মনের মানুষ

স্বপ্নিল আর মধুছন্দা দুই দেহ এক প্রাণ। কলেজ তারপর ইউনিভার্সিটি সর্বত্রই তাদের এতো নিবীড় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হতো। অনেক জুটি আবার তাদের দেখে ঈর্ষা ও করতো। যেমন আদের প্রেম তেমনি সায়েন্স নিয়ে তাদের পড়াশোনা র পারফরম্যান্স ও দুর্দান্ত। একদিন ঘটলো এক ঘটনা।স্বপ্নিল ইউনিভার্সিটি তে এম.এস.সি তে গোল্ড মেডেল পেল অর্থাৎ পদার্থ বিদ‍্যা ডিপার্টমেন্টে প্রথম স্থান পেয়ে উত্তীর্ণ হল। ক‍্যালকাটা প্রেসিডেন্সী তে প্রথম হয়েই রিসার্চের খুব ভালো একটি সুযোগ এলো বিদেশে। বাবামায়ের একমাত্র সন্তান সে, তবু এই সুযোগ হাতাছাড়া হতে দিলেন না তার পিতামাতা। তাই সুযোগ পেয়েই আমেরিকায় গেল স্বপ্নিল। মধুছন্দা, তার কি হলো? এবার আসছি তার কথায়। মধু ছিল জীবন বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। সেই বিভাগে মধুও প্রথম। তবে তার স্বপ্নের উড়ান ছিল একটু অন‍্য রকম , মানে শিক্ষকতা পেশায় আসা। সে প্রেসিডেন্সিতেই এক অধ্যাপকের কাছে পি.এইচ. ডি র কোর্স ওয়ার্ক শুরু করে। তবে কি আলাদা হয়ে গেলো তারা দুজন? না একেবারেই না। দুজন দুজনের কর্মক্ষেত্র নিজেরা পছন্দ করলেও যেমন ছিল তেমনি এই নেট ইনটারনেট দুনিয়া কে কাজে লাগিয়ে থাকবে এই প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয়েছিল তারা দুজনে। কাজের সাথে নিত‍্যদিনের ছোটখাটো সব ঘটনাই তারা একে অপরের সাথে শেয়ার করতো। এইভাবেই দুই বছর পার হলো। কিন্তু দূরত্ব টা যে যন্ত্র সবসময় কাছে একইভাবে বজায় রাখতে পারে না তার প্রমাণ হলো সেই দিন, বারটা ছিলো রবিবার। মধুর বাবা কলেজের প্রফেসর ছিলেন , বর্তমানে রিটার্ড করেছেন। তিনি তার বাল‍্যবন্ধু শিব শঙ্কর বাবুর ছোট ছেলে মৈনাক চ‍্যাটার্জী র সাথে মেয়ে মধুর বিয়ের ব‍্যাপারে কথা দিয়ে রবিবার বাড়িতে নেমন্তন্ন করেন। বাড়িতে কাউকে তিনি কিছু বলেন নি, মৈনাক ইনটান‍্যাশানাল কোম্পানীতে বেশ বড় পোষ্টে চাকুরীরত। তবে এইসব বিষয় গুণাক্ষরে কিছুই জানান নি মধুর বাবা। কারণ সারপ্রাইস দিতে চেয়েছিলেন তিনি।

রবিবার তাই শিব শঙ্কর বাবু তার ছোট ছেলে মৈনাক সহ সকল পরিবারের লোকজনকে সঙ্গে করে আসেন মধুর বাড়িতে। বাবার বন্ধু শিব কাকু ও তার পরিবারের সকলে আসছেন জেনে মধু ও আনন্দিত। সকলে একসাথে রবিবারের মধ‍্যাহ্ন ভোজন শেষ করে গল্প , হাসি মজায় সন্ধ‍্যে পর্যন্ত গড়িয়ে গেল। মৈনাকের ভীষণ পছন্দ হলো মধুকে। তাই বাবাকে পাকা কথাটা আড়ালে জানিয়ে ফেলতে বলল মৈনাক। শিব শঙ্কর বাবুও মধুর বাবাকে জানিয়ে দিলেন আমাদের মধু মাকে পছন্দ হয়েছে। দিন আমরা অতি শীঘ্রই ঠিক করে তোমাদের জানাবো। কথাটা শুনে ই আৎকে উঠে মধু। সকলে চলে যেতেই মধু তার বাবাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় বাবা সম্ভব নয় এই বিয়ে। কারণ জানতে চাইলে সে বাবাকে স্বপ্নিলের ব‍্যাপারে সব জানায়। কথা দিয়ে কথা ফেরানো সম্ভব নয় তাই বিদেশে থাকা বন্ধু কে ভুলে যাওয়াই ভালো, একথা মধুর বাবা জানিয়ে দিল মধুকে আরো বললেন আমি মৈনাকের সাথেই তোমার বিয়ে অতিশীঘ্রই দেবো, যদি অন‍্যথা করো তবে মায়ের মতো আমিও চির জীবনের জন‍্য তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো। উদ্ভ্রান্তের মতো মধু বাড়ির বাইরে বেড়িয়ে ঘুরতে লাগলো রাতে বেলা। হঠাৎ কি মনে করে সে নিজেই স্বপ্নিলকে ফোন করলো। স্বপ্নিল ফোন ধরেই বলল মধু একটু পরে আমি এখন ভীষণ ব‍্যস্ত, বলেই ফোন কেটে দিল স্বপ্নিল।

রাত এগারোটা ফিরে এসে বাড়িতে কি যেন খুঁজে চলেছে মধু। রাত একটা তবু তার খোঁজ থামে না। কি খুঁজছে সে? হঠাৎ মাথা ঠান্ডা করে সে নিজেই ভাবলো কিন্তু ভেবে পাচ্ছে না। টেবিলে মাথা গুঁজে চেয়ারে বসে ই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো সে। কখন যে সকাল দশটা বেজে গেছে টের পায় নি। বাড়ির মেড সারভেন্ট ডেকে তুলতেই মধু সারা শরীরে অত্যন্ত যন্ত্রণা অনুভব করলো। মাথাটাও যেন তুলতে পারছে না। ঠিক, ঠিক তখনই স্বপ্নিলের ফোন এলো। মধু একটা দারুন খবর আছে তোমার জন‍্য, ক্ষীণ স্বরে কি কি খবর, স্বপ্নিল -কি হলো মধু তোমার গলাটা এমন শোনাচ্ছে কেন?যাই হোক শোন আমি এখানে রিসার্চ করতে এসেই একটি ভালো জব অফার পেয়ে গেছি। এবার জব আর রিসার্চ একসাথে ই করতে পারবো। কি হলো ?বলো কিছু। মধু অতি কষ্টে নিজেকে স্থির করে বলল আজ তোমাকে বলবো অনেক কিছু। বলে সে গতোকালের সবকথা জানালো স্বপ্নিলকে। অট্টহাসি হেসে স্বপ্নিল বলল আরে গতোকাল চ‍্যাটানি স‍্যার মানে যার আন্ডারে জব ও রিসার্চ দুটোই করবো তিনিও আমাকে এই রকমই একটি অফার দিয়েছেন জানো। তবে আমি কোন রেসপন্স করি নি।

মধু আমি হইতো আর দেশে না ও ফিরতে পারি। তাই আঙ্কেল যা বলছেন তা মেনে নিতে পারো। মধু কি আর ইউ জোকিং, না না আমি খুব সিরিয়াসলি বলছি। কেটে দিল ফোনটা মধু। তারপর চারদিন হয়ে গেল স্বপ্নিল একটিও ফোন করলো না। মধু বুঝতে পারলো পুরুষ সমাজটি এইরকমই। বাবা , স্বপ্নিল কেউ যখন আমাকে বুঝলো না তবে আমার এই জীবনে বেঁচে থাকার যৌক্তিকতা কি? আমার মনের মানুষ তবে কে?স্বপ্নিল না মৈনাক? টেবিল থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো মেঝেতে। আজ আমার সাথে তোমার ও মুক্তি। মধুর বাবা যখন বিষয়টি জানতে পারলেন তখন তাড়াতাড়ি ছুটলেন হসপিটালে, কিন্তু ততক্ষণে সবশেষ। তাকিয়ে দেখলেন লাল বেনারসী শাড়ি পড়ে মধু বধূর সাজে বিদায় নিয়েছে আর তার হাতে একটি কাগজ, যাতে রক্তে ভেজা সব লেখা তবে একটি লেখা জ্বলজ্বল করছিল তা হলো মনের মানুষ টি কে???-

— মৈত্রেয়ী চৌধুরী

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে

উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top