ঋণের টাকা শোধ করতে ছেলেকে বিক্রি করার জন্য রাস্তায় বসলেন বাবা

ঋণের টাকা শোধ করতে ছেলেকে বিক্রির সিদ্ধান্ত ছবি প্রতীকী

উত্তরাপথঃ এ যেন শাহরুখ খানের বাস্তবের জবান। ঋণ করে সামান্য কিছু জমি কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই ঋণই যে কাঁটার মতো গলায় চেপে বসবে তা কে জানত! শেষ পর্যন্ত ঋণের টাকা শোধ করতে ছেলেকে বিক্রি করার জন্য রাস্তায় বসলেন বাবা। চমকে ওঠার মতো ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে। ফুটপাথে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বাবা বসে আছেন। প্ল্যাকার্ড হিন্দিতে  হাতে লেখা। যার বাংলা মানে করলে দাঁড়ায়, ‘‘ছেলে বিক্রি আছে। আমি আমার ছেলেকে বিক্রি করতে চাই।’’ এই ছবি ছড়িয়ে পড়তেই তৎপর হয় পুলিশ। উত্তরপ্রদেশের এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আবার প্রশ্নের মুখে যোগী রাজ্যের প্রান্তিক মানুষদের অর্থনৈতিক অবস্থা।   

আলিগড়ের ই-রিক্সা চালক রাজকুমার। দারিদ্রের সঙ্গে নিত্য সংঘর্ষই তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ই-রিক্সাটিই রোজগারের একমাত্র উপায়। সেই রাজকুমারই নিজের ছেলেকে বিক্রি করতে ফুটপাথে বসেছেন। ৫-৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে।কিন্তু কেন ছেলে বিক্রি করতে হচ্ছে রাজকুমারকে?

 সূত্রের খবর, ছোট্ট একটি জমি কেনার জন্য স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ করেছিলেন রাজকুমার। কিন্তু অভিযোগ, ওই মহাজনের হস্তক্ষেপে রাজকুমার আর সেই জমি কিনতে পারেননি। ঋণ করা টাকাও জলে যায় রাজকুমারের। ঋণের দায়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েন রাজকুমার। অন্য দিকে, মহাজন টাকা তুলতে অত্যাচার শুরু করেন। রাজকুমারের অভিযোগ, একাধিক বার তাঁর পরিবারকে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে মারধরও করা হয়েছে । এমনকি টাকা না পেয়ে রাজকুমারের ই-রিক্সাটিও মহাজন ছিনিয়ে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সব হারিয়ে অসহায় রাজকুমার স্থির করেন, নিজের ছেলেকেই বিক্রি করে দেবেন। সেই অনুযায়ী, প্ল্যাকার্ড লিখে ফুটপাথে বসে পড়েন স্ত্রী এবং সন্তানের সঙ্গে।

রাজকুমার বলেন, ‘‘টাকা ফেরত চেয়ে মহাজন মাঝেমাঝেই আমার ছেলেমেয়ের সামনে আমাকে মারধর করতেন। বাড়ি থেকে আমাদের কত বার বাইরে বার করে দিয়েছেন। আমার উপার্জনের একমাত্র পথ রিক্সাটিকেও বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছেন। থানায় গেলে ধমক দেয়। আমার এফআইআর-ও নেয়নি পুলিশ।’’ রাজকুমারের দাবি, ইতিমধ্যেই তিনি ঋণের ছ’হাজার টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন। বাকি টাকাও ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু মহাজনের অত্যাচার সীমা ছাড়ায়। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই ঋণের টাকা শোধ করতে ছেলেকে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেই মোতাবেক ফুটপাথে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বসে পড়েন। এমন দৃশ্য সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয় সমাজমাধ্যমে। লাগে রাজনীতির রং। বিষয়টিকে প্রকৃত অমৃতকালের সঙ্গে তুলনা করে নিজের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেন এসপি প্রধান অখিলেশ যাদব। তার পর নড়েচড়ে বসে পুলিশ। অভিযুক্ত মহাজনকে তড়িঘড়ি গ্রেফতার করা হয়। রাজকুমারও ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top