সম্পাদকীয়- NEET-পরীক্ষার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন

আমাদের দেশে উচ্চ শিক্ষা থেকে শুরু করে চাকরী সবটাই নির্ভর করে রয়েছে পরীক্ষার উপর।এই দুই ঘণ্টার টিক চিহ্ন দিয়ে উত্তর দেওয়ার প্রক্রিয়ায় ঠিক করে দেয় ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ। তবে এই পরীক্ষার স্বচ্ছতা দিয়ে আমাদের দেশে বিতর্ক দীর্ঘ দিনের, আর হবে নাই বা কেন? যে ২ ঘণ্টার পরীক্ষা এক জন ছাত্র বা ছাত্রীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয় সেখানে দুর্নীতির বাড়বাড়ন্ত হওয়া খুব স্বাভাবিক। এই বছর জাতীয় যোগ্যতা-কাম-প্রবেশ পরীক্ষা (NEET) ঘিরে বিতর্ক দেশের চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত পদ্ধতিগত সমস্যাগুলির উপর আবার আলোকপাত করেছে।এই অবস্থায় কেন্দ্রের নতুন সরকারের উচিত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার হারানো বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা । এতে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা যেমন লাঘব হবে তেমনি পড়াশুনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রছাত্রীদের মনে জমতে থাকা হতাশা দূর হবে।

NEET-পরীক্ষায় সমস্যা রয়েছে। সম্প্রতি এই পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। কোথাও কোথাও ওএমআর শিটে ত্রুটির অভিযোগ আসছে। সমস্যা হল এই যে, যারা এই প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ নিয়েছে বা যারা গ্রেস মার্কের সুবিধা পেয়েছে, তাদের সংখ্যা খুবই কম, বেশিরভাগ  ছাত্রছাত্রীর কারচুপির এই পুরো ঘটনার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।

কিন্তু আসল সমস্যা ভোগ করতে হচ্ছে এই ছাত্রছাত্রীদের। যারা সৎভাবে পড়াশুনা করে সাফল্য লাভ করার পরও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করছে। অন্যদিকে পরীক্ষা বাতিলের দাবী উঠছে।পরীক্ষা বাতিল হলে আবার দিতে হবে? সেক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য আমরা কি করে বলতে পারি যে পরীক্ষা বাতিল হলে আমরা আবার এত নম্বর পাব? আবার পরীক্ষা বাতিল না হলে আদালতের সিদ্ধান্তের আগে কাউন্সেলিং হওয়ার সম্ভাবনা কম কারণ যদি আদালতের সিদ্ধান্তের আগে কাউন্সেলিং করা হয় এবং তার পরে সিদ্ধান্ত ভিন্ন হয়?

আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল আবার পরীক্ষা হলে তাতে কারচুপি হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? অন্যদিকে সন্তানের চেয়ে অভিভাবকরা বেশি চিন্তিত। এর কারণ আমাদের ভারতীয় পিতামাতাদের জন্য, শিশুদের ভবিষ্যত একটি অত্যন্ত আবেগপূর্ণ বিষয়। আসলে, বাবা-মায়েরা চান তাদের জীবনে সমস্যা বা বাধার কারণে তারা যা করতে পারেনি সন্তানেরা সেটা করুক।এক্ষেত্রে বেশীরভাগ পিতামাতার বক্তব্য আমি ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটা পারিবারিক সমস্যার কারণে হতে পারিনি আমি চাই আমার ছেলে বা মেয়ে আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করুক ,তাতেই মনে শান্তি ।আমাদের সন্তানদের ডাক্তার করার চাহিদা বাবা –মায়েদের মধ্যে যত বড়ছে NEET-কে কেন্দ্র করে দুর্নীতি তত বাড়ছে।  

এই বছরের NEET পরীক্ষায় ষাটষট্টি জন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে, এবং আরও বেশ কিছু জন এক বা দুই কম নম্বর পেয়েছে ।এবারের পরীক্ষার ফলাফলকে গত বছরের দুই টপারের সাথে তুলনা করুন, ২০২২ সালে একজন শীর্ষস্থানীয় এবং ২০২১ সালে তিনজন টপারের সাথে তুলনা করুন। এই বছরের অস্বাভাবিক পরিসংখ্যান পরীক্ষা পদ্ধতির বিশ্বাস যোগ্যতা ও গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।,

এক দশকে NEET পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। এই বছর ২৪ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী ১,১০,০০০ এরও কম আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। আমাদের দেশে চিকিৎসা – এবং প্রকৌশল শিক্ষার উপর উচ্চ সামাজিক মূল্য থাকার কারণে  চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে অমিল হাইপার-কম্পিটিশনকে উস্কে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, NEET একটি পরীক্ষার চেয়ে বেশী ব্যবসা হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন কোচিং সংস্থাগুলি NEET-এর নামে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করে চলেছে।এই অবস্থায় NEETপরীক্ষায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে সরকার কি কি পদক্ষেপ নেয় সেটি দেখার কারণ আগামী দিনে এই পদক্ষেপের উপর নির্ভর করবে  এই পরীক্ষার বিশ্বাস যোগ্যতা।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top