শল্যচিকিৎসকরা শূকরের হৃৎপিণ্ডকে ট্রান্সপ্লান্ট করেন, মৃতপ্রায় ব্যক্তিকে বাঁচাতে

শূকরের হৃৎপিণ্ডকে ট্রান্সপ্লান্ট ছবি -এক্স হ্যান্ডেল

উত্তরাপথঃ  ওয়াশিংটনের এক শল্য চিকিৎসক একজন মৃত প্রায় ব্যক্তির জীবন বাঁচানোর জন্য একটি শূকরের হৃৎপিণ্ডকে ট্রান্সপ্লান্ট করেন সেই ব্যক্তির মধ্যে। মেরিল্যান্ড মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের মতে, ৫৮ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বিশ্বের দ্বিতীয় রোগী যিনি জেনেটিকালি পরিবর্তিত শূকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করেছেন, এটি চিকিৎসা গবেষণার ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।

 মানুষের মধ্যে পশুর অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা, যাকে বলা হয় জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন, মানব অঙ্গ দানের দীর্ঘস্থায়ী অভাবের এক কার্যকর সমাধান হতে পারে।বিশ্বের উন্নত থেকে স্বল্প উন্নত সব দেশেই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষার দীর্ঘ তালিকা রয়েছে।

এর আগেও  শূকরের হৃৎপিণ্ডকে ট্রান্সপ্লান্ট এর প্রক্রিয়াটি ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড স্কুল অফ মেডিসিনের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সম্পাদিত হয়েছিল, যেখানে প্রথম রোগী গত বছর তার হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের দুই মাস পরে মারা যায় । অপারেশনের আগে তার স্বাস্থ্যের খারাপ অবস্থা সহ অনেক কারণের কথা হাসপাতালের পক্ষ থেকে  বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ অপারেশনটি বুধবার হয়, রোগী লরেন্স ফাসেট আগে থেকে থাকা ভাস্কুলার রোগ এবং অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের জটিলতার কারণে দান করা মানব হৃদপিণ্ডের জন্য অযোগ্য ছিল। দুই সন্তানের বাবা এবং নৌবাহিনীর এই ব্যক্তির বক্তব্য, আমার একমাত্র বিকল্প এখন শূকরের হৃদপিণ্ড, জেনোট্রান্সপ্লান্টের সাথে যাওয়া।এই পদ্ধতিতে এখনও তার বাঁচার আশা আছে এবং একটি সুযোগ আছে বলে তিনি মনে করেন।  

ট্রান্সপ্লান্টের পর, মিঃ ফাসেট নিজে থেকে শ্বাস নিচ্ছেন এবং নতুন হৃদপিণ্ড “সহায়ক যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই” ভালভাবে কাজ করছে,বলে বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে।তিনি প্রচলিত প্রত্যাখ্যান বিরোধী ওষুধ সেবনের পাশাপাশি একটি নতুন অ্যান্টিবডি থেরাপি গ্রহণ করছিলেন যাতে তার শরীরের নতুন অঙ্গের ক্ষতি বা প্রত্যাখ্যান না হয়।

জেনোট্রান্সপ্ল্যান্ট চ্যালেঞ্জিং কারণ রোগীর ইমিউন সিস্টেম বিদেশী অঙ্গ আক্রমণ করবে।  বিজ্ঞানীরা জেনেটিক্যালি মডিফাইড শূকরের অঙ্গ ব্যবহার করে সমস্যাটি দূর করার চেষ্টা করছেন।গত কয়েক বছরে, ডাক্তাররা জেনেটিক্যালি মডিফাইড শূকর থেকে মস্তিষ্ক ,কিডনি সবই রোগীদের দেহে  প্রতিস্থাপন করেছেন।

নিউইয়র্কের এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন হাসপাতাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইনস্টিটিউট এই মাসে ঘোষণা করেছে যে কোমায় চলে যাওয়া একজন রোগীর মধ্যে প্রতিস্থাপিত একটি শূকরের কিডনি একটানা ৬১ দিন ধরে কাজ করছে।

প্রথম দিকে জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন গবেষণা প্রাইমেট থেকে অঙ্গ সংগ্রহের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল — উদাহরণস্বরূপ, ১৯৮৪ সালে “বেবি ফা” নামে পরিচিত একটি নবজাতকের মধ্যে একটি বেবুনের হার্ট প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু সে মাত্র ২০ দিন বেঁচে ছিল।

 বর্তমান জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন গবেষণাগুলি শূকরের উপর ফোকাস করে তাদের মানুষের জন্য  আদর্শ দাতা হিসাবে বিবেচনা করে কাজ করছে। শূকরের অঙ্গের আকার তাদের দ্রুত বৃদ্ধি এর প্রধান কারণ।

দ্বিতীয় শূকরের হৃৎপিণ্ডকে ট্রান্সপ্লান্ট একটি মৃত প্রায় রোগীর জীবন বাঁচাতে চিকিৎসা পেশাদারদের দ্বারা করা অসাধারণ প্রচেষ্টা সন্দেহ নাই। যদিও এই পদ্ধতির সাফল্য  এখনও অনিশ্চিত । জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন কৌশলগুলির অগ্রগতি অব্যাহত থাকায়, এই পরীক্ষামূলক পদ্ধতিটি সম্ভাব্যভাবে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য এক নতুন বিকল্পের পথ প্রশস্ত করবে বলে মনে করা হচ্ছে ।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে

উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top