Kuldhara Village এই গ্রাম ইতিহাস এবং লোককাহিনী মিলে মিশে আছে।ছবি – উত্তরাপথ
গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ রাজস্থানের জয়সালমের থেকে মাত্র ১৪ কিমি দূরে কুলধারা গ্রাম(Kuldhara Village),যা শুধু ভারত নয়, বিশ্বের একমাত্র ভূতুরে গ্রাম । এই রহস্যময় ভূমিতে ইতিহাস এবং লোককাহিনী মিলে মিশে আছে।প্রায় ২০০ বছর ধরে জনশূন্য, এই ভূতুড়ে গ্রামটি তার ধ্বংস স্তূপের মধ্যে আজও সেই প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।স্থানীয় ভাবে অনুমান করা হয় যে এই গ্রামটি ১৩০০সালে সরস্বতী নদীর তীরে পালিওয়াল ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং সেই সময় এটি একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম ছিল যার প্রমান আজও গ্রামে গেলেই বোঝা যায়। কিন্তু আজ পরিস্থিতি এমন যে এখানে কেউ সন্ধ্যে বেলা একা ঘুরে বেড়াতে ভয় পান। তাই ২০০ বছর ধরে এই গ্রামে আর কোনও জনবসতি হয়নি । বর্তমানে পুরো গ্রামটি রয়েছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধীনে(Archeological Survey of India)।
কুলধারা গ্রামের (Kuldhara Village)ইতিহাস সম্পর্কে যা জানা যায় তাতে এটি মূলত ব্রাহ্মণদের দ্বারা বসতি স্থাপন করা একটি গ্রাম ছিল।এই গ্রামের ব্রাহ্মণেরা মূলত পালি এলাকা থেকে জয়সলমীরে চলে এসে কুলধারা গ্রামে বসতি স্থাপন করেছিলেন। এই গ্রামের সম্পর্কে বিভিন্ন বই ও সাহিত্যের বিবরণ থেকে জানা যায় যে পালির ব্রাহ্মণ প্রধান প্রথমে এই জায়গায় তার বাড়ি তৈরি করেছিলেন এবং একটি পুকুরও খনন করেছিলেন। তারপর পালির ব্রাহ্মণদের একটা অংশ এখানে এসে বসবাস শুরু করেন, সেই থেকে এই স্থানের ব্রাহ্মণদের বলা হত পালিওয়াল।এই ভাবে রুক্ষ ফাঁকা প্রান্তরে ধীরে ধীরে একটি বর্ধিষ্ণু গ্রামের জন্ম হয়।
Kuldhara Village এর ধ্বংসস্তূপ। ছবি উত্তরাপথ
কথিত আছে এই গ্রামের প্রধানের মেয়ে দেখতে খুব সুন্দর ছিল।জয়সলমের রাজ্যের দেওয়ান সেলিম সিং সেই মেয়েটিকে দেখে তার সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েন এবং তাকে বিয়ে করার জন্য জোর দেন। স্থানীয়ভাবে প্রচলিত কাহিনী অনুসারে, সেলিম সিং একজন অত্যাচারী মানুষ ছিলেন যার নিষ্ঠুরতার গল্প বহুদূরে বিখ্যাত ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও কুলধারার লোকেরা মেয়েটিকে সেলিম সিংকে দিতে অস্বীকার করে।অন্যদিকে সেলিম সিং গ্রামবাসীকে ভাবতে কয়েকদিন সময় দেন। গ্রামবাসীরা জানত সেলিম সিংয়ের কথা না শুনলে সে গ্রামে গণহত্যা চালাবে।ঐতিহ্য অনুসারে, কুলধারার লোকেরা গ্রামের মন্দিরের কাছে অবস্থিত একটি চৌপালে পঞ্চায়েত করে এবং তাদের মেয়ে এবং তাদের গ্রামের সম্মান বাঁচাতে চিরতরে গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।রাতের নিস্তব্ধতায় গ্রামের প্রায় ৮৫টি পরিবার নিজেদের সমস্ত দামী জিনিষপত্র সোনা সহ মূল্যবান সামগ্রী গ্রামে নিজেদের ঘরে রেখে এক কাপড়ে রাতারাতি পালিয়ে যায় এবং আর ফিরে আসেনি।যাওয়ার সময় গ্রামবাসীরা গ্রামকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে আগামী দিনে কেউ এখানে থাকতে পারবে না।সেই থেকে এই গ্রাম অভিশাপের বোঝা বহন করে চলেছে। জয়সলমীরে সেলিম সিংয়ের প্রাসাদ এখনও আছে কিন্তু কেউ দেখতে যায় না।
Kuldhara Village ছবি উত্তরাপথ
শোনাযায় কুলধারা গ্রামে (Kuldhara Village )বেশ কিছু বড় শিল্প সংস্থা শিল্পকেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহী হয়ে তাদের নির্মাণ কাজ শুরু করেছিল।কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে তারা তাদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে চলে যায়, সেগুলি আজও অসম্পূর্ণ অবস্থায় পরে রয়েছে।স্থানীয় এক বাসীন্দা জানান,এর আগে বহু সংস্থা থেকে এই জায়গার অলৌকিকতা কিছু রয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করার জন্য প্রচেষ্টা করা হয়েছিল,কিন্তু তারা কেউ সফল হননি। এমনকি গ্রামের প্রধানের বাড়িতে এক সংস্থার পক্ষ থেকে ক্যামেরাও লাগানো হয়েছিল সারা রাতের ঘটনা নথিভুক্ত করার জন্য,কিন্তু পরদিন সকালে দেখা যায় সেই ক্যামেরা নষ্ট হয়ে গেছে কিছুই লিপিবদ্ধ হয়নি। স্থানীয় লোকজন তাদের বড়দের কাছ থেকে যা শুনেছেন তার ভিত্তিতে তারা জানান যে, রাতের নিস্তব্ধতায় কুলধারার ধ্বংসাবশেষে কারও পায়ের শব্দ আজও শোনা যায়। কুলধারার মানুষের আত্মা এখনও এখানে বিচরণ করে বলে স্থানীয় মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাসও বেশ প্রসিদ্ধ। স্থানীয়রা এক বাক্যে এই গ্রামে রাতের দিকে অলৌকিকতার তথ্য মেনে নিয়েছে।
কুলধারা গ্রাম(Kuldhara Village) একটি ঐতিহাসিক স্থান যা ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ দ্বারা সংরক্ষিত।প্রতিবছর বহু পর্যটক প্রাচীন সেই ইতিহাসকে এক ঝলক দেখতে এই গ্রামে আসেন। কুলধারা গ্রামটি একটি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে, প্রায় ৮৫টি ছোট বসতি নিয়ে গঠিত ছিল।বেশ কয়েকটি লাইনে নির্মিত পাথরের বাড়িগুলি বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এসব ধ্বংসাবশেষ এই গ্রামের অতীতের সমৃদ্ধি প্রকাশ করে। কোনো কোনো বাড়িতে চুলা, বসার জায়গা এবং হাঁড়ি রাখার জায়গা দেখে মনে হয় কেউ এখান থেকে চলে গেছে। এখানকার বাড়িগুলির দেয়াল দুঃখের অনুভূতির জন্ম দেয়। পাথর দিয়ে তৈরি গ্রামের সব ঘর এখন ধ্বংস হয়ে গেলেও, গ্রামের প্রধানের বাড়ির কিছু অংশ এখনও ঠিক আছে। গ্রামের ঠিক মাঝখানে একটি দেবী মন্দিরও আছে, যেটি এখন ভগ্নপ্রায়।মন্দিরের ভিতরে শিলালিপি রয়েছে যা প্রত্নতাত্ত্বিকদের গ্রাম এবং এর প্রাচীন বাসিন্দাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে সাহায্য করেছে।
(Kuldhara Village শিল্প সংস্থা শিল্পকেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহী হয়ে তাদের নির্মাণ কাজ শুরু করেছিল কিন্তু কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায়। ছবি – উত্তরাপথ
যে কোনও পর্যটক প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গ্রামে ঘুরে বেড়াতে পারেন। যেহেতু এই গ্রামটিকে ভুতুড়ে বলে মনে করা হয়, তায় কতৃপক্ষের পক্ষ থেকে সূর্যাস্তের পর গ্রামে প্রবেশের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। কুলধারা গ্রামে(Kuldhara Village) পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে রাজস্থান সরকার এখানকার কিছু বাড়ি আগের মতোই পুনরুদ্ধার করেছে। তবে গ্রামের মন্দিরটি অতীত কালের সাক্ষী হয়ে আজও তার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
Kuldhara Village ছবি উত্তরাপথ
আরও পড়ুন
ব্রিজভূষন সরণ সিং ও মোদী ইমেজ
উত্তরাপথ: কে এই ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং ? কি করে তিনি হঠাৎ খবরের শিরোনামে ? তার বিরুদ্ধে ভারতীয় রেসলারদের অভিযোগ সত্বেও কেন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছেনা ? বিরোধী দলগুলি এই ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করছে তবু সরকার চুপ ? এটা কি মোদী ইমেজে ধাক্কা নয় ? না কি ২০২৪ এর রাজনীতির বাধ্য বাধ্যকতা ? প্রথমে আসা যাক ব্রিজভূষন সরণ সিং প্রসঙ্গে। উত্তরপ্রদেশের বিজেপির বাহুবলী নেতা তথা উত্তরপ্রদেশের গোন্ডা, কায়সারগঞ্জ এবং বলরামপু .....বিস্তারিত পড়ুন
১ কোটি টাকার মানহানির মামলা প্রাক্তন CJI রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে
উত্তরাপথ: গুয়াহাটির একটি স্থানীয় আদালতে আসাম পাবলিক ওয়ার্কসের (এপিডব্লিউ) সভাপতি অভিজিৎ শর্মার রাজ্যসভার সাংসদ এবং ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি (সিজেআই) রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে ১কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছে। অভিজিৎ শর্মার অভিযোগ রঞ্জন গগৈ তার আত্মজীবনী জাস্টিস ফর এ জাজে তার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর এবং মানহানিকর বিবৃতি প্রকাশ করেছে । তাই তিনি প্রকাশক গগৈ এবং রুপা পাবলিকেশন্সের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন এবং কোনও বই প্রকাশ, বিতরণ বা বিক্রি করা থেকে বিরত রাখার জন্য অন্তবর্তী .....বিস্তারিত পড়ুন
কতো অজানা রে
মৈত্রেয়ী চৌধুরী: ইতিহাস বিষয়ে আলোচনা করতে গেলেই আমাদের মনে যে সব সৌধের প্রসঙ্গ মনে আসে তারমধ্যে পার্লামেন্ট ভবন একটা অবশ্য দ্রষ্টব্য স্থান। বহু পর্যটক এই ভবন দেখতে যান. কিন্তু জানেন কি, এই পার্লামেন্ট ভবনের ডিজাইন কে বানিয়েছিলেন ? 10 জনকে জিজ্ঞেস করলে 9 জনই বলতে পারবেন না। যাঁরা খুব ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন অথবা গুগুল সার্চ করে থাকেন, তাঁরা হয়তো উত্তরটা দিতে পারবেন। পার্লামেন্ট ভবনের ডিজাইন বানিয়েছিলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ স্থপতি এডুইন লুটিয়েন। তাঁর সহকারী ছিলেন আরেক ব্রিটিশ স্থপতি হার্বার্ট বেকার। 1927 খ্রিস্টাব্দে এই ভবনটির নির্মাণ সম্পূর্ণ হয় এবং ব্রিটিশ .....বিস্তারিত পড়ুন
হয়ে গেল পরিণীতি ও রাঘবের এনগেজমেন্টে
উত্তরাপথ: আংটি বদলের মাধ্যমে হয়ে গেল পরিণীতি চোপড়া ও রাঘব চাড্ডার এনগেজমেন্টে । পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের উপস্থিতিতে একে-অপরকে আংটি পরিয়ে দিলেন রাঘব-পরিণীতি। শনিবারের মায়াবী সন্ধ্যায় রাঘব ও পরিণীতির জুটি থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না। এনগেজমেন্টে পরিণীতি পরেছিলেন ক্রিম রঙের সালোয়ার স্যুট। অপরদিকে রাঘব পরেছিলেন সাদা রঙের কুর্তা-পায়জামা। পরিণীতি ও রাঘবের এনগেজমেন্টে তাদের গোটা পরিবারকে দেখা গেল আনন্দ করতে। .....বিস্তারিত পড়ুন