রাশিয়া কি মহাকাশে পরমাণু অস্ত্র রাখতে চাইছে? এটি কি বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ণ করবে ?

উত্তরাপথঃ মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের রাশিয়ার উদ্দেশ্য অনেক বৈশ্বিক নেতা এবং বিশেষজ্ঞদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। গত কয়েক বছর ধরে জল্পনা বাড়ছে যে মস্কো কক্ষপথে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করতে চাইছে, যা সম্ভাব্যভাবে বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে এবং একটি উপগ্রহ-বিরোধী অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে প্রজ্বলিত করতে পারে।

মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র রাখার ধারণাটি নতুন নয়, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়ই স্নায়ুযুদ্ধের সময় এই ধারণাটি অন্বেষণ করেছিল।১৯৬১ সালের মহাকাশ চুক্তি পারমাণবিক অস্ত্র সহ কক্ষপথে গণবিধ্বংসী অস্ত্র স্থাপন নিষিদ্ধ করে। মহাকাশের সামরিকীকরণ রোধ এবং মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বজায় রাখার জন্য এই চুক্তিটি করা হয়েছিল।

এই চুক্তি সত্ত্বেও, ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ রয়েছে যে রাশিয়া এই আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলিকে উপেক্ষা করছে এবং মহাকাশ সামরিকীকরণের সীমানা ঠেলে দিচ্ছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে রাশিয়া “Satan 2,”  নামে একটি নতুন প্রোগ্রাম তৈরি করছে, যা একটি নতুন ধরনের আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র যা মহাকাশ থেকে উৎক্ষেপণ করতে পারে বলে মনে করা হয়। উপরন্তু, রাশিয়া সম্প্রতি একটি নতুন অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে, কক্ষপথে উপগ্রহ ধ্বংস করার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।

মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করা বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনবে। এটি কেবল মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকি বাড়াবে না, তবে এটি সম্ভাব্যভাবে বড় শক্তিগুলির মধ্যে সংঘাতের জন্ম দিতে পারে। কক্ষপথে পারমাণবিক অস্ত্রের উপস্থিতি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং নিরস্ত্রীকরণের প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করে তুলবে, সেইসাথে দুর্ঘটনাজনিত বা অননুমোদিত উৎক্ষেপণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলবে।

তাছাড়াও, মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের ফলে স্যাটেলাইট এবং অন্যান্য মহাকাশ সম্পদ বিপন্ন হবে যা যোগাযোগ, নেভিগেশন এবং নজরদারির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই স্যাটেলাইটগুলি ধ্বংস বা নিষ্ক্রিয় করা জাতীয় নিরাপত্তা এবং বিশ্ব অর্থনীতির উপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এই ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের সমাধান করা এবং মহাকাশের অস্ত্রায়ন রোধ করা অপরিহার্য। বিদ্যমান চুক্তিগুলোকে বহাল রাখার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে এবং মহাকাশের সামরিকীকরণের দিকে নিয়ে যেতে পারে এমন কোনো বৃদ্ধি রোধ করতে হবে। রাশিয়া সহ সকল দেশকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে চলতে হবে এবং মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে।

রাশিয়ার দ্বারা মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার জন্য গুরুতর প্রভাব ফেলবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এই উদ্বেগগুলিকে মোকাবেলা করা এবং খুব দেরি হওয়ার আগেই মহাকাশের সামরিকীকরণ রোধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই হুমকিগুলি উপেক্ষা করা উত্তেজনার বিপজ্জনক বৃদ্ধি এবং সমস্ত জাতির জন্য সম্ভাব্য বিপর্যয়কর পরিণতি হতে পারে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top