

পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা ‘র প্রস্তুতি পর্ব ।ছবি – মৈত্রেয়ী চৌধুরী
মৈত্রেয়ী চৌধুরীঃ দুর্গাপূজা, শুধুমাত্র মজা এবং উল্লাস নয়, পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা মানে এক বিশাল অর্থনৈতিক লেনদেন। দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গে উদযাপিত সবচেয়ে বড় উৎসব, এটি পশ্চিমবঙ্গের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতীক। এই ধর্মীয় ও সামাজিক দিকগুলির বাইরে, দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গত বছরের এক তথ্যে প্রকাশ সারা রাজ্যে ৪০,০০০ টিরও বেশি দুর্গাপূজা ক্লাব রয়েছে । রাজ্যে উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয় তিন-চার মাস আগে থেকে। দুর্গাপূজার এই প্রস্তুতির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত থাকে কমপক্ষে দুই-তিন লক্ষ লোক যা রাজ্যের অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দুর্গাপূজার সময় রাজ্যে ভারত সহ বিদেশ থেকে এক বিশাল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে।উৎসবকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত সজ্জা, শৈল্পিক ভাস্কর্য এবং বিশাল শোভাযাত্রা পর্যটকদের আকর্ষণ করে ।পর্যটকদের এই বিশাল আগমন পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্পকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে।সেইসাথে হোটেল, গেস্টহাউস, রেস্তোরাঁ এবং পরিবহন পরিষেবাগুলিরও চাহিদা বৃদ্ধি পায়,যা রাজ্যের রাজস্ব বৃদ্ধি সহ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে।
দুর্গাপূজা তার জটিল কারুকাজ করা মূর্তি এবং শৈল্পিক সজ্জার জন্য পরিচিত। উৎসবটি মৃৎশিল্পী, ভাস্কর, চিত্রশিল্পী এবং মণ্ডপ কারিগরদের তাদের দক্ষতা এবং কারুকার্য প্রদর্শনের জন্য একটি উপযুক্ত ক্ষেত্র প্রদান করে। প্রতিমা্র বিভিন্ন সাজসজ্জার সামগ্রীর চাহিদা এই সময় তুঙ্গে থাকে । শোলা শিল্পের সাথে যুক্ত কারিগরদের জন্য এই সময় এক বিরাট বাজার তৈরি হয়, যা স্থানীয় শিল্পী এবং কারুশিল্পের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের এক উল্লেখযোগ্য কর্ম সংস্থান তৈরি করে। সারা বছর ধুকতে থাকা এই ক্ষেত্রটি উৎসবের মরসুমে সারা বছরের ক্ষতি পূর্ণ করে লাভের মুখ দেখে, যা রাজ্যের অর্থনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদান করে।
দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে লোকেরা প্রচুর নতুন জামাকাপড় এবং আনুষাঙ্গিক কেনাকাটায় লিপ্ত হয়। টেক্সটাইল এবং ফ্যাশন শিল্প এই সময় চাহিদা বৃদ্ধির সাক্ষী কারণ ব্যক্তিরা শাড়ি, কুর্তা-পাজামা এবং আনুষাঙ্গিক সহ ঐতিহ্যবাহী পোশাক ক্রয় করে। স্থানীয় তাঁতি, দর্জি এবং ডিজাইনারদের ব্যবসা এই সময় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পায়,যা বস্ত্র খাতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে।
খাদ্য পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপূজা উদযাপনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রাস্তার খাবারের বিক্রেতা, রেস্তোরাঁ এবং মিষ্টির দোকানগুলির বাইরে এই সময় লম্বা লাইন দেখা যায়। রসগোল্লা এবং সন্দেশের মতো ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের চাহিদা এই সময় বেশি হয়। খাদ্য ও আতিথেয়তা শিল্পও এই সময় চাহিদা বৃদ্ধির সাক্ষী, যা রাজ্যের সামগ্রিক বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।
পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা হল সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক এবং উদ্ভাবনী প্যান্ডেল (সজ্জিত অস্থায়ী কাঠামো) তৈরি করার জন্য বিখ্যাত। এখানে বিভিন্ন পূজা কমিটির মধ্যে এই নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতার একটি আনন্দময় পরিবেশ তৈরি হয়। এই সময় বিজ্ঞাপন এবং বিপণন সংস্থাগুলি এই প্যান্ডেলগুলির প্রচার এবং দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুর্গাপূজা এই সংস্থাগুলির জন্য তাদের সৃজনশীলতা এবং দক্ষতা প্রদর্শনের একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ প্রদান করে, যার ফলে তাদের এই সময় ব্যবসা এবং আয় বৃদ্ধি পায়।
দুর্গাপূজার অর্থনৈতিক প্রভাব নির্দিষ্ট শিল্পের বাইরেও বহু দূর বিস্তৃত। এটি বিপুল সংখ্যক লোকের জন্য অস্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। প্রতিমা তৈরি এবং প্যান্ডেল নির্মাণের সাথে জড়িত কারিগর এবং শ্রমিক থেকে শুরু করে অনুষ্ঠান সংগঠক, নিরাপত্তা কর্মী এবং পরিষেবা কর্মী, পুরোহিত, ঢাকি, প্রতিমা পরিবহনের সাথে জড়িত শ্রমিক এবং ‘ভোগ’ এবং খাবারের ব্যবস্থার সাথে যুক্ত ক্ষেত্র সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে,এবং অনেকের জন্য এটি সারা বছরের আয়ের এক উল্লেখযোগ্য উৎস ।
পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে দুর্গাপূজার প্রভাব যথেষ্ট । সেই সাথে দুর্গাপূজার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।আমাদের দেশের অর্থনীতিতে দুর্গাপূজার প্রভাব ব্রাজিলের অর্থনীতিতে রিও ডি জেনিরো কার্নিভাল এবং জাপানে চেরি ব্লসম উৎসবের অবদানের সমান বা বেশি। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি এই পুজাকে আরও বিশ্বজনীন করে তুলেছে।
আরও পড়ুন
Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি
উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়
উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে। সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন