জেনেটিকালি মডিফাই করা ভাত রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে

উত্তরাপথঃ ভাবুন তো উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা কি এক চামচ ভাত খাওয়ার মতোই সহজ হতে পারে। গবেষকরা জেনেটিকালি মডিফাই করা ভাত তৈরি করে এক্ষেত্রে এক সাফল্য অর্জন করেছেন যার মধ্যে অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ পেপটাইড নামে পরিচিত বিশেষ প্রোটিন রয়েছে, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ইঁদুরের উপর পরীক্ষায় দেখা গেছে যে এই ভাত তাদের রক্তচাপের মাত্রা সফলভাবে কমিয়েছে।এই নিবন্ধে জার্নাল অফ এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রিতে প্রকাশিত “হাইপোটেনসিভ অ্যাক্টিভিটি অফ ট্রান্সজেনিক রাইস সিড অ্যাকুমুলেটিং মাল্টিপল অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ পেপটাইডস” শীর্ষক গবেষণার ফলাফলগুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

উচ্চ রক্তচাপ, একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। বর্তমানে, অনেকেই তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ACE ইনহিবিটর নামক ওষুধ গ্রহণ করেন। তবে, এই ওষুধগুলি শুষ্ক কাশি, মাথাব্যথা এবং এমনকি কিডনির সমস্যার মতো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।এই সমস্যা সমাধানের জন্য, গবেষকদের একটি দল বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত খাবারগুলির মধ্যে একটি ভাতকে জেনেটিকালি মডিফাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা ভাতে একটি জিন যুক্ত করেছে যা নয়টি ভিন্ন ACE-ইনহিবিটরি পেপটাইড এবং একটি পেপটাইড তৈরি করে যা রক্তনালীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করে। এই পরিবর্তিত চাল থেকে প্রোটিন বের করার পর, তারা উচ্চ রক্তচাপের ইঁদুরের উপর এটি পরীক্ষা করে দেখেছে। ফলাফলে দেখা গেছে যে চিকিৎসা গ্রহণের দুই ঘন্টা পরে এই ইঁদুরগুলির রক্তচাপ কমে গেছে। পাঁচ সপ্তাহ ধরে ইঁদুরগুলিকে পরিবর্তিত চালের আটা খাওয়ানোর পরেও, তাদের রক্তচাপ আরও এক সপ্তাহ কম ছিল।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, চিকিৎসা করা ইঁদুরগুলির বৃদ্ধি বা স্বাস্থ্যের উপর কোনও নেতিবাচক প্রভাব দেখায়নি। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে যদি এই ফলাফলগুলি মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, তাহলে একজন ব্যক্তি প্রতিদিন এই বিশেষ অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ   পেপটাইড যুক্ত ভাতের আধা টেবিল চামচ খেয়ে তাদের রক্তচাপ কমাতে পারবেন।

অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ পেপটাইড কী?

অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ পেপটাইড হল অ্যামিনো অ্যাসিডের সংক্ষিপ্ত শৃঙ্খল যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই প্রাকৃতিক যৌগগুলি শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন যে কিছু পেপটাইড রক্তনালীগুলিকে শিথিল করে এবং রক্ত ​​প্রবাহ উন্নত করে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপকার করতে পারে।

# ট্রান্সজেনিক ভাতের উপকারিতা

ট্রান্সজেনিক ভাতের বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে। এখানে কিছু মূল বিষয় রয়েছে:

১। এই ভাত অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের একটি প্রাকৃতিক উপায় প্রদান করে।

২। প্রতিদিনের খাবারে এই ভাত অন্তর্ভুক্ত করা সহজ, যার ফলে লোকেরা নিয়মিত এই উপকারী পেপটাইডগুলি গ্রহণ করতে পারে।

৩। এর অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ বৈশিষ্ট্যের বাইরে, ভাত একটি প্রধান খাদ্য যা প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে, এটি একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের চমৎকার সংযোজন।

নতুন এই গবেষণা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ট্রান্সজেনিক চালের সম্ভাবনা তুলে ধরেছে। একাধিক অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ পেপটাইড তৈরি করে, এই চাল উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য একটি নিরাপদ এবং কার্যকর খাদ্যতালিকাগত বিকল্প প্রদান করতে পারে। এই ক্ষেত্রে গবেষণা অব্যাহত থাকায়, আমরা শীঘ্রই এমন সাধারণ খাবার দেখতে পাব যা হৃদরোগ এবং সামগ্রিক সুস্থতার উন্নতিতে সহায়তা করতে পারে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top