আইপিএল (IPL) কি ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতির সহায়ক ?

IPL-র মুহূর্ত। ছবিটি X-একাউন্ট থেকে গৃহীত।

উত্তরাপথঃ আইপিএল (IPL) কি ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতির সহায়ক না কি এটি ভারতীয় ক্রিকেটকে আরও আবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে এই প্রশ্নটা অনেকের।সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভো বৃহস্পতিবার বলেছেন, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলোয়াড়দের দক্ষতা বাড়ায় এবং প্রতিটি দলেরই কিছু হাই প্রোফাইল কোচ থাকে যারা খেলোয়াড়দের ত্রুটিগুলো দূর করতে সাহায্য করে।সেই সাথে তিনি আরও বলেন  আমি মনে করি আইপিএল দেশীয় খেলোয়াড়দের সাহায্য করে।এটি আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দেরও সাহায্য করে।এখানে একজন ক্রিকেটারকে  বিশ্বের সেরা কিছু কোচের দ্বারা কোচিং করানো হয়।

নিঃসন্দেহে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (IPL) বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এবং আর্থিকভাবে পুরস্কৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগ হয়ে উঠেছে। এটি যে পরিমাণ গ্ল্যামার, অর্থ এবং বিনোদন প্রদান করে, তাতে স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রশ্নটি প্রায়ই উত্থাপিত হয় যে সত্যই কি আইপিএল ভারতীয় ক্রিকেটারদের দক্ষতার উন্নতিতে সাহায্য করছে। সমালোচকরা যুক্তি দেন যে আইপিএল খেলোয়াড়দের উন্নয়নের চেয়ে বিনোদনকে অগ্রাধিকার দেয়, আবার আইপিএলএর সমর্থকরা দাবি করেন যে এটি অমূল্য এক্সপোজার এবং অভিজ্ঞতা নতুন নতুন খেলোয়াড়দের দিচ্ছে,যার ফলে বহু নতুন প্রতিভা সামনে আসার সুযোগ পাচ্ছে।আজ এই নিবন্ধে, আমরা তর্কের উভয় দিকই অন্বেষণ করব এবং ভারতীয় ক্রিকেটারদের দক্ষতার উপর IPL-এর প্রভাব বিশ্লেষণ করব।

আইপিএলের পক্ষে প্রাথমিক যুক্তিগুলির মধ্যে একটি হল এখানে তরুণ ভারতীয় প্রতিভারাও সেরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সাথে একই প্ল্যাটফর্মে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। সেই সাথে খেলার বিভিন্ন শৈলী, কৌশল বড় বড় ক্রিকেটারদের দেখে শিখতে পারছে এই নবাগত ক্রিকেটাররা।তরুণ ক্রিকেটাররা বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা এবং এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো ক্রিকেটারদের সাথে ড্রেসিং রুম শেয়ার করতে পারছে  যা তাদের অনেকের কাছে এতদিন কল্পনার অতীত ছিল।

এছাড়াও, আইপিএলে একজন ক্রিকেটারের উপর ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফর্ম করার একটা করার একটা চাপ থাকে, যা তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উপযুক্ত করা তোলে। এই চাপ নেওয়ার ক্ষমতা পরবর্তী কালে একজন খেলোয়াড়কে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য উপযুক্ত করে তোলে।  

আইপিএলকে প্রায়ই উদীয়মান প্রতিভাদের প্রজনন ক্ষেত্র হিসাবে উল্লেখ করা হয়। আইপিএলে খেলার সময় অনেক তরুণ ভারতীয় ক্রিকেটার তাদের দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করেছেন। উল্লেখযোগ্য উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে হার্দিক পান্ড্য, জাসপ্রিত বুমরাহ এবং ঋষভ পন্থ, যারা আইপিএলে তাদের স্থান তৈরি করার পরে বিশ্ব-মানের খেলোয়াড় হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন।

আইপিএলে খুব দ্রুত উচ্চ স্কোর করতে হয় যা খেলোয়াড়দের ক্রমাগত বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে এবং তাদের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। ব্যাটসম্যানদের নিত্য নতুন কৌশল অর্জন করতে হয় নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতে,আবার বোলারদের নতুনত্ব বল করার ধরন রপ্ত করতে হয় এবং ফিল্ডারদের চটপটে এবং নির্ভুল হতে হয়। এই অতিরিক্ত পেশাদারিত্ব খেলোয়াড়দের তাদের দক্ষতা বাড়াতে এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে।

আইপিএল (IPL) এমন একটি পরিবেশ দেয় যা একজন ক্রিকেটারকে প্রেসার হ্যান্ডলিং করতে শেখায়। খেলোয়াড়রা কেবল তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির প্রত্যাশাই নয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ফ্যান বেসেরও মুখোমুখি হয় এর খেলার মাধ্যমে। এই চাপ মোকাবেলা করতে শেখা ভারতীয় ক্রিকেটারদের দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সময় আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিশেষ উপকৃত করে।

ভারত বৈচিত্র্যময় জলবায়ু এবং বিভিন্ন ধরনের পিচ অবস্থার একটি বিশাল দেশ। আইপিএল-এর খেলোয়াড়রা বিভিন্ন শহরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং প্রতিটি শহরের নিজস্ব জলবায়ু রয়েছে। এই বৈচিত্রটি তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য একটি দুর্দান্ত শেখার সুযোগ। যা তাদের বিভিন্ন জলবায়ুর সাথে মানিয়ে নিতে এবং সেই অনুযায়ী তাদের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।

যদিও আইপিএল (IPL)  নিঃসন্দেহে অনেক সুবিধা দেয়, তবু এটি সমালোচনা ছাড়া নয়। কেউ কেউ যুক্তি দেন যে টুর্নামেন্টটি খেলোয়াড়দের উন্নয়নের চেয়ে বিনোদনকে অগ্রাধিকার দেয়।তাৎক্ষণিক ফলাফলের চাহিদা, বিনোদন মূল্য, এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের চাপ খেলোয়াড়দের একটি আক্রমণাত্মক শৈলী গ্রহণ করতে বাধ্য করতে পারে যা সবসময় ক্রিকেটের ঐতিহ্যগত ফর্ম, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য অনুকূল নাও হতে পারে।

আইপিএল-এর কঠিন সময়সূচীও খেলোয়াড়দের বার্নআউটের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা আন্তর্জাতিক ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত করতে পারে। আইপিএলে অংশগ্রহণ এবং জাতীয় দায়িত্ব পালনের জন্য খেলোয়াড়দের সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top