

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য!
এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )।


কাঁচি দুয়ারি : অমাবস্যার দিনে দিগন্তরেখায় সূর্য মুখ লুকোলেই শালপাতায় চালগুঁড়োর পিণ্ড বানিয়ে, তাতে পরিমাণ মতো বিশুদ্ধ গাওয়া ঘি ঢেলে- তারপর কাপাস তুলোর সলতে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। দুয়ার, আঙিনা, নির্মীয়মান খামার সর্বত্র টিমটিম করে জ্বলে ঘৃতপুষ্ট অগ্নিশিখা। এর পোষাকী নাম কাঁচি দুয়ারি বা কাঁচি জিওরি। ঘরে দুয়ারে এহেন মঙ্গলদীপ জ্বেলে গাওয়া হয় সহরই গীত- “ভালা অহিরে…. কণ দিয়া বরয়ে সাঁঝেকো বেরিয়ারে, বাবু হো…. কণ দিয়া বরত বিহান, কণ দিয়া বরয়ে আম মাড়য়াঁই, সেই দিয়া বরত বিহান।”
Bandna য় খড়ি মাটির জ্যামিতিক নকশায় সেজে ওঠে ঘর। কারও বা দেওয়ালে ফোটে মোটিফ-কুসুম। স্বশিক্ষিত শিল্পীদের হাতের এই অপূর্ব শিল্প সুষমা দেখে বিস্ময়াপন্ন হতে হয় নাগরিক দৃষ্টিকেও!
গঠপূজা: অমাবস্যার দিন গাঁয়ের লায়া বা দেহরি দিনভর নির্জলা উপোস করে গ্রাম শেষের ঐ রাঙামাটির পথে ৯টি ঘর কেটে কপিলাসন্তানদের মঙ্গল কামনায় গঠ পূজা করেন। গঠ অর্থাৎ গোরুর পাল। পূজাস্থলে রেখে দেওয়া হয় দেশী মুরগীর ডিম অথবা তার প্রতীকী চাল গুঁড়োর মণ্ড। যার বলদের পদাঘাতে সেই ডিম ভাঙে, সেই খামিদকে ভাগ্যবান বলে মনে করা হয়। ভাগ্যবান খামিদ সব গোপালকদের পা ধুইয়ে আদরযত্ন করে ‘গঠ ডেঙ্ঘা’ নামক নেগটি সুসম্পন্ন করেন।
জাগরণ: এরপর অমানিশা নামলেই নিকষ অন্ধকারে ভারতের নানা প্রান্তে যখন দীপান্বিতার আলোকসজ্জা আর কালীপূজা, ঝাড়খণ্ডী সংস্কৃতিপুষ্ট বাংলার পশ্চিম প্রান্তে কিন্তু সেসবের বালাই নেই। তবে প্রতিটা গোয়ালঘরে জ্বলে শুভঙ্করী মৃৎপ্রদীপ। গোরু, কাড়ার তেল চকচকে শিংগুলি মায়াবী হয়ে ওঠে পিদিমের আলোয়। ঢোল, ঢমসা, মাদৈলের বজ্র নির্ঘোষে গোসন্তানদের অভিনন্দন জানায় বন্দনাকারীরা। এদের প্রচলিত নাম ঝাঁগড়। একজন ঝাঁগড়িয়া কানে হাত দিয়ে অহিরা গীত ধরে, অনুবৃত্তি করে বাকিরা- “ভালা অহিরে…. জাগহ চনদা, জাগহ সুরুজরে, বাবু হো…. জাগহ গহালিকের গেইয়া, জাগরণ পরতি ফল দেবে বুঢ়াবাপে, পাঁচ পুতা দস ধেনু গেইয়া।” – জাগান শেষ হলে গৃহস্বামী মনানন্দে ঝাঁগড় দলের হাতে তুলে দেয় দু’পাঁচ টাকা, দু’এক সের চাল। গিন্নী ঝুলি ভরে পিঠা-লাঠা, মুড়ি-চিড়া দিয়ে ঝাঁগড় বিদায় করে।
গরইয়া: জাগরণের পরদিন পানিয়া লতা মাড়াই করে নিষ্কাশিত করা হয় এর সান্দ্র দেহরস। তাতে আতপ চালের গুঁড়ো মিশিয়ে নতুন মাটির তকতকে উঠোনে আঁকা হয় চউক। চউক পুরা অঙ্গনে সাজিয়ে রাখা হয় হাল, জোয়াল। কর্তা পুণ্যতোয়া পুষ্করিণী থেকে তুলে আনে ডাঁটাসহ শালুক ফুল। কর্ত্রী দুধ দিয়ে চালগুঁড়োর পিটুলি বানিয়ে নবনির্মিত মাটির চুলোর আঁচে তৈরি করে ঘিয়ের ছাঁকা-পিঠে। দুধ, গুড়, আতপচাল, পিঠে উপচারে- গোয়ালঘরে পূজিত হন গরাম, ধরম, বসুমাতা, গঁসাইরাই, নাজি লিলঅউরি, গাই গরইয়া, মৈষ গরইয়া, ডিনি ঠাকুরাইন ও বড়োপাহাড়। গরাম ঠাকুরের উদ্দেশ্যে লাল মোরগ ও ধরম ঠাকুরের উদ্দেশ্যে সাদা মোরগ উৎসর্গের মাধ্যমে সমাপন ঘটে গরইয়ার।


গরুখুঁটা: গরইয়া পেরোতেই বাঁদনার(Bandna Festival) “বরদ ঘুরা”, প্রান্তজনের “বুঢ়ি বাঁদনা”। ছোটোনাগপুরের কৃষিজীবী লোকেদের কাছে বলদ পুত্রস্বরূপ। গৃহস্থের শ্রীবৃদ্ধির জন্য চাষির কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বছরভর অক্লান্ত খাটে এরাও। তাই পরবের চতুর্থ দিনে প্রহারের বদলে ধান্য নির্মিত হারে বিভূষিত করা হয় কপিলাসন্তানদের। জোয়ালক্ষত কাঁধে পরম মমতায় লাগিয়ে দেওয়া হয় তেল। কাঁচাপাকা ধানের শীষ ছিঁড়ে তৈরি করা হয় “মোড়”। অনিন্দ্যসুন্দর ধানের মুকুট ও সিঁথলী পরানো হয় গোরুর মাথায় – কপালে। স্নেহার্দ্র চিত্তে গবাদি পশুদের পদপঙ্কজ ধুইয়ে দেয় গৃহিণীরা। লাল, নীল রঙে সাজিয়ে দেওয়া হয় গরুর দেহ, কেউ বা এঁকে দেয় নিজের গোষ্ঠীর টোটেম! পাটভাঙা শাড়ি পরিহিতা গৃহিনীরা খিলি পান মুখে নতুন কুলোয় নৈবেদ্য সাজিয়ে ভক্তি ভরে চুমান-বাঁদান করে। এই পর্যায়ের নেগাচারের সাথে সাথে হড়দের আত্মপরিচিতির প্রসঙ্গটিও প্রতিভাত হয়েছে নিম্নোক্ত অহিরাটিতে- “ভালা, অহিরে…. কুড়ুমা পাহাড়ে কেরি, কঁচি কঁচি ঘাসঅরে, বাবু হো…. হড়প্পা নগরেক ডমিন, সরু সরু সরু বাঁসিয়াই সুপতি বানাঅ হ, সেই সুপে গেইয়ানি চুমাই।” অশুভ শক্তির হাত থেকে গোধনকে বাঁচাতে বাড়ির রমণীরা একটি মৃৎপাত্রে আগুন সহ ধুনা নিয়ে গিয়ে গাঁয়ের শেষে নেগাচার অনুযায়ী পায়ের আঘাতে সেটি ভেঙে ফেলে। মৃৎপাত্রটি ভেঙে ফেলার রীতিটির পরিভাষাগত নাম ‘নিমছান’।
এদিনই শেষ বিকেলে গাঁয়ের প্রান্তে সুপরিসর মাঠে সবাই ভিড় জমায়। শক্ত খুঁটিতে বাঁধা হয় সুপুষ্ট, বলবান, তেজি বলদ আর দুর্দম, উদ্দাম কাড়া। ঝাঁগড়ের তারস্বরে অহিরা আর অভ্রভেদী বাজনা শুনে রোষে ফুলে ওঠে বরদা, কাড়া। সাহসী পুরুষরা বাঁধাড় কাড়ার সামনে মৃত পশুর চামড়া ধরে! সমবেত কুলকুলি শুনে উন্মত্তের মতো ফুঁসে ওঠে খুঁটানো কাড়া, খুঁটিকে ঘিরে চরকির মতো পাক খায়, কখনো প্রবল বিক্রমে গুঁতো মারে চর্মখণ্ডে! নিজের আপাত শান্ত বলদটিকে উত্তেজিত করতে, কেউ কেউ কানে আঙুল চেপে অহিরা হাঁকায়- “ভালা অহিরে…. সব দিন যে চরাই ভালা, বনে জঙ্গলে রে, বাবু হো…. আজি তর দেখিব মর্দানী, আজকার রণে ভালা, জিতি যদি যাবে রে, বাবু হো…. চারিপায়ে নূপুর ছাহাবো।” আপাত দৃষ্টিতে বলদ খুঁটার মধ্যে কৃষিকর্মে ক্লান্ত, প্রান্তভূমির ব্রাত্যজনদের চিত্তবিনোদনের দিকটি পরিলক্ষিত হলেও, অনেকের মতে এটি এই অঞ্চলের আদিম অধিবাসীদের জীবন সংগ্রামের ইতিহাসের চলমান দলিল। অরণ্য বেষ্টিত এই ভূখণ্ডটি ছিল শ্বাপদসঙ্কুল। প্রায়ই অযোধ্যা, দলমা থেকে আগত হানাদার জন্তুর কবলে পড়তে হতো এদের। কাজেই অস্তিত্বের জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে আত্মরক্ষার কৌশল রপ্ত করে নিজেরা। অনুরূপ কসরত শিক্ষা দেওয়া হয় গৃহপালিত পশুদেরও। একবিংশ শতাব্দীর গোরুখুঁটা সেই কসরত শিক্ষারই একটি পরিবর্তিত রূপ। প্রচলিত অহিরাতেও এমন ইঙ্গিত মেলে- “ভালা অহিরে…. কপিলাকর পুতা ভালা, সিসু বালকঅরে, বাবু হো…. মহিষাকর পুতারে ডামাল, বাঘেকর পুতা ভালা, অতি বলীয়ান হে, রগড়ি ধরতে ধেনু গাই রে….”।
বৃষ যদি হয় বল ও বীর্যের প্রতীক, তবে গাভী হল কল্যাণী, শুভশক্তির প্রতীক। বুঢ়ি বাঁদনা গৃহপালিত বলদের মর্দানী দেখানোর তিথি। কোনো কোনো অঞ্চলে গুঁড়ি বাঁদনার দিনে সেই মর্দানী ক্ষেত্রে বন্ধ্যা গাভীকে বেঁধে ঘোরানোর রেওয়াজ প্রচলিত। এর ফলে গাভী প্রজননে সক্ষম হবে- এই লোকবিশ্বাস থেকে গাইখুঁটা! এদিন বছরভর দুধ দেওয়া ধেনুদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনেরও দিন। গাভীদের অভিমান ভাঙানো, কৃতজ্ঞতা জারিত অহিরা ধ্বনিত হত পথে প্রান্তরে- “ভালা অহিরে…. আশ্বিন যাইতে কার্তিক সামাতে রে, বাবু হো…. কাঁদে ত শিরমণি গাই হে, না কাঁদ, না কাঁদ, সুরধনী গেয়া হো, মাখাব শিং ভরি তেল রে।
গ্রাম্য কবিদের রচিত, লোকমুখে প্রচলিত অহিরাগুলির মূলভাষা কুড়মালি। পুরুলিয়ার উত্তরাংশে, পশ্চিম মেদিনীপুর, ছোটনাগপুরের হাজারিবাগ, রাঁচীর পাঁচ পরগণা অঞ্চলে প্রচলিত অহিরাতে কখনও ফুটে ওঠে সরল কথায় মানব জীবনের জটিল জীবনদর্শন, – “ভালা অহিরে… মানুষ জীবন ভালা, ঝিঞাফুলের কলি রে, বাবু হো….. সাঁঝে ফুটে বিহানে মলিনঅ রে।” আবার কখনও উৎসারিত হয় নিজেদের সাংস্কৃতিক সঞ্জাত আবেগ- “ভালা অহিরে… দেসে দেসে ঘুরল ভালা, কাঁহু নি পাউঅল গমি, বাবু হো…. কলকলিয়া গীত ঝুমৈরের চাস! এহ মানভূমেক মাটি যখন হামি পাউঅল, দাঁপি ঋঝে উড়ি গেল ভুখ পিয়াস।”
ঘাওয়ার দিন পাঁচেক পর- পশ্চিম বাঁকুড়া, উত্তর পশ্চিম মেদিনীপুর, ধলভূম, মানভূম, সাঁওতাল পরগণার রূক্ষভূমি, স্বল্পতৃণ প্রান্তর, সবুজদ্বীপের মতো শাল পিয়ালের বনে আর ঢোল, ঢমসা, মাদৈলের ধিমিক ধিমিক প্রতিধ্বনি শোনা যায় না। পরবে আগত নতুন বিটিজামাই ফিরে যায় নিজ গাঁয়ে। মাংস, পিঠা, ঘিয়ের পোড়া পোড়া গন্ধ হারিয়ে যায় ঈষৎ শীতল বাতাসে। শুধু অনার্য সভ্যতার প্রতিনিধিদের একান্ত নিজস্ব বাঁদনা(Bandna)পরবের স্মৃতিটুকু বেঁচে থাকে মনের গভীরে। আবারও দিন গোণা শুরু হয়—নাচ-গান-বাজনা, মকর-করম-বাঁদনা(Bandna)।
আরও পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন