

আস্থার রাজনীতি না কি সত্যি ঘটনা ! রাজনৈতিক লাভের জন্য ধর্মবিশ্বাস কে পুঁজি করার প্রথা আমাদের দেশ তো বটেই বিশ্বেও নতুন নয়। কিন্তু তিরুপতির শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরের নৈবেদ্যগুলিতে পশুর চর্বিযুক্ত ভেজাল ঘি ব্যবহারের বিষয়টিও মন্দিরগুলির পবিত্রতার সাথে সাথে একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত আস্থার সাথে সম্পর্কিত। সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু একটি পাবলিক ফোরামে অভিযোগ করেছেন যে আগের সরকারের আমলে তিরুপতি মন্দিরে প্রসাদ হিসেবে তৈরি লাড্ডুতে ব্যবহারের জন্য ভেজাল ঘি সস্তায় কেনা হয়েছিল।এরপর বিতর্ক শুরু হলে সেই ঘি এর নমুনা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। জানা গেছে,মোট চারটি ল্যাবরেটরিতে এই ঘি এর নমুনা পাঠানো হয়েছিল, এই চারটি রিপোর্টে প্রকাশ ওই ঘি তে মেশানো ছিল পশুর চর্বি। স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে দেশ জুড়ে। অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডি বলেছেন যে চন্দ্রবাবু নাইডু তার রাজনৈতিক লাভের জন্য বিষয়টিকে উস্কে দিয়েছেন। তবে এই বিষয়ে গুরুত্ব দেখিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারও প্রসাদের নমুনা পরীক্ষা করতে বলেছে। কংগ্রেস মন্দিরের পবিত্রতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।অন্যদিকে এই মামলার শুনানি করতে রাজি হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত তিরুপতি বালাজি মন্দির, ভারতের অন্যতম পবিত্র মন্দির এবং বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী ধর্মস্থানগুলির মধ্যে একটি ।প্রাপ্ত তত্ত্ব থেকে জানা যায় এই মন্দিরের প্রধান দেবতার সোনার অলঙ্কার রয়েছে ১০৮৮.৬২ কেজির বেশী এবং রূপার অলঙ্কারগুলির ওজন ৯০৭১.৮৫ কেজি। টিটিডি সীমার মধ্যে রয়েছে ৬০০০ একর বনভূমি, ৭৫টি স্থানে ৭,৬৮৬ একর সম্পত্তি স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে। এছাড়াও ১,২২৬ একর কৃষি জমি, ৬,৪০৯ একর অকৃষি জমি।এছাড়াও মন্দিরের উপার্জনের একটা বড় অংশ আসে মন্দিরে ভক্তদের দেওয়া দান থেকে। প্রতিবছর প্রায় ৪ কোটি ভক্তের সমাগম হয় এই মন্দিরে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
তিরুপতি বালাজি মন্দির তার পবিত্র নৈবেদ্যগুলির জন্য বিখ্যাত, যা মন্দিরের মধ্যে দেবতা ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরের আশীর্বাদ হিসাবে ভক্তদের বিতরণ করা হয় । দূর দূরান্ত থেকে আগত ভক্তরা এই প্রসাদের আধ্যাত্মিক মাহাত্য রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন ।সম্প্রতি এই মন্দিরের প্রসাদের লাড্ডুতে পশুর চর্বিযুক্ত ঘি ব্যবহারের অভিযোগ সামনে এসেছে। এক্ষেত্রে মন্দিরের পবিত্রতা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আশা করা হচ্ছে। মন্দিরে নৈবেদ্য ইত্যাদি নিয়ে বিতর্ক এবং সেগুলোর ব্যবস্থাপনাকে দক্ষ ও স্বচ্ছ করার দাবি দীর্ঘদিন ধরেই উঠে আসছে। তবে তিরুপতি বালাজি মন্দিরের ব্যবস্থাপনা কমিটি অর্থাৎ তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানমকে এই বিষয়ে অত্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক এবং স্বচ্ছ বলে মনে করা হয়। সেখানে ঘি এবং অন্যান্য উপাদানের গুণমান এবং বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করার জন্য একটি অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগার রয়েছে।সেখানে প্রতিটি উপাদানের গুণমান তিনটি স্তরে পরীক্ষা করা হয়। ঘি ইত্যাদি সরবরাহকারী ঠিকাদার প্রতি ছয় মাস অন্তর পরিবর্তন করা হয়। এরপরও যদি সেখানে প্রসাদগুলোর পবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে এটি স্বাভাবিকভাবেই মানুষের ধর্মবিশ্বাস কে আঘাত করবে এবং ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ তৈরি হবে।
মন্দিরের এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর ভক্তদের মধ্যে যেমন ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ,তেমনি রাজনৈতিক মহলেও এই নিয়ে ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং তার নেতারা এরই মধ্যে, বিতর্ককে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক মাইলেজ পেতে পথে নেমে পড়েছে।এক্ষেত্রে রাজ্যের বর্তমান শাসক দল তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি), এই বিষয়ে বিশেষভাবে সোচ্চার হয়েছে, এর নেতা এই বিষয়টির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত দাবি করেছেন এবং মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।অন্যদিকে বিরোধীদল ওয়াইএসআর কংগ্রেসকে এই বিতর্কে দায়ী করা হচ্ছে।তবে এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি শুরু হলেও এই বিতর্ক মন্দিরের সুনামকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে সন্দেহ নাই।
যেহেতু বিতর্কটি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনীতি শুরু হয়েছে তাতে, এটি স্পষ্ট যে এই সমস্যাটি সহজে বা দ্রুত সমাধান করা হবে না। তিরুপতি বালাজি মন্দির হল একটি শ্রদ্ধেয় প্রতিষ্ঠান যা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ ভক্তদের জন্য অপরিসীম আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহণ করে। এই পবিত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা পুনরুদ্ধার করার জন্য ভেজাল বা দুর্নীতির যেকোন অভিযোগ অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত ও সমাধান করতে হবে।তিরুপতি বালাজি মন্দিরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিশ্বাস এবং আস্থা বজায় রাখা অপরিহার্য। পশুর চর্বিযুক্ত ঘি ভেজালের অভিযোগ মন্দিরের প্রশাসনের মধ্যে দুর্নীতি ও অবহেলার বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে। এই ঘটনার গভীরে যাওয়ার জন্য এবং ভবিষ্যতে যাতে মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা উচিত। তবেই আমরা এই পবিত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারব।
আরও পড়ুন
Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি
উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন