১লা সেপ্টেম্বর ২০২৪

কেন ডেজার্টাস পেট্রেল নামে একটি ছোট সামুদ্রিক পাখি ঘূর্ণিঝড়ের দিকে উড়ে যায়?

উত্তরাপথঃসাধারণভাবে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়কে ধ্বংসের সমার্থক বলে মনে করা হয়।কিন্তু এমন একটি সামুদ্রিক পাখি রয়েছে যারা এই ঘূর্ণিঝড়কে তাদের খাবার খুঁজে পাওয়ার সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করে।সম্প্রতি current Biology জার্নালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে যেখানে ডেজার্টাস পেট্রেল, নামে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের এই ছোট পাখিটি, দীর্ঘকাল ধরে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখে দীর্ঘ দূরত্ব উড়ে যায় এবং নিজেদের খাবার খোঁজার চেষ্টা করে।

এই আচরণের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হল যে ঘূর্ণিঝড় সামুদ্রিক পাখিদের খাদ্য খুঁজে পাওয়ার জন্য এক আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি করে। একটি ঘূর্ণিঝড়ের শক্তিশালী বাতাস এবং মন্থনকারী জল মাছ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক জীবনকে পৃষ্ঠের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে, যা সামুদ্রিক পাখিদের তাদের শিকার ধরাকে সহজ করে তোলে। ঘূর্ণিঝড়ের দিকে উড়ে যাওয়ার মাধ্যমে, ডেজার্টাস পেট্রেল ঝড়ের পরবর্তী সময়ে এই অস্থায়ী প্রাচুর্যের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে বলে প্রাথমিক ভাবে বিজ্ঞানীদের ধারনা।

অতিরিক্তভাবে, ডেজার্টাস পেট্রেল হল একটি দীর্ঘতম দূরত্ব অতিক্রম করা পরিযায়ী পাখি, প্রতি বছর এরা প্রজনন এবং থাকার জায়গার সন্ধানে হাজার হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করে। ঘূর্ণিঝড়ের দিকে উড়ে যাওয়ার সময়  এই পাখিটি ঝড়ের কারণে সৃষ্ট শক্তিশালী বাতাসের সাহায্যে সহজেই অনেক দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের সাথে দূরত্ব অতিক্রম করার সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, এই আচরণ বেশ কিছু ঝুঁকি নিয়ে আসে এই পাখিদের জীবনে। এই ধরনের চরম আবহাওয়ায় উড়ে যাওয়ার সময়, শক্তিশালী বাতাস এবং উত্তাল বাতাস পাখিদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তবে , ডেজার্টাস পেট্রেলের বেশীরভাগ ক্ষেত্রে  ঝড় থেকে তৈরি হওয়া সমস্যাগুলি অতিক্রম করার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে, যা তাদের এই চ্যালেঞ্জিং পরিবেশেও নিজেদের খাবার খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

জীববিজ্ঞানী ফ্রান্সেস্কো ভেনচুরা এবং তার সহকর্মীরা একই সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের কার্যকলাপের প্রভাব ডেজার্টাস পেট্রেলের জীবনে কতটা পড়ছে তা ডেটা সহ বিশ্লেষণ করেছেন। তারা চারটি প্রজনন ঋতুতে ৩৩ টি পাখির দেহে জিপিএস লাগিয়ে ,তারপর সেই জিপিএস ইউনিট থেকে ট্র্যাকিং ডেটা একত্রিত করেছেন। এই পাখিদের প্রজনন স্থান ও বসবাস স্থানের মধ্যে ব্যবধান  প্রাণীজগতের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘতম,অর্থাৎ তারা বুজিও দ্বীপে বসবাস করলেও সেখান থেকে প্রায় ১২,০০০ কিলোমিটার দূরে অর্থাৎ ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার উত্তরে, নিউফাউন্ডল্যান্ডের দিকে এর প্রজনন স্থান।বিজ্ঞানীদের মতে শুধুমাত্র  জিপিএস ডেটা তাদের সুনির্দিষ্ট আচরণের উপর আলোকপাত করার জন্য যথেষ্ট  নয়।

ভেঞ্চুরা বলেছেন যদিও “আমরা এখনও চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া থেকে অনেক দূরে রয়েছি,”,তবে তিনি বিশ্বাস করেন ডেজার্টাস পেট্রেল প্রাথমিকভাবে ঘূর্ণিঝড় সনাক্ত করতে ইনফ্রাসাউন্ড ব্যবহার করে।‘ইনফ্রাসাউন্ড ‘ হল বায়ু এবং তরঙ্গ দ্বারা সৃষ্ট এই খুব কম কম্পাঙ্কের শব্দ – যাকে “সমুদ্রের ভয়েস” বলা হয় । এটি শব্দের উৎস থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার প্রসারিত হয়।  জীববিজ্ঞানী ফ্রান্সেস্কো ভেনচুরার মতে , সমুদ্রের এই শব্দ তরঙ্গ অনুসরণ করে পেট্রেলগুলি ঘূর্ণিঝড়ের দিকে উড়তে থাকে।তবে এক্ষেত্রে ডেজার্টাস পেট্রেল হ্যারিকেনকে (ঘূর্ণিঝড় )সুবিধাজনক ভাবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে একমাত্র প্রজাতি নাও হতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারনা।

সামুদ্রিক পরিবেশবিদ লেসলি থর্নের কথায় এই নতুন গবেষণা কিছু সামুদ্রিক পাখির ঝড় তাড়া করে সে সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে যে গুরুত্বপূর্ণ ফাঁক ছিল তা পূরণ করেছে। আরেকটি সামুদ্রিক পাখি, স্ট্রিকড শিয়ারওয়াটার, ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে এবং সাথে উড়ে যায় – সম্ভবত তারাও তাদের বেঁচে থাকার উপায় হিসাবে ঝড়ের আশ্রয় নেয়।নিউইয়র্কের স্টনি ব্রুক ইউনিভার্সিটির থর্ন বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ের সাথে বিপুল পরিমাণ খাবারকে সামুদ্রিক পাখির আচরণের সাথে যুক্ত করা “সত্যিই, সত্যিই দুর্দান্ত ছিল … এটি এমন কিছু যা আজ পর্যন্ত করা হয়নি”। এটি এমন একটি গভীর গবেষণা যা তিনি বিশ্বাস করেন যে সামুদ্রিক পাখিদের সাথে ঝড়ের সম্পর্ক আমাদের আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে

উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন

ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে

উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে   ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি  গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ  ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন