

প্রীতি গুপ্তাঃ শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস ছিলেন ভারতের অন্যতম শ্রদ্ধেয় আধ্যাত্মিক নেতা যিনি দেবী কালীর উপাসক ছিলেন। তিনি জাতপাতের উপরে ওঠে হিন্দুধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন । তার ধর্মীয় মতাদর্শ নাস্তিক স্বামী বিবেকানন্দকে আকৃষ্ট করেছিল। শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসের জন্মকে সম্মান জানাতে প্রতি বছর রামকৃষ্ণ জয়ন্তী পালিত হয়। তাঁর শিক্ষা ও দর্শন কেবল হিন্দুধর্মের উপরই নয়, বিশ্বের আধ্যাত্মিক দৃশ্যপটেও গভীর প্রভাব ফেলেছে। মূলত রামকৃষ্ণ ধারা এবং বেদান্ত সমাজের অনুসারীরা এই দিনটি পালন করেন। ভক্তদের জন্য শ্রী রামকৃষ্ণের জীবন, শিক্ষা এবং আধ্যাত্মিকতায় তার অবদানকে তুলে ধরার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ।
# ঐতিহাসিক পটভূমি
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস ১৮৩৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের কামারপুকুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অল্প বয়স থেকেই তিনি আধ্যাত্মিকতার প্রতি গভীর ঝোঁক এবং ঈশ্বরের সন্ধানে আগ্রহী ছিলেন। দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের পুরোহিত হয়ে তাঁর জীবন এক রূপান্তরকামী মোড় নেয়, যেখানে তিনি দেবী কালীর উপাসনায় নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন। এখানেই তিনি গভীর আধ্যাত্মিক উপলব্ধি এবং ঐশ্বরিক চেতনার বিভিন্ন অবস্থা অনুভব করেন।
রামকৃষ্ণের শিক্ষা সকল ধর্মের ঐক্যের ধারণার গভীরে প্রোথিত ছিল। তিনি জোর দিয়েছিলেন যে বিভিন্ন ধর্ম কেবল একই চূড়ান্ত বাস্তবতার দিকে পরিচালিত করার বিভিন্ন পথ। এই বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে ব্যবধান দূর করতে সাহায্য করেছিল এবং আন্তঃধর্মীয় সংযোগের ভিত্তি তৈরি করেছিল।
বিভিন্ন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব এবং সাধকদের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে শ্রী রামকৃষ্ণের আধ্যাত্মিক যাত্রা আরও সমৃদ্ধ হয়েছিল। স্বামী বিবেকানন্দ, যিনি তাঁর প্রধান শিষ্য ছিলেন এবং পশ্চিম বিশ্বে শ্রী রামকৃষ্ণের শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। রামকৃষ্ণের জীবন ও দর্শন বিবেকানন্দকে ১৮৯৭ সালে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল, যার লক্ষ্য ছিল মানবতার আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উন্নতি।
# রামকৃষ্ণ জয়ন্তী উদযাপন
রামকৃষ্ণ জয়ন্তী অত্যন্ত উৎসাহ ও নিষ্ঠার সাথে পালিত হয়, বিশেষ করে এই রাজ্যের বেলুড মঠে। এই দিনটি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উৎযাপন করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে বিশেষ প্রার্থনা, ভক্তিমূলক গান এবং তাঁর শিক্ষার উপর বক্তৃতা। রামকৃষ্ণ মিশনের সব মন্দিরগুলিতে এইদিন এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই উদযাপনে সাধারণত অন্তর্ভুক্ত থাকে:
১. পূজা এবং আচার-অনুষ্ঠান: ভক্তরা রামকৃষ্ণকে সম্মান জানাতে বিশেষ পূজা (পূজা) করেন, এবং তাঁর বেদীতে ফুল, মিষ্টি এবং ধূপ নিবেদন করেন।
২. আধ্যাত্মিক বক্তৃতা: বিখ্যাত বক্তা এবং পণ্ডিতরা রামকৃষ্ণের জীবন এবং শিক্ষা সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি ভাগ করে নেন, সেইসাথে সমসাময়িক সমাজে এর প্রাসঙ্গিকতার উপর জোর দেন।
৩. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: অনেক সংগঠন সঙ্গীত, নৃত্য এবং নাটক সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যা রামকৃষ্ণের জীবনের পর্বগুলি চিত্রিত করে এবং তাঁর শিক্ষার সারমর্ম চিত্রিত করে।
৪. সেবামূলক কর্মকাণ্ড: নিঃস্বার্থ সেবার উপর রামকৃষ্ণের শিক্ষার চেতনার অনুসারী হয়ে অনেকে দাতব্য কর্মকাণ্ডে জড়িত হন,এবং সমাজের দরিদ্র এবং প্রান্তিক অংশকে সাহায্য করেন।
৫. ধ্যান এবং প্রতিফলন: এই দিন ভক্তরা বিশেষ ধ্যান এবং আত্মদর্শনের জন্য অনেকটা সময় নেন, রামকৃষ্ণের অনুপ্রাণিত গুণাবলী, যেমন করুণা, নম্রতা এবং ভক্তি, মূর্ত করার চেষ্টা করেন।
# সমসাময়িক সমাজের প্রেক্ষাপটে শ্রী রামকৃষ্ণ
রামকৃষ্ণ জয়ন্তী পালনের তাৎপর্য এর উদযাপনের বাইরেও বিস্তৃত; এটি রামকৃষ্ণের প্রদত্ত গভীর জ্ঞান এবং সর্বজনীন শিক্ষার স্মারক হিসেবে কাজ করে। প্রায়শই বিভেদ এবং দ্বন্দ্ব দ্বারা চিহ্নিত এই পৃথিবীতে, তাঁর ঐক্য ও প্রেমের বার্তা ধর্ম, সংস্কৃতি এবং জাতীয়তার সীমানা অতিক্রম করে। তাঁর শিক্ষা এই ধারণাকে প্রচার করে যে সমস্ত ধর্ম একই সত্যের দিকে পরিচালিত করে এবং বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে শ্রদ্ধা এবং বোঝাপড়া বৃদ্ধি করে।
রামকৃষ্ণের জীবন ব্যক্তিদের তাদের আধ্যাত্মিক পথ অনুসন্ধান করতে উৎসাহিত করে, অগণিত সাধকদের নিজেদের এবং মহাবিশ্ব সম্পর্কে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে অনুপ্রাণিত করে।এছাড়াও নিঃস্বার্থ সেবার উপর তাঁর জোর দাতব্য কর্ম এবং সম্প্রদায় সেবাকে অনুপ্রাণিত করে, যা সমাজকে ফিরিয়ে দেওয়ার গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে।আজও রামকৃষ্ণের দার্শনিক অন্তর্দৃষ্টি, বিশেষ করে ঈশ্বর এবং আত্মার প্রকৃতি সম্পর্কে, আধ্যাত্মিক সাধক এবং পণ্ডিতদের উভয়কেই প্রভাবিত করে চলেছে।া
রামকৃষ্ণ জয়ন্তী কেবল স্মরণের দিন নয়; এটি আত্মদর্শন, আধ্যাত্মিক বিকাশ এবং শ্রীরামকৃষ্ণের মূর্ত প্রেম, করুণা এবং সেবার আদর্শের প্রতি পুনর্নিবেদনের একটি সুযোগ। এই দিনটি উদযাপনের মাধ্যমে ভক্ত এবং তাঁর অনুসারীর, নিশ্চিত করেন যে তাঁর উত্তরাধিকার আগামী প্রজন্মের জন্য টিকে থাকবে।
আরও পড়ুন
Mahendra Singh Dhoni: একজন ক্রিকেট কিংবদন্তি
উত্তরাপথ: গত ৭ জুলাই ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির(Mahendra Singh Dhoni) ৪২তম জন্মদিন । তিনি ২০০৭ সালে ভারতের ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন এবং ভারতকে টি -২০ বিশ্বকাপ এনে দেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনি বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের অধিকারী, তার সংগ্রহ ৬,৬৩৩ রান ।উত্তরাপথের পক্ষ থেকে তার জন্মদিনে তাঁর প্রতি রইল বিনম্র অভিনন্দন । মহেন্দ্র সিং ধোনি (Mahendra Singh Dhoni) বা"এমএসডি" যিনি "ক্যাপ্টেন কুল" নামেও পরিচিত, খেলা .....বিস্তারিত পড়ুন
UCC: Uniform Civil Code এবারও অভিন্ন হবে না
উত্তরাপথ: Uniform Civil Code (ইউসিসি) এ বারও ইউনিফর্ম হবে না। গত ৩রা জুলাই সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ ইঙ্গিত দেওয়া হয়। কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রবীণ বিজেপি নেতা সুশীল কুমার মোদি পরামর্শ দিয়েছেন যে উপজাতি সমাজ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বিজেপির এক দিল্লীর নেতার বক্তব্য , তফসিলি উপজাতিরা তাদের নিজস্ব নিয়ম-কানুন তৈরি করে এবং সেগুলি অনুসরণ করে। এই ধরনের লোকেরা সাধারণত বন এবং পাহাড়ে বাস করে।তাদের আদিমতা, ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা, সামাজিক, শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা .....বিস্তারিত পড়ুন
The Dome of the Rock: দ্য ডোম অফ দ্য রক একটি সমৃদ্ধ ইতিহাসের মহিমান্বিত প্রতীক
উত্তরাপথ: দ্য ডোম অফ দ্য রক, জেরুজালেমের (Jerusalem) কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন। আজও এটি শহরের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের একটি প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। টেম্পল মাউন্টে অবস্থিত এই আইকনিক কাঠামোটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করেছে এর মনমুগ্ধরুদ্ধকর সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক তাৎপর্য দিয়ে। এটি উমাইয়া রাজবংশের সময় ৬৮৫ এবং ৬৯১ CE এর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল যা .....বিস্তারিত পড়ুন
Rinku Singh: আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগে বৃন্দাবনে গেলেন
উত্তরাপথ: উত্তর প্রদেশ ও কলকাতা নাইট রাইডার্সের ব্যাটার রিঙ্কু সিংকে (Rinku Singh)নিয়ে জল্পনা, খুব শীঘ্র তাকে দেশের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা যাবে। তার মাঝেই বৃন্দাবনে গেলেন রিঙ্কু। সেখানে বাঁকেবিহারীর মন্দিরে পুজোও দেন তিনি। সেখানে রিঙ্কুর সঙ্গে তাঁর কয়েক জন বন্ধুও ছিলেন। এবারের আইপিএলে কেকেআরের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন রিঙ্কু। তাঁর খেলা নজর কেড়েছিল বর্তমান .....বিস্তারিত পড়ুন