পুরুলিয়া জেলা বিজেপি সভাপতি বদলের দাবি, নাড্ডার দ্বারস্থ দলের বিধায়করা

উত্তরাপথঃ চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার অভিযোগ পুরুলিয়া জেলা বিজেপি-র মধ্যে ।  বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে দেওয়া পুরুলিয়ার পাঁচ গেরুয়া বিধায়কের একটি চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। আর তাতেই প্রবল অস্বস্তিতে পুরুলিয়া জেলা বিজেপি  নেতৃত্ব। ওই চিঠিতে বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গাকে বদলের দাবি জানানো হয়েছে নানা কারণ দিয়ে। আর তাঁকে ঘিরেই পুরুলিয়া জেলা বিজেপিতে শুরু হয়েছে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা একেবারে প্রকাশ্যে। যে পাঁচ বিধায়ক ওই চিঠিতে সই করেছেন, তারা অবশ্য জানিয়েছেন ওই চিঠি ২০২১ সালের।

বছর দুয়েক আগেও পুরুলিয়া জেলা বিজেপি সভাপতি বিবেক রাঙ্গাকে সরানোর জন্য দাবি ওঠে দলের অন্দরে সেই সময় পাঁচ গেরুয়া বিধায়কই দলের সর্বভারতীয় সভাপতির কাছে চিঠি দেন। তাহলে কি এটি সেই পুরনো চিঠি ? তবে বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা বলেন, “সাংগঠনিকভাবে এই বিষয়ে আমি কোনও তথ্য পাইনি। এটা তৃণমূলের পরিকল্পনা। আমাদের জেলা সংগঠনে কোথাও কোনও গোষ্ঠী-কলহ বা সমস্যা নেই। এইসব গোষ্ঠী চলে তৃণমূলে। সেই কারণেই দলীয় নির্দেশ অমান্য করে পুরুলিয়ায় তাদের একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান হয়ে যাচ্ছে।”

বছর দুয়েক আগে বিবেক রাঙ্গা পুরুলিয়া জেলা বিজেপি সভাপতির দায়িত্ব পান। তারপর থেকেই দলের মধ্যেই দাবি ওঠে তাঁকে সরানোর জন্য। সেই সময় জেলার একাধিক বিধায়ক দলের কেন্দ্রীয় স্তরে সরানোর এই দাবি রাখেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা পুরুলিয়ার সাংসদ) তথা রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর ঘনিষ্ট হওয়ায় তাঁকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরানো যায়নি। এদিকে রবিবার জে পি নাড্ডার সঙ্গে বঙ্গ বিজেপির বৈঠক। ওই বৈঠকে থাকবেন এই জেলার বিধায়করাও। তবে কাশীপুরের বিজেপি বিধায়ক কমলাকান্ত হাঁসদা বলেন, “ওই চিঠি ২০২১ সালের। রবিবার আমাদের সর্বভারতীয় সভাপতির সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। সেই কারণে আমি কলকাতা যাচ্ছি।” ওই চিঠিতে বিধায়ক কমলাকান্ত হাঁসদা ছাড়াও পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের সই রয়েছে। এছাড়া ওই চিঠিতে সই রয়েছে জয়পুরের বিধায়ক নরহরি মাহাতো, বলরামপুরের বিধায়ক বানেশ্বর মাহাতো ও পাড়ার বিধায়ক নদীয়ার চাঁদ বাউরির। তবে এই বিধায়কদের ঘনিষ্ঠ মহল জানিয়েছে, ওই চিঠি এখনকার নয়, কোনওভাবে সেটি ছড়িয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি রাজ্যের একাধিক জেলায় বিজেপির জেলা সভাপতির বদল ঘটে। কিন্তু এই জেলায় কোন বদল হয়নি। ‘গেরুয়া গড়’ বলে পরিচিত এই জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হয়। যদিও পুরুলিয়া জেলা বিজেপি নেতৃত্ব ভরাডুবি মানতে নারাজ। গণনার কারচুপিতেই এমন ফল সামনে এসেছে বলে তাদের অভিযোগ। সেই কারণে কলকাতা হাই কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছে গেরুয়া শিবির। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের প্রার্থী হয়েছিলেন দলের জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা। কিন্তু তিনিও হেরে যান। সবে মিলিয়ে দলের অন্দরে জেলা সভাপতি বদল নিয়ে ব্যাপক জল্পনা চলছে। তবে পুরুলিয়া বিজেপি জেলা সভাপতি বদলের ঘটনা কতটা বাস্তব, আর কতটা প্রচার তা বোঝা যাবে জে পি নাড্ডার সফরের পর।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top