Artificial Blood: কার্যকর কৃত্রিম রক্ত ​​তৈরীর চেষ্টায় বিজ্ঞানীরা

ছবি -প্রতীকী

উত্তরাপথ: এখনও কেন আমাদের দেহের প্রকৃত রক্তের অনুরূপ কার্যকর কৃত্রিম রক্ত বিজ্ঞানীরা  ​​তৈরি  করতে পারলেন না? কার্যকর কৃত্রিম রক্ত তৈরী করা কেন আজও বিজ্ঞানীদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। সম্প্রতি শতাব্দীর দীর্ঘ সাধনার অগ্রগতির খবর সামনে আসতেই আশায় বুক বাঁধছে বিশ্ববাসী যদিও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অনেক দূর।  

১৬০০ এর দশকে, চিকিৎসকদের সামনে বিকল্পের অভাব ছিল। সেই সময় ডাক্তাররা তাদের রক্তক্ষরণ রোগীদের রক্তের প্রবাহে দুধ এবং ওয়াইন স্থানান্তর করার চেষ্টা করেছিলেন। যখন তা ব্যর্থ হয়, তখন তারা ভেড়ার রক্তে চলে যায়। এটি স্পষ্ট হয়ে উঠতে খুব বেশি সময় লাগেনি যে এই চিকিৎসাগুলি মানুষকে হত্যা করছে, তাদের রক্ষা করতে পারেনি। সৌভাগ্যবশত, আমরা এখন জানি যে একজন মানুষের রক্ত প্রাপ্তির একমাত্র রাস্তা হল, একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ রক্তের গ্রুপের দ্বারা দান করা রক্ত। বর্তমানে উন্নত দেশগুলিতে রক্ত সংগ্রহ করার পর সেই রক্তকে পরিশ্রুত করা হয় এবং এইচআইভির মতো রক্তবাহিত রোগ আছে কিনা পরীক্ষা করা হয়। এত সব পদক্ষেপ সত্বেও বর্তমান রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থা নিখুঁত নয়। এখনও অনেক দেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় নিরাপদে রোগীদের রক্ত ​​সংগ্রহ, সঞ্চয় এবং বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে।

তবে কার্যকর কৃত্রিম রক্ত ​​তৈরি করা একটি জটিল বৈজ্ঞানিক চ্যালেঞ্জ।গবেষকরা বহু বছর ধরে সক্রিয়ভাবে কৃত্রিম রক্ত ​​তৈরীর চেষ্টা করছেন।গবেষণায় অগ্রগতি হলেও, সেখানে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাঁধা রয়েছে যা বিজ্ঞানীরা এখনও অতিক্রম করতে পারেননি। কিছু মূল কারণ যা বর্তমানে কার্যকর কৃত্রিম রক্ত বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে।

রক্ত ​​হল একটি জটিল তরল যা বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত, যার মধ্যে রয়েছে লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা, প্লেটলেট এবং প্লাজমা। প্রতিটি উপাদান স্বাস্থ্য এবং হোমিওস্ট্যাসিস বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দিষ্ট ফাংশন পরিবেশন করে। প্রাকৃতিক রক্তের জটিল রচনা এবং কার্যকারিতার প্রতিলিপি করা যা এখনও একটি উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

রক্তের অন্যতম মৌলিক কাজ হল সারা শরীরে অক্সিজেন বহন করা। লোহিত রক্তকণিকায় পাওয়া হিমোগ্লোবিন এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য দায়ী। প্রাকৃতিক হিমোগ্লোবিনের মতো কার্যকরভাবে এবং নিরাপদে অক্সিজেন বহন করতে পারে এমন একটি কৃত্রিম বিকল্প তৈরি করা একটি উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগত বাধা।

প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ করার জন্য রক্তদাতা এবং প্রাপকের মধ্যে সামঞ্জস্যের প্রয়োজন হয় অর্থাৎ রক্তদাতা এবং গ্রহিতার রক্ত একই গ্রুপের হতে হবে। অন্যদিকে  একটি কৃত্রিম রক্ত প্রাকৃতিক রক্তের বিকল্প তৈরি করা যা সার্বজনীনভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে এবং ইমিউন প্রক্রিয়াকে বাঁধা দেবে না সেইভাবে একটি সার্বজনীন রক্ত তৈরি করা একটি জটিল কাজ। বাইরে থেকে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করানো এক কৃত্রিম রক্তের ( Foreign Particles) প্রতি ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে তা অনুধাবন করে একটি কার্যকর প্রকৃত রক্তের বিকল্প বিকাশ করা চ্যালেঞ্জিং কাজ।

প্রাকৃতিক রক্তের একটি সীমিত শেলফ লাইফ রয়েছে এবং এর কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য যত্নশীল স্টোরেজ এবং পরিচালনার প্রয়োজন। একটি কৃত্রিম রক্তের ক্ষেত্রে লম্বা সময়ের জন্য অবক্ষয় ছাড়াই সংরক্ষণ করা এক বড় চ্যালেঞ্জ এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রকৃত রক্তের মত মান ও গুণ বজায় রাখা একটি উল্লেখযোগ্য গবেষণার বিষয় যা গবেষকরা এখনও কাটিয়ে উঠতে কাজ করছেন।

কৃত্রিম রক্ত ​​সহ যে কোনও চিকিৎসা পণ্যের বিকাশের জন্য অবশ্যই সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে কঠোর নিয়ন্ত্রক প্রয়োজনীয়তাগুলি মেনে চলতে হয়।, তবে বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করছেন যে ক্লিনিকাল ট্রায়াল সফল প্রমাণিত হলে এই  কৃত্রিম রক্তের ব্যবহার  কয়েকটি আগামী ১০ বছরের মধ্যে চালু করা যেতে পারে।




খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে

উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top