নিমাইকৃষ্ণ মাহাতঃ মানভূমের কৃষিভাবনায় চৈত্র মাস বা মধুমাসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে । এই সময় এখানকার আবহাওয়া সাধারণত রুক্ষ-শুষ্ক থাকে । তাই , এই ধরনের আবহাওয়ায় কোন ধরনের ফসলের চাষ সম্ভব তা প্রবাদের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হতে দেখা যায় । যেমন- আখ ,আদা , পুই এ তিন চৈতে রুই।
দীর্ঘ জীবন-অভিজ্ঞতা থেকেই মানভূমের কৃষক এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে । কৃষিক্ষেত্র একজন কৃষকের কাছে Open-Air- Laboratory . মানভূমে চৈত্র মাসকে কেন্দ্র করে এই ধরনের আরো অনেক কৃষিপ্রবাদ , খনার বচন , ডাক- এর বচন ইত্যাদি প্রচলিত রয়েছে। এছাড়া চৈত্র মাসে মানভূমে নানা ধরনের লোক-পার্বণ অনুষ্ঠিত হয় । যেমন – ছাতুপরব , ভক্তা ঘুরা , শিবের গাজন ইত্যাদি । কাজেই মানভূমের চৈত্র মাস বা মধুমাসকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের কৃষিপ্রবাদের প্রচলন দেখা যায় ।এখানে সেগুলির কয়েকটি উল্লেখ করা হল –
১ )চৈতেতে খর খর , বৈশাখে ঝড় পাথর ।
জ্যৈষ্ঠেতে তারা ফুটে , তবে জানবে বর্ষা বটে ।
চৈত্র মাসে খর রৌদ্র বিরাজ করলে , বৈশাখ মাসে শিলাবৃষ্টি হলে এবং জ্যৈষ্ঠ মাসে মেঘমুক্ত আকাশে তারা ফুটে থাকলে সেই বছর বর্ষাকালে ভালো বৃষ্টি হওয়ার খুবই সম্ভাবনা থাকে।
২ ) বলে গেছে বরাহের পো ।
দশটি মাসে বেগুন রো ।।
চৈত্র বৈশাখ দিলে বাদ ।
ইতে নাই কোন বিবাদ ।।
পোকা ধরলে দিবে ছাই ।
এর ভালো উপায় নাই ।।
মাটি শুকাইলে দিবে জল ।
সকল মাসে পাবে ফল ।।
বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ বরাহের পুত্র হলেন পন্ডিত মিহির । কথিত আছে ইনারই স্ত্রী হলেন বিদূষী খনা । পন্ডিত মিহির বলেছেন – চৈত্র , বৈশাখ মাস বাদ দিয়ে বছরের যে কোন মাসে বেগুন রোপণ করা যাবে । বেগুন গাছে পোকার আক্রমণ ঘটলে প্রতিকার মুলক ব্যবস্থা হিসেবে ছাই দিতে হবে। বেগুন গাছে প্রয়োজনীয় জলসেচন করলে বারো মাসেই ফল পাওয়া যায়।
৩ ) চৈত গর্মি , বৈশাখ জাড়া ,
প্রথম আষাঢ়ে ভরায় গাড়া ,
ডাক বলে বর্ষা থোড়া।
চৈত্র মাসে গরম , বৈশাখ মাসে যদি শীত অনুভূত হয় এবং আষাঢ় মাসের প্রথম দিকে যদি বাঁধ , পুকুর , ডোবা ভর্তি হয়ে যায় তবে সে বছর বর্ষাও ভালো হয় না , চাষও ভালো হয় না।
৪ ) মাঘের মাটি হীরার কাঠি ,
ফাগুনের মাটি সোনা ।
বৈশাখের যেমন তেমন ,
চৈতের মাটি লোনা ।
এখানে কোন মাসে লাঙ্গল চালিয়ে মাটি কর্ষণ করলে তা চাষের কাজের পক্ষে কতটা কার্যকরী হবে তার ক্রমিক বর্ণনা করা হয়েছে।
৫ ) আখ , আদা , পুঁই
এ তিন চৈতে রুই।
এটি মানভূমের সময় নির্দেশক কৃষিপ্রবাদ।
৬ ) মধু মাসে প্রথম দিবসে হয় যে সে বার । রবি চষে , মঙ্গল বর্ষে , দুর্ভিক্ষ হয় বুধবার ।। সোম , শুক্র বা গুরুবার- পৃথিবী না সহে শস্যের ভার ।
পাঁচ শনি পায় মীনে , শকুনি মাংস না খায় ঘৃণে।।
এই খনার বচনটিতে বলা হয়েছে-
মধু মাস অর্থাৎ চৈত্র মাসের প্রথম দিনটি মঙ্গলবার হলে আসন্ন কৃষি মরশুমে ভালো বর্ষা হবে , বুধবার হলে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা থাকে , সোম , শুক্র বা গুরুবার অর্থাৎ বৃহস্পতিবার হলে সে বছর খুবই ভালো শস্য উৎপাদিত হয়। মীন রাশির মাসে অর্থাৎ চৈত্র মাসে পাঁচটি শনিবার পড়লে মড়কের সম্ভাবনা থাকে । এত লোক মারা যায় যে মাংসভুক শকুনেরও মাংসে অরুচি ধরে যায়।
৭ ) মধুমাস ত্রয়োদশ দিবসে যদি হয় শনি । সে বৎসর শস্যহানি গণনায় ইহা জানি ।।
মধু মাস অর্থাৎ চৈত্র মাসের ১৩ তম দিনটি যদি শনিবার হয় তাহলে সে বছর শস্যহানির প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে , মানভূমের কৃষকদের জীবনে চৈত্র মাসের সমাধিক গুরুত্ব রয়েছে।
আরও পড়ুন
রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে ২২ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন মোদী
উত্তরাপথ: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী মাসের ২২ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন একটি রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে যোগ দিতে।এই নৈশভোজে মোদীকে রাষ্ট্রপতি জো বিডেন এবং ফার্স্ট লেডি জিল বিডেন আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।এই সফরে মূলত দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হবে এবং একটি মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। MEA বলেছে যে মোদী এবং বিডেন G20 সহ প্লুরি-পার্শ্বিক এবং বহুপাক্ষিক ফোরামে ভারত-মার্কিন সহযোগিতা জোরদার করার উপায়গুলিও .....বিস্তারিত পড়ুন
কার্বন নিঃসরণ দ্রুত শেষ করার জন্য G7 ঐক্যমত
উত্তরাপথ: বিশ্বের সাতটি ধনী দেশের শক্তি ও পরিবেশ মন্ত্রীরা সম্প্রতি জ্বালানি এবং পরিবেশগত ইস্যুতে উত্তর জাপানের শহর সাপোরোতে বৈঠক করেন। G-7 বৈঠকে জড়ো হওয়া বিভিন্ন দেশের আধিকারিকরা তাদের প্রতিশ্রুতির রূপরেখা দিয়ে একটি কমিউনিক জারি করেছে। বৈঠকে বর্তমান সঞ্চিত জ্বালানি সংকট এবং ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সমান গুরুত্ব দিয়ে, আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো গ্রিনহাউস গ্যাস (GHG) নির্গমনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সমস্ত নেতারা দক্ষ, সাশ্রয়ী মূল্যের এবং দূষণ মুক্ত শক্তির উৎস সন্ধানের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর আগেও .....বিস্তারিত পড়ুন
বেতন, মাসে ৩০,০০০ আর সম্পত্তির মালিকানা ৭ কোটির বেশী
উত্তরাপথ: এ এক দুর্নীতির অনন্য নজির যা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি কে লজ্জায় ফেলবে । দুর্নীতির এই অভিযোগটি উঠেছে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ হাউজিং কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী ইনচার্জ হেমা মীনার বিরুদ্ধে।মধ্যপ্রদেশের সরকারি কর্মকর্তা দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর হেমা মীনা প্রচার মাধ্যমের নজরে আসে । এখন প্রশ্ন কে এই হেমা মীনা ? মধ্যপ্রদেশ পুলিশ হাউজিং কর্পোরেশনের চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োজিত সহকারী প্রকৌশলী ইনচার্জ যিনি মাসে ৩০,০০০ টাকা আয় করেন । দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে তার বাড়ি থেকে সাতটি বিলাসবহুল গাড়ি, ২০,০০০ বর্গফুট .....বিস্তারিত পড়ুন
পরম সুন্দরী
মৈত্রেয়ী চৌধুরী: চাকরির বাজার ভীষণ মন্দা। পাত্র সৃজিত এম. এস.সি পাশ করেও কোনো চাকরি পাচ্ছে না। অগত্যা পরিবারের ব্যাবসার হাল ধরেছে। পারিবারিক সূত্রে তাদের মিষ্টির বেশ বড় দোকান রয়েছে। সৃজিত পড়াশোনা তে বেশ ভালো ছাত্র ছিল। প্রতিদিন সকালে পেপারে চাকরির বিজ্ঞাপন খোঁজা তার একটি কাজ। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান, বয়স তো থেমে থাকবে না। বাবা মা ছেলের বিয়ে নিয়ে বেশ চিন্তিত। তারা কিছু দিনের মধ্যেই ছেলের বিয়ে দেবেন এরকম স্থির করেন। মোনালিসা ভূগোলে সদ্য এম.এ, পি. এইচ. ডি করে একই ভাবেই চাকরির খোঁজ করে যাচ্ছে। বাবা সুভাষ বাবু সরকারি .....বিস্তারিত পড়ুন