই মাসের ১৩-১৪ তারিখ বেঙ্গালুরুতে হওয়ার  কথা তাঁর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

বিরোধী ঐক্যের ক্ষেত্রে আরেকটি বড় বাঁধা হল বিরোধী দলগুলির নিজস্ব রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং আকাঙ্ক্ষা । এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলি এর আগের লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী ঐক্য গড়তে দেয়নি, কারণ দলগুলি সম্মিলিত পদক্ষেপের চেয়ে তাদের নিজ নিজ রাজ্যে নিজেদের পার্টির স্বার্থকে অগ্রাধিকার  দিয়েছিল। নেতৃত্বের আকাঙ্খা, নির্বাচনী কৌশল এবং দলীয় মতাদর্শের পার্থক্য আগামী দিনেও বিরোধী ঐক্যের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

 বিরোধী দলগুলির এই জোট যেহেতু একটি নির্বাচন ভিত্তিক জোট।তাই নির্বাচনে জয়লাভ এবং সরকার গঠনের প্রেক্ষাপটে এই জোটগুলি পরিচালিত হয়। বাকি সময় জোটের দলগুলি তাদের স্বতন্ত্র পরিচয় হারানোর ভয়ে একে অন্যদের সাথে সারিবদ্ধ হতে দ্বিধা করতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে ব্যক্তিগত শত্রুতাও বিরোধী ঐক্যকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টিকে বাদ দিলে বিরোধী দলগুলির সবগুলি যেহেতু  আঞ্চলিক দল তাই তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক এজেন্ডা থাকে। এসব আঞ্চলিক আকাঙ্খা কখনো কখনো জাতীয় পর্যায়ের বিরোধী ঐক্যের ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জোট গঠনে ১৫ টি দলের মধ্যে যেমন তৃণমূল রয়েছে ,তেমন কংগ্রেসও রয়েছে আবার বাম দলগুলিও রয়ছে।পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও বাম একত্রে তৃণ্মুলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাই আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির বিরুদ্ধে কিভাবে পশ্চিমবঙ্গে ওয়ান ইজ টু ওয়ান প্রার্থী দিয়ে লড়াই এর কৌশল ঠিক হয় তাঁর উপর নির্ভর করবে এই রাজ্যে জোট গঠনের সম্ভাবনা।

যদিও আমাদের দেশে  বিরোধী দলগুলির মধ্যে সম্পূর্ণ ঐক্য অর্জন করা চ্যালেঞ্জিং,তবে ইতিহাসে এমন উদাহরণ রয়েছে যেখানে বিরোধী দলগুলি সফলভাবে ক্ষমতাসীন দলকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য একত্রিত হয়েছে। বিরোধী ঐক্যের মাত্রা নির্ভর করবে দলগুলোর নিজেদের মতভেদ কাটিয়ে ওঠে, কার্যকর বিরোধী দল হিসাবে কতটা ভোটারদের সামনে নিজেদের একটি ঐক্যফ্রন্ট হিসাবে উপস্থাপন করতে পারে তার উপর।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


আগামী ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে কি সলমন খানকেও দেখা যাবে কলকাতায় ?

উত্তরাপথ: একেই বলে রথ দেখা কলা বেচা। এলেন ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের শতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে,আর বাড়তি পাওনা হিসেবে পেয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে একান্ত সাক্ষাতের সুযোগ।  কালো টয়োটা এসইউভি ডব্লিউবি০২এএন৬৬৪৯ গাড়িতে করে বিকেল ৪টে ২০ মিনিটে পৌঁছেযান মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে। অবশ্য রাস্তায় উপচে পড়া ভিড়ের জন্য দু'বার দাঁড়াতে হয়েছিল গাড়িতে থাকা সুপারস্টারকে। পুলিশি নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢোকে সলমন খান। আগেই নিজের টালির চালার বাড়ির সামনে আটপৌড়ে শাড়িতে অপেক্ষায় .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রয়াত "কালবেলা"-র স্রষ্টা সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার

উত্তরাপথ: সাহিত্য একাডেমি পুরুষ্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার কলকাতার এক বেসরকারী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ফুসফুস ও শ্বাসনালীর সংক্রামণের কারনে তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ১৯৪২ সালে উত্তরবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্ম এই বিখ্যাত লেখকের।ষাটের দশকের গোড়ায় তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। ভর্তি হয়েছিলেন স্কটিশ চার্চ কলেজের বাংলা (সাম্মানিক) স্নাতক বিভাগে৷ এর পর স্নাতকোত্তর  সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সমরেশ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য .....বিস্তারিত পড়ুন

৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল: হাইকোর্ট ও পর্ষদের টানাপড়েন অব্যাহত   

উত্তরাপথ: সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রাথমিকের ৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে আর তাই নিয়ে শুরু হয়েছে যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির খেলা। বিচারপতির বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সময় এই শিক্ষকেরা অপ্রশিক্ষিত ছিলেন আর এই 'অপ্রশিক্ষিত প্রাথমিক শিক্ষকদের' নিয়োগ করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা এবং সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ে। এই পদ্ধতির ত্রুটির কারণে এই শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল করা হল। .....বিস্তারিত পড়ুন

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় শিলিগুড়ির প্রাথমিক শিক্ষকরা

উত্তরাপথ: ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তার প্রতিবাদে শনিবার শিলিগুড়িতে পথে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন শিলিগুড়ির প্রাথমিক শিক্ষকরা। ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার ভিত্তিতে ২০১৬ সালে নিযুক্ত হয়েছিলেন ৪২ হাজার ৫০০ শিক্ষক। এই নিয়োগে ইন্টারভিউতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এমনকি নিয়োগ পরীক্ষায় অ্যাপটিটিউড টেস্টও নেওয়া হয়নি বলে ইন্টারভিউয়াররাই বিচারপতির কাছে সাক্ষ্য দিয়ে জানিয়েছেন। তার ভিত্তিতে ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দেন কলকাতা .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top