

উত্তরাপথঃ সকালে কাজে বসার সময় ঘুমিয়ে পড়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেকের উৎপাদনশীলতা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। এই নিবন্ধে, আমরা এই সমস্যার পিছনে থাকা বিজ্ঞানীয় কারণগুলো বিশ্লেষণ করব এবং সমাধানের জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত পরামর্শ দেব। আমরা ঘুমের চক্র, জৈবিক ঘড়ি, জীবনযাত্রার প্রভাব, ঘুমের ব্যাধি, চিকিৎসা সংক্রান্ত অবস্থা, এবং কাজ সংক্রান্ত কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
ঘুমের চক্র এবং জৈবিক ঘড়ি
মানুষের শরীর একটি সার্কাডিয়ান রিদম বা জৈবিক ঘড়ি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা প্রায় ২৪ ঘণ্টার চক্রে কাজ করে। এই ঘড়ি আমাদের ঘুম এবং জেগে থাকার সময় নিয়ন্ত্রণ করে। গবেষণা বলছে, সকালে ঘুমিয়ে পড়ার একটি প্রধান কারণ হতে পারে এই সার্কাডিয়ান রিদমের সাথে আমাদের জীবনযাত্রার অমিল। উদাহরণ হিসেবে, শিফট কাজ বা অসমান ঘুমের সময়সূচী এই চক্রকে ব্যাহত করতে পারে, যা সকালে ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এটি বিশেষ করে শিফট কাজকারীদের মধ্যে সাধারণ এক সমস্যা, যেখানে তাদের ঘুমের প্যাটার্ন বিঘ্নিত হয়।
ঘুমের বিভিন্ন পর্যায়, যেমন REM (র্যাপিড আই মুভমেন্ট) এবং নন-REM ঘুম, আমাদের মানসিক এবং শারীরিক সতেজতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অপর্যাপ্ত ঘুম বা ব্যাহত ঘুমের চক্র এই পর্যায়গুলোকে প্রভাবিত করে, যা সকালে ঘুমের ভাব সৃষ্টি করতে পারে।
জীবনযাত্রার প্রভাব
জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাস সকালের ঘুমের ভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। নিচের তালিকায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেওয়া হল।
কারণ | বিস্তারিত |
অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচী | প্রতিদিন ভিন্ন সময়ে ঘুমানো এবং জাগা জৈবিক ঘড়িকে বিঘ্নিত করে। |
অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম | রাতে নীল আলো মেলাটোনিন উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করে, যা ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ (Chang et al., 2015, https://www.pnas.org/doi/10.1073/pnas.1418490112). |
অপুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস | অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা চিনি শরীরের শক্তির মাত্রাকে অস্থির করে। |
শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা | ব্যায়ামের অভাবে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমে, যা ক্লান্তি সৃষ্টি করে। |
ঘুমের ব্যাধি এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত অবস্থা
কিছু ঘুমের ব্যাধি এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত অবস্থা সকালে ঘুমের ভাব সৃষ্টি করতে পারে। নিচের তালিকায় কিছু উদাহরণ রয়েছে:
অবস্থা | বিস্তারিত |
ঘুমাপনা (স্লিপ অ্যাপনিয়া) | রাতে শ্বাসরোধের কারণে ঘুম বিঘ্নিত হয়, যা দিনের বেলায় ক্লান্তি সৃষ্টি করে (Medical News Today, 2024, https://www.medicalnewstoday.com/articles/waking-up-tired). |
অনিদ্রা (ইনসোমনিয়া) | ঘুমানোর ক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে পারে, যা সকালে ক্লান্তি বাড়াতে পারে। |
পা কাঁপানোর রোগ | রাতে ঘুমানোকে ব্যাহত করতে পারে, যা দিনের বেলায় ঘুমের ভাব সৃষ্টি করে। |
রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) | শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে, যা ক্লান্তি সৃষ্টি করে। |
মানসিক চাপ বা অসুখ | ঘুমের গুণগত মানকে প্রভাবিত করতে পারে, যা সকালে ক্লান্তি বাড়াতে পারে। |
কাজ সংক্রান্ত কারণ
কাজ সংক্রান্ত কারণগুলোও ঘুমের প্যাটার্নকে প্রভাবিত করতে পারে। দীর্ঘ কাজের সময়, উচ্চ চাপ, এবং শিফট কাজ ঘুমের চক্রকে ব্যাহত করতে পারে, যা সকালে ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে শিফট কাজকারীরা প্রায়ই ঘুমের সমস্যায় ভোগেন, যা তাদের কাজের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে (Frontiers in Psychology, 2020, https://www.frontiersin.org/articles/10.3389/fpsyg.2020.00045/full).
সমাধানের উপায়
সকালে ঘুমিয়ে পড়ার সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য নিম্নলিখিত কৌশলগুলো কার্যকর হতে পারে:
- নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী মেনে চলুন, প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং জাগুন।
- রাতে স্ক্রিন সময় কমান, বিশেষ করে ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন, ক্যাফেইন এবং চিনিযুক্ত খাবারের পরিমাণ কমান।
- দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করুন, যেমন হাঁটা বা যোগব্যায়াম।
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ধ্যান, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, বা মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করুন।
- যদি ঘুমের ব্যাধি থাকে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন; উদাহরণস্বরূপ, অনিদ্রার জন্য কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT-I) একটি প্রভাবশালী চিকিৎসা বিকল্প।
সকালে কাজে বসার সময় ঘুমিয়ে পড়া একটি জটিল সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণের মিশ্রণে হতে পারে। তবে, নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
বিঃদ্রঃ – এই নিবন্ধে ব্যবহৃত তথ্য ২০২৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সর্বশেষ গবেষণার উপর ভিত্তি করে তৈরি।
আরও পড়ুন
Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি
উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন