পেজার বোমা বিস্ফোরণ কি ইসরায়েলকে নিরাপদ করবে?

তারা হয়তো ভেবেছিল বিশ্ব সাধুবাদ জানাবে। এই আবহে একের পর পর পেজার বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল লেবানন ও সিরিয়ার একাধিক এলাকা ৷ মঙ্গলবার দুপুরে একই সঙ্গে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে বলে খবর ৷ এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১৬জন ৷ মৃতদের মধ্যে এক 8 বছরের নাবালিকাও রয়েছে বলে খবর ৷ আহতদের সংখ্যা প্রায় ৫হাজার ৷ মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ৷

ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের জন্য ইজরায়েলের মোসাদ বাহিনীকেই কাঠগড়ায় তুলেছে ইরানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিজবুল্লা ৷ তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে এই হামলা করা হয়েছে ৷ বিস্ফোরণের গতিপ্রকৃতি দেখে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ তবে পেজারের মধ্যে কীভাবে বিস্ফোরণ ব্যবহার করা হল? তা এখনও স্পষ্ট নয় হিজবুল্লা গোয়ান্দাদের কাছে ৷ যদিও এই প্রসঙ্গে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেনি ইজরায়েলি সেনাবাহিনী ।

প্রসঙ্গত পেজার হল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ৷ সাধারণত মোবাইল ফোনের পরিবর্তে এই ডিভাইস ব্যবহার করা হয় ৷ এর ব্যবহারের প্রধান সুবিধা হল এর লোকেশন ট্র্যাক করা যায় না ৷ রেডিয়ো ফ্রিকুয়েন্সি সিগনালের সাহায্যে এই ডিভাইসের মাধ্যমে অতি সহজে যোগাযোগ করা যায় ৷ মূলত, কোডের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা যায় পেজারের সাহায্যে ৷ মোবাইল ফোন ব্যবহারের অনেক আগে থেকে এই ডিভাইস ব্য়বহারের চল রয়েছে পশ্চিমি দুনিয়ার দেশগুলিতে ৷

এখন প্রশ্ন হামলার জন্য কেন পেজারকেই বেছে নেওয়া হল ? তাদের অবস্থান আড়াল করে রাখার জন্য মোবাইল ফোনের বদলে পেজার ব্য়বহার করেন হিজবুল্লার সদস্যরা ৷ তারা যেখানে যান, যোগাযোগের জন্য এই ডিভাইসটি সঙ্গে করে নিয়ে যান ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, কার্যত সেকারণেই ঝাঁঝালো হামলার জন্য পকেটের ভিতরের এই ছোট্ট ডিভাইসটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে ৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হিজবুল্লার নেতার মতে, তারা সাধারণত অন্য একটি ব্র্যান্ডের পেজার ব্যবহার করেন ৷ তবে বিস্ফোরণের জন্য নতুন এক ব্র্য়ান্ডের পেজার ব্যবহার করা হয়েছে ৷

হামলা সম্পর্কে একাধিক তত্ত্ব উঠে এসেছে ৷ যদিও তদন্তকারীরা এই প্রসঙ্গে এখনও কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি ৷ তবে জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন আগে কয়েক হাজার পেজার বানানোর জন্য তাইওয়ানের এক সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয় ৷ বিশেষজ্ঞদের ধারনা, এই প্রক্রিয়ার সময় পেজারের ব্যাটারির মধ্যে বিস্ফোরক ডুকিয়ে দেওয়া হয় ৷ ফলে পেজার ব্যবহারের সময় রেডিয়ো সিগনাল চালু হতেই ঘটে এই বিপত্তি ৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাক্তন ব্রিটিশ সেনায় বোমা নিষ্ক্রিয়কারী কর্তার মতে, একটি বিস্ফোরক যন্ত্রের পাঁচটি প্রধান উপাদান রয়েছে ৷ একটি ধারক, একটি ব্যাটারি, একটি ট্রিগারিং ডিভাইস, একটি ডেটোনেটর এবং একটি বিস্ফোরক চার্জ । একটি পেজারের মধ্যে ইতিমধ্যেই তিনটি উপাদান রয়েছে ৷ ফলে এর সাহায্য়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে অনেক বেশি সুবিধা হয়েছে ৷

বিস্ফোরণের পর সোশাল মিডিয়ায় একাধিক ভিডিয়ো প্রকাশ্য়ে এসেছে ৷ যদিও আমরা সেই সমস্ত ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি ৷ সেখানে দেখা গিয়েছে, বিস্ফোরণের ফলে কারও হাতে চোট লেগেছে, কারও পায়ে চোট লেগেছে ৷ কারও আবার চোট লেগেছে কোমর ও মাথায় ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘটনার তীব্রতা দেখে এটা স্পষ্ট, বহুদিন আগে থেকেই এই হামলার ছক কষা হয়ছিল ৷ বহুদিন ধরে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে তবেই এই হামলা করা হয়েছে ৷ এমনকী,জানা যায় পেজারে নিজের হাতে বিস্ফোরক রেখেছিল হামলাকারী ৷ ফলে এই হামলার পিছনে বড় কোনও চক্রান্ত কাজ করেছে বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের ৷

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে

উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে   ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি  গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ  ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন

Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে

উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top